চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনে বিঘ্ন ঘটানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। একই সঙ্গে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছে সংগঠনটি।

উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বর্ষবরণ উৎসবকে ব্যাহত করার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে উদীচীর নেতারা বলেন, চট্টগ্রামের ডিসি হিলে অর্ধশতাব্দী ধরে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করা হয়। এ বছর সেই আয়োজনের অনুমতি দিতে দুই মাস ধরে টালবাহানা করেছিল প্রশাসন। আয়োজনের দুই দিন আগে অনুমতি দিলেও সেখানে কী কী গান–কবিতা পরিবেশিত হবে, সে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুধু তা–ই নয়, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ অভিযোগ তুলে উদীচীসহ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবচেয়ে সক্রিয় প্রায় ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে মঞ্চে উঠতে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় পয়লা বৈশাখের আগের দিন রীতিমতো মিছিল করে অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ষবরণ আয়োজন বন্ধ করতে বাধ্য হন আয়োজকেরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর বগুড়াতেও বর্ষবরণ আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়েছে। উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘দিন বদলের মঞ্চ’ ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রশাসন বাধা দেয়। পরে অনুমতি দিলেও নানাভাবে আয়োজন সীমিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়। নববর্ষের দিন অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে গান–আবৃত্তি করা নিয়ে নানা ধরনের ফতোয়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া বরিশালে উদীচীসহ কয়েকটি সংগঠনের আয়োজনে বৈশাখী মেলাকেও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়। খোদ রাজধানীতে হুমকির মুখে বাতিল করা হয় নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর প্রযোজিত ‘শেষের কবিতা’ নাটকের প্রদর্শনী।

উদীচীর নেতারা বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘটিয়েছিলেন ছাত্র-জনতা। আট মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এখনো বাংলা বর্ষবরণ বা বসন্ত উৎসবের মতো অসাম্প্রদায়িক আয়োজন এবং প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এসব প্রতিরোধ করতে না পারার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দিদের অন্যরকম বর্ষবরণ 

চার দেয়ালের ভেতরে বন্দিরা বর্ষবরণের আনন্দ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য বর্ষবরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল রাঙামাটি জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে কারাগারের ভেতরে পাহাড়ি নৃত্যে গান গেয়ে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করেন তারা। 

এরপর তাদের পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ এবং পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পিঠা খেতে দেওয়া হয়। এ সময় জেল সুপার মো. দিদারুল আলম, জেলার মো. সাইমুর উপস্থিত ছিলেন। 

কারাবন্দিদের দুপুরে পোলাও, মুরগীর মাংস, ডাল, সালাদ, পান, সুপারি, মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। রাতেও উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।

আরো পড়ুন:

বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

টিএসসিতে ‘ভালো কাজের হালখাতায়’ মনের যত কথা

রাঙামাটি জেল সুপার মো. দিদারুল আলম জানান, পরিবার থেকে দুরে থাকা বন্দিরা যাতে বর্ষবরণের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশে এই আনন্দ আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু বর্ষবরণ পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী উৎসব, তাই কারাগারে বন্দি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী গানে নেচে এই উৎসব উদযাপন করে।
 

ঢাকা/শংকর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষম্যহীন নতুন দেশ গড়ে তুলা সম্ভব হবে’
  • যশোরে নববর্ষকে বরণ, শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ভাস্কর শামীমকে সংবর্ধনা
  • কারাবন্দিদের অন্যরকম বর্ষবরণ 
  • ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • কেউ আসছেন না জেনে, কেউ–বা বর্ষবরণের স্থানটি দেখতে
  • এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • ‘উৎসবের উচ্ছ্বাসে আজ মেতেছে সারা দেশ’
  • পাহাড়ে ‘বৈসাবি’ উৎসবের একাল-সেকাল
  • রাঙামাটিতে ঘরে ঘরে পাঁজন আপ্যায়ন