তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার দিন পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার, চিকিৎসাসেবা শুরু
Published: 16th, April 2025 GMT
রংপুরের তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা টানা চার দিন পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশ্বাসে তাঁরা আজ বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছেন।
হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত শনিবার থেকে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন।
পুলিশ, চিকিৎসক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান (মৌ) ওই রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার (তুর্য), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির সদস্য তাওরাতসহ আরও চার পাঁচজন সেখানে যান।
চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহানের অভিযোগ, তাহমিদ সরকারসহ চার-পাঁচজন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তাঁর শরীরে আঘাত করেন। এ ঘটনায় তাহমিদ, তাওরাতসহ অজ্ঞাতনামা চার–পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান। এ ঘটনার পরদিন আসামি গ্রেপ্তার ও মারধরের প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সেবাপ্রার্থীরা।
এদিকে চিকিৎসকের করা মামলা ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে জনদুর্ভোগ বন্ধের দাবিতে তারাগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের ব্যানারে চৌপথী এলাকায় গত মঙ্গলবার বিকেলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ওই মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মামলা ও কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। তাঁরা দাবি করেন, দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আরও পড়ুনতারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: মারধরের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনে চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ১৩ এপ্রিল ২০২৫গতকাল বিকেল পাঁচটায় রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফায়সাল ও পুলিশ সুপার আবু সাইম তারাগঞ্জ হাসপাতালে আসেন। তাঁরা চিকিৎসকদের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। এরপর চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।
তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অনির্বাণ মল্লিক বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলেছেন। এক মাসের মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার ও হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, এলাকার পরিবেশ শান্ত। হাসপাতালে মানুষ সেবা পাচ্ছে। আসামিকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আবারও সড়ক অবরোধ
সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল ক্লাস নিশ্চিত ও অবিলম্বে কলেজ হাসপাতাল চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করে সড়ক অবরোধ করেছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে মেডিকেল কলেজের সামনে সুনামগঞ্জ–সিলেট সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। একই দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।
আজ সকাল ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজ থেকে বের হয়ে সুনামগঞ্জ–সিলেট সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এতে সড়কের দুই দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
ইউএনও সুকান্ত সাহা বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। যাত্রীদের যাতে ভোগান্তি না হয়, সে জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে হয়। কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল চালু না থাকায় এই ক্লাসগুলো জেলা সদর হাসপাতালে সপ্তাহে দুই দিন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কলেজ থেকে হাসপাতালটির দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। যাতায়াতের জন্য কলেজের কোনো বাস নেই। ফলে নিয়মিত ক্লাসে যেতে সমস্যা হয়।
কর্মসূচি থেকে সপ্তাহে ছয় দিন ক্লিনিক্যাল ক্লাস নিশ্চিত করা, ওয়ার্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ, ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও রেজিস্ট্রার নিয়োগ, সার্জারি, মেডিসিনসহ সব ক্লিনিক্যাল বিষয়ের যথাযথ ওয়ার্ডের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পরিবহনব্যবস্থার ঘাটতি দূর করা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতাল চালুর দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুনহাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন১৯ ঘণ্টা আগেএ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে তিনি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন, সপ্তাহে ছয় দিন ব্যবহারিক ক্লাস করতে। এক সপ্তাহের মধ্যে এটির ব্যবস্থা করা হবে। চলতি বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়ার কথা ছিল। এই প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বেড়েছে। ভবন বুঝে নেওয়াসহ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা করতে হবে। হাসপাতাল চালু হলে শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের অসুবিধা কেটে যাবে।
২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্থায়ীভাবে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর এটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়। মদনপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ–সিলেট সড়কের পাশে অবস্থিত এই মেডিকেল কলেজ শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে এখানে পাঁচটি ব্যাচে ২৮০ শিক্ষার্থী রয়েছেন।