নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কর্মকর্তাদের বাড়ি নির্মাণে অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার ঘটনা তদন্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ৯ এপ্রিল গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউজিসির অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন একই বিভাগের পরিচালক মো.

রেজাউল করিম হাওলাদার এবং প্রশাসন বিভাগের উপসচিব মো. আসাদুজ্জামান। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অডিট বিভাগের সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম।

গত ১১ মার্চ ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ঋণের মহোৎসব’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমকাল। এর পর তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের সভাপতিত্বে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশেষ সভার আলোচ্যসূচির ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কমিশনের করপোরেট সাধারণ গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালায় গ্রেডভেদে সর্বোচ্চ ঋণসীমা নির্ধারিত রয়েছে। পঞ্চম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ, ষষ্ঠ থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত ৬৫ লাখ, ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড ৫৫ লাখ, ১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড ৪০ লাখ এবং ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। তবে এই ঋণ চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পেনশন ও আনুতোষিকের পরিমাণ বিবেচনায় দেওয়া হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইউজিসির সাবেক সহকারী সচিব (নবম গ্রেড) মো. মামুনুর রশিদ খান সর্বোচ্চ ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮৭ টাকা ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তিনি অতিরিক্ত টাকাসহ মোট ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৩ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানের এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং নতুন কমিশনের অধীনে আরও ৪ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। যদিও তাঁর ঋণ আবেদন একাধিকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।

এদিকে সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করেছেন ইউজিসির জেনারেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালক ও সাবেক যুগ্ম সচিব জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর। তাঁর প্রাপ্য ঋণের পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকা, কিন্তু তিনি গ্রহণ করেছেন ৬৭ লাখ টাকা। কমিশনের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আকরাম আলী খানও প্রাপ্যতার অতিরিক্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৫ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ১৮তম গ্রেডের অফিস সহায়ক ও অন্য কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। 

ইউজিসির গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালায় বলা আছে, ঋণের সিকিউরিটি হিসেবে সংশ্লিষ্ট জমি বা ফ্ল্যাট ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখতে হয়। কিন্তু ইউজিসির নিজস্ব করপোরেট গৃহনির্মাণ ঋণ ব্যবস্থায় সিকিউরিটি হিসেবে শুধু পেনশন ও আনুতোষিক বন্ধক রাখা হয়। ফলে নির্ধারিত সীমা ও কর্মচারীর আর্থিক প্রাপ্যতা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত ঋণ প্রদান নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউজ স কর মকর ত ইউজ স র

এছাড়াও পড়ুন:

সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ