আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় এবং দ্রুত সময়ে যাতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয় সে দাবি নিয়ে আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে বিএনপি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথাও জানাবেন দলের নেতারা। 

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ দুপুর ১২টায় এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অংশ নেবেন। 

বিএনপিদলীয় সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ বা কর্মসূচি কী হবে। নেতারা সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন। যদি ডিসেম্বরে নির্বাচনের নিশ্চিত আভাস পাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেবে দলটি। নির্বাচনের সময়সীমা ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না পেলে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ভাববে বিএনপি। 

এ বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হবে। আমরা তো সবসময় বলে আসছি, আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। নিঃসন্দেহে এটি সম্ভব হবে এবং আমরা সবাই সফল হবো।’ চিকিৎসা শেষ ওই দিনই তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরেন। 

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সমকালকে জানান, সরকারের সঙ্গে এর আগের বৈঠকগুলোতে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং সরকারের ভেতরে-বাইরের নানা কথায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকেও তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন। সেই মতে বিএনপি অনুরোধ জানিয়েছিল, জনমনে বিভ্রান্তি দূর করতে প্রধান উপদেষ্টা যেন জাতির সামনে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি যেন নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এর বাস্তবরূপ দেখা যায়নি। এখন আবার শুরু হয়েছে এই সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় রাখার প্রচারণা। পাঁচ বছরের কথাও কেউ কেউ বলছেন। এর পেছনে সরকারের কারও কারও ইন্ধন থাকতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে উল্টো পথে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি– এ কেমন আচরণ? যখনই ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি করা হয়, তখনই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য এত মানুষ প্রাণ দিল, আন্দোলন করল, সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? কাদের সুবিধা দিতে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা আসছে? কেন অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে? এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পেলে দলীয় কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে। সংস্কার ইস্যুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। দলটি শুরু থেকে বলে আসছে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত ভোটের ব্যবস্থা করা হোক। এ দাবির সপক্ষে তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও বাম ঘরানার দলগুলোর সম্মতি আছে। এর বিপরীত অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী, নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি ইসলামী দল। তাদের দাবি, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। কথা হচ্ছে ছোট না বড় সংস্কার, এ নিয়েও।

বিএনপি নেতারা সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে। তারা বলছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কারগুলো কিংবা সংবিধান বাদে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সরকারের নির্বাহী আদেশ কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। শুধু সংবিধান সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে সেসব নির্বাচিত সংসদে বাস্তবায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কোনো প্রয়োজন নেই। 

এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করছে বিএনপি। আজকের বৈঠকেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না পেলে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় ঠিক করে ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা দলটির। এরই মধ্যে তারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা। আবার আরেকজন বলেন জুনে নির্বাচন। আরেকজন বলেছেন, পাঁচ বছর এই সরকার থাকার দরকার, জনগণ চায়। একজন উপদেষ্টা বললেন, তারা নির্বাচিত। এদিকে সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন বললেন, গণতন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের সৃষ্টি হয়। এই যে কথাগুলো—এতে একটা বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। এটি পরিষ্কার করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাচ্ছি আমরা।’ সরকার নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা না দিলে বিএনপি কী করবে–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আলোচনা হোক। কী আলোচনা হয় দেখি, শুনি; তারপর এ বিষয়ে কথা বলব।’

কাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৩ মার্চ ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের মতামত জমা দেওয়ার পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

এর আগে ৬ মার্চ পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ (ছক আকারে) পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। 



 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ গণতন ত র ব এনপ র সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমাদের রাজনীতিতে ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। দুঃসময়েও তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নিয়েছিলেন। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছিলেন। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় সমাজকল্যাণ ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এভাবেই স্মৃতিচারণা করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সবার ভেতর আলো জ্বেলেছেন—এমন মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তাঁদের সুস্থ করতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের খালি হাতে খালি পায়ে গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছিল। দেশটাও গত ৫০ বছরে গড়েই উঠল না। গণতন্ত্র, সাম্য, সমাজতন্ত্র, ন্যায়বিচার—সবই আড়ালে থেকে গেল। আমাদের রাজনীতি নিশ্চয় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সেই রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে।’

শারমীন এস মুরশিদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সংস্কৃতি বিরাজমান, সেটির পরিবর্তন ঘটেনি। তরুণদের এই শিক্ষাটা মাথায় রাখতে হবে। পেছনের পচে যাওয়া প্রথাগুলো গ্রহণ করে রাজনৈতিক দল গড়তে চাইলে ভুল হবে। আদর্শের জায়গায় দাঁড়াতে হবে। এ জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পথ অনুসরণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে ওই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এই সভার মাধ্যমে গতকাল সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের হৃদয়ে বিচিত্র রেখা এঁকে গেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের বটবৃক্ষ। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। এই বিষয়টি তরুণ প্রজন্মের কাছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অক্ষয় অমর করে রাখবে।’

স্মরণসভায় বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইবি অর্থনীতি ক্লাবের কমিটি গঠন
  • যুক্তরাষ্ট্রে আজ ট্রাম্পবিরোধী ৪০০ বিক্ষোভ হচ্ছে
  • দেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ করবে অন্তর্বর্তী সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
  • ট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল
  • গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে: আলী রীয়াজ 
  • ‘আমাদের রাজনীতিতে ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে’
  • সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না 
  • নির্বাচনের বিকল্প সংস্কার কেন, প্রশ্ন রিজভীর
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে: মান্না
  • সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: প্রশ্ন রিজভীর