ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে অপচয়ের প্রকল্প
Published: 16th, April 2025 GMT
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আট জেলায় একটি করে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় এক থেকে পাঁচ একর পর্যন্ত। তবে এত বেশি জমির প্রয়োজন ছিল না। এতে জমি অধিগ্রহণে বাড়তি খরচ হয়েছে ১৩ কোটি টাকা।
প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর প্রতিটি ছয়তলা ভবন। এগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ভবনগুলো দোতলা হলেই যথেষ্ট ছিল। এতে বাড়তি ব্যয় হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। প্রশিক্ষক ও জনবল না থাকায় ভবনগুলোর ব্যবহার নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা।
আট জেলায় ‘আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (২য় সংশোধনী) প্রকল্পে’ জমি অধিগ্রহণ ও ভবন নির্মাণে এমন বাড়তি খরচের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রায় ৫৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আট প্রশিক্ষণকেন্দ্র আগামী জুন মাসে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের কথা।
আরও পড়ুনডিজিটালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়, তবু সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪আইসিটি খাতে গত সাড়ে ১৫ বছরে বহুমাত্রিক লুটতরাজ হয়েছে। বিগত সরকার এ খাতে আকর্ষণীয় স্লোগান ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর কথা বলেছে। বাস্তবে এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ কাজে আসেনি। ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবিপ্রকল্প পরিচালক (পিডি) হুমায়ুন কবীর গত ৫ মার্চ প্রথম আলোকে জানান, এক বছর আগে তিনি এ প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেন এত জমি অধিগ্রহণ করা হলো এবং কেন ছয়তলা করে ভবন নির্মাণ করা হলো, ওই সময় যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা বলতে পারবেন। তবে বাড়তি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে তাঁর চোখে পড়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের বিষয়ে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০২০ সালে। ৮৩৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ১৪ জেলায় আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পেও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ভূমি অধিগ্রহণ ও ভবনে অতিরিক্ত তলা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৫২ কোটি টাকা। অপ্রয়োজনীয় খাতের ব্যয় বাদ দিলে ৭৪ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করে তদন্ত কমিটি।
শুধু এ দুই প্রকল্প নয়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে (২০০৯-২০২৪ সাল) তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের চলমান ও শেষ হওয়া আরও ১৯টি প্রকল্পে টাকা অপচয়ের বিষয় জানতে পেরেছে তদন্ত কমিটি। কোথাও কেনাকাটায়, কোথাও ওয়েবসাইট তৈরিতে, কোথাও একাডেমি প্রতিষ্ঠার নামে, কোথাও জমি অধিগ্রহণ, কোথাও বা ভবন নির্মাণের নামে বাড়তি খরচ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগের মেয়াদে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হলেও তার সুফল পাওয়া যায়নি। আইসিটি খাতের অগ্রগতির সূচকে বাংলাদেশ সমমানের অর্থনীতির দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে।
আরও পড়ুনডিজিটালের নামে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যেভাবে চলেছে ‘লুটপাট’২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে আইসিটি বিভাগের চলমান ও শেষ হওয়া প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করতে গত ২৮ আগস্ট ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বর্তমানে বাণিজ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রতিবেদন আইসিটি বিভাগে জমা দিয়েছেন। এসব প্রকল্পে অসংগতিসহ নানা বিষয় প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
আইসিটি বিভাগের তথ্যমতে, ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাঁচজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা হলেন সৈয়দ আবুল হোসেন, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মেদ, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, মোস্তাফা জব্বার ও জুনায়েদ আহ্মেদ পলক।
প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি দেখতে পেয়েছে, কোনো কোনো প্রকল্পের এমন কার্যক্রম ছিল, যার সঙ্গে প্রকল্পের উদ্দেশ্যের মিল নেই। চলমান প্রকল্পে এসব অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দিতে বলেছে তদন্ত কমিটি। আবার কোনো কোনো প্রকল্পে এমন কিছু কাজ রাখা হয়েছে, যা আইসিটি বিভাগের আওতায় পড়ে না। অপ্রয়োজনীয় সব খাত বাদ দিলে ৬ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী গত ৫ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম থাকায় আমরা তদন্ত প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়েছি। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি তারা দেখছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বেশ কিছু খাতে খরচ কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে। আমরা সে আলোকে কয়েকটি কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’
আরও পড়ুনডিজিটাল বাংলাদেশের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের সুফল নেই: উপদেষ্টা নাহিদ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪প্রশিক্ষণকেন্দ্র হচ্ছে, প্রশিক্ষক নেই১৪ জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে ২০২২ সালে একটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের আওতায় ১৪ জেলা সদরে প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৪ জেলা সদরের কথা বলা হলেও পাঁচ উপজেলায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র হচ্ছে। উপজেলাগুলো হলো টাঙ্গাইলের মধুপুর, ফেনীর পরশুরাম, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও ঢাকার নবাবগঞ্জ। বাকি ৯টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র হচ্ছে জেলা সদরে। তদন্ত কমিটি বলছে, উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের যৌক্তিকতা নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় এগুলো করা হচ্ছে। এখানেও প্রশিক্ষকের বিধান রাখা হয়নি।
প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর প্রতিটির জন্য এক থেকে সাত একর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়। অথচ এক একর জমিই যথেষ্ট ছিল। সাততলা করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি বলছে, দুই থেকে তিনতলা ভবনই যথেষ্ট। ভবনগুলোতে অতিরিক্ত তলা নির্মাণ করা না হলে ৪৩৭ কোটি টাকা বাঁচবে। বেশি জমি অধিগ্রহণে ৪১ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫ আগস্টের পর এ প্রকল্পে পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুল হাসান। তিনি গত ১১ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী সাততলার পরিবর্তে কোথাও তিন, কোথাও চার, কোথাও পাঁচতলা ভবন করা হবে। এ ছাড়া নীলফামারী সদর, শেরপুর সদরসহ পরশুরাম ও কাশিয়ানী প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণকাজ বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন নকশা করতে হবে।
ভারতের ঋণে ১২ জেলায় আইটি পার্ক স্থাপনে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। তদন্ত কমিটি বলছে, অন্তত চারটি পার্ক নির্মাণের যৌক্তিকতা ছিল না। অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাতিল করলে ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব।
আরও পড়ুনআইসিটি বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি নিয়ে প্রশ্ন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪হাসিনা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামে ওয়েবসাইটউদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) নামে ২০১৬ সালে ৪৪৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় হাসিনা অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামে একটি ওয়েবসাইট (www.
তদন্ত কমিটি মনে করে, ওয়েবসাইটটি অপ্রয়োজনীয়। এটি বাতিল করা যেতে পারে। গত ১০ মার্চ চেষ্টা করেও ওয়েবসাইটে ঢোকা যায়নি। আইসিটি বিভাগ বলছে, সেটি বাতিল করা হয়েছে।
বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর গত ১১ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়েবসাইটটি কাউকে খুশি করার জন্য করা হয়েছিল। এ ধরনের ওয়েবসাইট করতে সাধারণত এক থেকে দুই কোটি টাকা লাগে। এখানে অস্বাভাবিক খরচ হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল লেনদেন ‘বিনিময় পেমেন্ট’ গেটওয়ের জন্য ৬৫ কোটি টাকা রাখা হয়। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। তদন্ত কমিটি বলেছে, গেটওয়েটি কার্যকর না থাকায় বাকি ২১ কোটি টাকা ফেরত নেওয়া যেতে পারে।
ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও পিএসপির মধ্যে আন্তলেনদেন নিষ্পত্তির সুযোগ দিতে ২০২২ সালে ‘বিনিময়’ নামের নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু হয়। এ সেবার মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে বিকাশ থেকে রকেটে অথবা রকেট থেকে এমক্যাশ বা বিকাশে কিংবা ব্যাংকে তাৎক্ষণিক লেনদেন করা যাবে।
গত ২৯ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মোবাইলে আর্থিক সেবার আন্তলেনদেন পরিচালনার জন্য “বিনিময়” নামে যে প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল, সেটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের শেল কোম্পানি। এমএফএসে আন্তলেনদেনব্যবস্থা এগোতে না পারার একটা বড় কারণ, এটি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া হয়েছিল।’
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ড আয়োজনের জন্য রাখা ১৯ কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুনএটুআইয়ে বেশি কাজ পেত ৩ কোম্পানি ও ‘আধিপত্য’ ছিল একজনের১২ নভেম্বর ২০২৪ব্যবহার হয় না ১৬৪ মোবাইল গেম৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোবাইল গেম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন নামে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প নিয়েছিল বিগত সরকার। তদন্ত কমিটি বলছে, এ প্রকল্পের টাকায় ১৬৪টি মোবাইল গেম ও ১০২টি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হয়। এসব সরকারের করার কথা নয়। এগুলো ব্যবহারও হয় না। সবগুলোই ঠিকাদারের (ভেন্ডর) কাছ থেকে সংগ্রহ করা। প্রকল্পের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কোনো অ্যাপ বা গেমস তৈরি করা হয়নি।
তদন্ত কমিটি বলছে, প্রকল্পের নামে ১১টি অ্যানিমেশন চিত্র, হলি গ্রাফিক চিত্র, ভিআর মুভি নির্মাণ, মোবাইল গেম, মোবাইল অ্যাপ নির্মাণের মাধ্যমে ১৪৬ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে।
২০১৯ সালে ১৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত আরেকটি প্রকল্পে কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনাকাটাসহ বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় খাত খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এখান থেকে ১৭ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব।
আরও পড়ুনআইসিটি খাত সংস্কারে ৬ বছর মেয়াদি পথনকশার খসড়া প্রস্তুত১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রশিক্ষণ–পরামর্শকের পেছনে অস্বাভাবিক ব্যয়ডিজিটাল সরকার ও ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে ২০২২ সালে ২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। তবে এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খাতে ব্যয় ধরা হয় খামখেয়ালিভাবে। যেমন ১০ হাজার সরকারি কর্মচারীকে প্রশিক্ষণের ব্যয় ধরা হয় ১০৩ কোটি টাকা। পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় ধরা হয় ২১ কোটি টাকা। অস্বাভাবিক এ খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তদন্ত কমিটি। প্রকল্পে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা।
তদন্ত কমিটি বলেছে, অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাতিল করলে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা বাঁচবে।
আরও পড়ুনতথ্যপ্রযুক্তি খাত: পাবলিক সফটওয়্যার প্রকল্পের সমস্যার কারণ কী২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঋণচুক্তি না করেই প্রকল্প২০২১ সালে ‘ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প নেয় আইসিটি বিভাগ। ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা চীন সরকারের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার কথা। এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কথা।
তবে চীনের সঙ্গে ঋণচুক্তি না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। তদন্ত কমিটি বলছে, ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া আইসিটি বিভাগের কাজ নয়। চীনের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার কথা থাকলেও ঋণচুক্তি হয়নি। এটি বাতিল করা যেতে পারে। অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দিলে ৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা বাঁচবে। আর যা ব্যয় হয়েছে, তা অপচয়।
আরও পড়ুনস্যাটেলাইট কোম্পানির সাবেক প্রধান অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন: নাহিদ০২ অক্টোবর ২০২৪শিবচরে ফ্রন্টিয়ার ইনস্টিটিউটমাদারীপুরের শিবচরে একটি বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট করতে ২০২২ সালে ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি শিবচর, মাদারীপুর’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০০ কোটি টাকায় ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বলছে, এত ভূমির প্রয়োজন নেই। এতে সরকারি টাকা লুটপাট হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বলছে, উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের যৌক্তিকতা নেই। নয়তলা ভবনসহ ব্যবসাকেন্দ্র, অফিসার্স বাংলো, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল কর্নার, টেনিস কোর্ট প্রভৃতি নির্মাণে ১৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা অপচয় হবে। অপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাদ দিয়ে ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুনগত সরকারের দীর্ঘ সময়ে আইসিটি ছিল টাকা বানানোর বড় খাত: রাফেল কবির১৪ জানুয়ারি ২০২৫‘বহুমাত্রিক লুটতরাজ হয়েছে’দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি খাতে গত সাড়ে ১৫ বছরে বহুমাত্রিক লুটতরাজ হয়েছে। বিগত সরকার এ খাতে আকর্ষণীয় স্লোগান ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ’–এর কথা বলেছে। বাস্তবে এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ কাজে আসেনি।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাঁরা প্রকল্প প্রণয়নে যুক্ত, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য একটা বার্তা দিতে হবে, যাতে এ খাতে কেউ দুর্নীতি করার সাহস না করে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এ প রকল প র আওত য় ম র চ প রথম আল ক ভবন ন র ম ণ প রকল প ন য় স প ট ম বর ন র ম ণ কর ই প রকল প র প রকল প ২০২২ স ল খরচ হয় ছ গত সরক র ব ত ল কর সরক র র ত সরক র র জন য মন ত র ল নদ ন আইস ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যেসব কারণে আপনি কাপড়ের আলমারি গুছিয়ে রাখতে পারেন না
ক্যাটাগরি না করা
ধরা যাক, অনলাইনে অর্ডার করে সুন্দর একটা টপস কিনেছেন। ট্রায়াল দিয়ে দেখলেন, বেশ মানিয়েছে। এরপর কী করবেন? ভাঁজ করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখবেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুই দিন পর যখন টপস খুঁজে বেড়াচ্ছেন, সারা আলমারি তন্ন তন্ন করেও সেটা আর পাচ্ছেন না। কেন? কারণ, টপসটা রেখেছিলেন শাড়ির সঙ্গে। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে কোথায় হারিয়ে লুকিয়ে আছে, জানা নেই। আলমারিতে জামাকাপড় সারিবদ্ধ করে না রাখলে এমন বিপত্তি বেশ স্বাভাবিক। আলমারির হাজারো জামাকাপড়ের ভিড়ে কাঙ্ক্ষিত জামাটি হারিয়ে যেতে পারে সহজেই। তাই আলমারিতে ক্যাটাগরি করে জামাকাপড় সাজিয়ে রাখুন। এতে খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত জামাকাপড়পছন্দ হলেই এটা–সেটা কেনার অভ্যাস কিংবা বদভ্যাস আছে অনেকের। অগোছালো আলমারির এটাও একটা কারণ। এভাবে দেদার কেনাকাটার ফলে একটার পর একটা জামাকাপড় জমতে থাকে আলমারিতে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জামাকাপড় পড়ে যায় নিচে বা পেছনে। ফলে প্রয়োজনের সময় খুঁজে পাওয়া আরও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। ফলে যে জামাকাপড়গুলো পুরোনো হয়ে গেছে কিংবা নষ্ট, তা আলমারি থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও রাখুন। এতে অতিরিক্ত জামাকাপড় আলমারি থেকে দূর হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনপুরোনো কাপড় ভালো রাখবেন যেভাবে০১ জুলাই ২০২৪আলমারিতে যথেষ্ট জায়গা না থাকাবর্তমানে বেশির ভাগ মানুষই রেডিমেড আলমারি কেনেন। দামে কম, মানেও ভালো—সব মিলিয়ে মানুষের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছে এ ধরনের আলমারি। এতে প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হলেও দেখা যায় জায়গার স্বল্পতা। আলমারিগুলো বানানো হয় নির্দিষ্ট শ্রেণির প্রয়োজন মাথায় রেখে। সবার আলমারিতে তো আর সবকিছুর প্রয়োজন নেই। ফলে দেখা যায়, রেডিমেড আলমারি কেনা হলেও তার বেশির ভাগ জায়গাই অপচয় হয় সঠিক ব্যবহারের অভাবে।
ভার্টিক্যাল স্পেস ব্যবহার না করাবেশির ভাগ সময় রেডিমেড আলমারিগুলোর ভার্টিক্যাল স্পেস বা লম্বালম্বি জায়গা ঠিকমতো ব্যবহার করা হয় না। ফলে আলমারি বিশাল হলেও সঠিক ব্যবহারের অভাবে আলমারি হয়ে থাকে অগোছালো।
আরও পড়ুনওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি১৮ মার্চ ২০২৫ভাঁজ করা ও ঝুলিয়ে রাখার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাসব জামাকাপড়ই যে ভাঁজ করে রাখলে ভালো থাকবে, তেমনটা নয়; বরং কিছু কিছু জামাকাপড় ভাঁজ না করে ঝুলিয়ে রাখলেও ভালো থাকে এবং আলমারির জায়গা অনেকটা বেঁচে যায়। শার্ট ও পাঞ্জাবিজাতীয় জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অনেকে। এতে আলমারির জায়গার অপচয় হয়। ঝুলিয়ে রাখলে বরং তা কাপড়ের জন্য যেমন ভালো, জায়গারও অপচয় হয় না।
শুকানো কাপড় ঠিক করে না রাখাকাজের ব্যস্ততায় বা সময়ের অভাবে অনেকেই শুকানো কাপড় স্তূপ করে সরাসরি আলমারিতে রেখে দেন। যাতে ধোয়া কাপড়গুলো একত্রে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এতে আরও বিপত্তি বাড়তে পারে। বিভিন্ন ধরনের কাপড় একসঙ্গে থাকলে তা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেক গুণ।
তথ্যসূত্র: রিয়েল সিম্পল
আরও পড়ুনধোয়া কাপড় থেকেও দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে? জেনে রাখুন সমাধান০২ অক্টোবর ২০২৩