সন্তান জন্মদানের যে তারিখ চিকিৎসকরা দিয়েছিলেন, এর তিন রাত আগেই প্রসব ব্যথা শুরু হয় ময়না বেগমের। প্রথম দুই সন্তানের জন্মও হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। সেলাইয়ের জায়গায়ও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই অস্ত্রোপচারে দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। অবশেষে সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুরের আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ময়না। পহেলা বৈশাখের সকালে জন্ম বলেই দাদি-নানির সম্মতিতে এই শিশুর নাম রাখা হয় ‘পহেলা’।
ময়না বেগম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের খালেক আকনের মেয়ে। সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের চরপুটিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন মোড়লের ইতালিপ্রবাসী ছেলে লুৎফর মোড়লের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় আট বছর আগে। লুৎফর-ময়না দম্পতির আগেই দুই ছেলেমেয়ে হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রহমানের বয়স ৭, রুকাইয়া মোড়লের বয়স ৪ বছর।
চিকিৎসাধীন ময়না জানান, তাঁর সন্তান প্রসবের জন্য ১৬ এপ্রিল দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ১৩ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে ব্যথা ওঠে। ৯ কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে দ্রুত তাঁকে এনে ভর্তি করা হয় আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। পহেলা বৈশাখের দিনে সন্তানের জন্ম দেবেন– এমনটি কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। প্রথম দুই সন্তানও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেন তিনি। সেলাইয়ের দুটি জায়গায় রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে। তাই বেশি দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা।
প্রসূতি ময়নার ভাষ্য, স্বামী প্রবাসে। কিন্তু নিয়মিত খোঁজ রাখেন। প্রসব ব্যথা বাড়তে থাকায় তাঁর মনে শঙ্কা ভর করেছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের আশ্বাস ও আন্তরিকতায় কিছুটা সাহস পান। সন্তান জন্মের পর নববর্ষের শুভেচ্ছা শুরুতে কেউ জানাননি। তবে এক স্বজন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর বিষয়টি বুঝতে পারেন।
জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অতিথিকে কোলে নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে হয় স্বজনদের। এদিনই দাদি-নানির সম্মতিতে শিশুটির নাম রাখা হয় ‘পহেলা’। জন্মের পরপর তার ওজন হয় দুই কেজি ৭০০ গ্রাম। গর্ভে থাকার সময় সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা চিন্তা ছিল ময়নার। তাই কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেননি। ময়না বলেন, দূর থেকে মানসিক সমর্থন জুগিয়েছেন প্রবাসী স্বামী লুৎফর। পাশাপাশি স্বজনরাও তাঁকে কোনো ভারী কাজ করতে দেননি। মেয়েকে তারা মাদ্রাসায় পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ রাজীব হোসেন বলেন, বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ। এমন দিনের সুন্দর সকালে শিশুটির জন্ম হয়েছে। নামও রাখা হয়েছে ‘পহেলা’। শিশুটির জীবনের দুটি আনন্দের স্মৃতিই মনে করিয়ে দেবে সমকাল।
সোমবার সকাল ৯টার দিকেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান আলো দেখে পৃথিবীর। এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন ডা.
শিশুটি জন্মের পর আত্মীয়স্বজন বাহারি রঙের পোশাক নিয়ে এসেছেন। নববর্ষের প্রথম দিন ভাগনির মেয়ে হওয়ার সংবাদে ছুটে আসেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সমকালের প্রজন্ম বরণের বিষয়টি শুনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানান। এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমী জানিয়ে প্রশংসা করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. আলী আকবর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রথম দ জন ম র র জন ম
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানে বিশ্ব প্রদর্শনীর অনন্য সমাবেশে উদ্যাপিত হলো বাংলা নববর্ষ
বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা যখন নতুন বাংলা সনের আবহে স্নাত হচ্ছেন, বাঙালি খাবার, পোশাক কিংবা গান-কবিতায় নিজের বাঙালিত্ব প্রকাশ করছেন, তখন একেবারে ভিন্ন এক স্থান ও আবহে জাপানের ওসাকা নগরীতেও গতকাল ১৪ এপ্রিল উদ্যাপিত হলো পয়লা বৈশাখ।
না, এটি সচরাচর প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজনে কোনো মিলনায়তন বা উদ্যানে আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠান নয়, বরং ওসাকা এক্সপো ২০২৫ বা বিশ্ব প্রদর্শনীর অনন্য সমাবেশে এই উদ্যাপনের গুরুত্ব ব্যাপক।
এর মধ্য দিয়ে মূলত নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরার সুযোগ পেল বাংলাদেশের মানুষ বিশ্ববাসীর কাছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ দাউদ আলীসহ দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং স্থানীয় অনেক বাংলাদেশি। খোলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক সংগঠন মাদল ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’সহ নানা বাংলা গান পরিবেশন করে।
ওসাকা এক্সপোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিল মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা