হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে দুস্থ ও অসহায় রোগীদের আর্থিক সহায়তা স্বস্তির কারণ হইলেও অস্বস্তির বিষয়, উহা প্রাপ্তিতে অধিক বিলম্ব ঘটে। সোমবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুবিধাভোগীরা গত তিন মাসের অর্থ পান নাই। এই অর্থ দেওয়া হয় জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত দুস্থ ও অসহায় নাগরিকদিগকে। এই সকল ব্যাধিতে আক্রান্ত অনেকের পরিবার চিকিৎসা ব্যয় বহন করিতে গিয়া নিঃস্ব হইয়া পড়ে। আক্রান্তরা অর্থাভাবে মৃত্যুমুখেও পতিত হন। এইরূপ অসহায় মানুষের জন্য সরকারি অনুদান সহায় হইলেও উহার বিলম্বজনিত প্রাপ্তি হতাশাজনক।
চিকিৎসার সময় রোগীর অর্থের প্রয়োজন চিকিৎসার স্বার্থেই। বিলম্বে হইলেও অর্থপ্রাপ্তি হইবে বটে, কিন্তু সময়োচিত চিকিৎসা বিহনে উক্ত অর্থের সদ্ব্যবহার ও কার্যকারিতা লইয়া সংশয় রহিয়া যায়। সরকার জটিল ব্যাধির চিকিৎসায় এককালীন অর্ধলক্ষ টাকা প্রদান করিয়া থাকে। তজ্জন্য অনলাইনে আবেদন করিতে হয়। সরকারের তরফ হইতে তিন মাস অন্তর এই অর্থ প্রদান করা হয় বলিয়া অনেকে আবেদন করিয়া তীর্থের কাকের ন্যায় দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকেন। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চের অর্থ চলতি এপ্রিল মাসের অর্ধেকাংশ অতিক্রান্ত হইলেও সুবিধাভোগীদের হস্তগত হয় নাই। কবে নাগাদ উহার প্রাপ্তিযোগ হইবে, একান্তই অজানা। প্রতিবেদনে অনেক রোগীর সকরুণ কাহিনি উঠিয়া আসিয়াছে। চট্টগ্রামের এক নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। ভ্যানচালক স্বামী ও সন্তান-সন্ততি লইয়া তিনি অভাবের সংসারে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে হিমশিম খাইতেছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরে অনুদানের জন্য আবেদন করিলেও এখনও অর্থ পান নাই। তাঁহার চিকিৎসা আটকাইয়া রহিয়াছে অনুদানের অপেক্ষায়।
এইভাবে অনুদানের অপেক্ষায় রহিয়াছেন ৪১ সহস্রাধিক রোগী। অভাবের কারণে তাহাদের কেহ ঔষধ ক্রয় করিতে পারিতেছেন না; কাহারও থেরাপি গ্রহণ বন্ধ; কাহারও সামগ্রিক চিকিৎসাই স্থবির। সমাজসেবা অধিদপ্তরের এহেন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের ব্যাধিমুক্তির মহান উপলক্ষ হইতে পারে, যদি যথাসময়ে অর্থপ্রাপ্তির ব্যবস্থা হয়। এই ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, অর্থছাড়ের বিষয়টি বৎসরে চারবার না করিয়া প্রতি মাসে প্রদান করিলে যথাসময়ে রোগী অর্থ পাইয়া চিকিৎসা করিতে পারিবে। সমাজসেবা অধিদপ্তর যেইভাবে চার ভাগের তিন ভাগ অর্থ সকল জেলায় জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে বিভাজন করিয়া পাঠাইয়া থাকে, উহা নিঃসন্দেহে নীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত কার্যক্রমে যেন অধিক সময় ব্যয় না হয়। যাহারা আর্থিক সহায়তার জন্য অনলাইনে আবেদন করিবেন, উহাদের আবেদন যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করিতে হইলেও এই প্রক্রিয়া স্বল্প সময়েই সম্পাদন করা উচিত।
আমরা জানি, সাধারণ নাগরিকের স্বার্থে সরকারের অনেক উদ্যোগ রহিয়াছে। এই সকল জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ তখনই যথার্থ মানুষের উপকারে আসিবে যখন প্রয়োজনের সময় উহা পাওয়া যাইবে। দুস্থ ও অসহায় রোগীদের আর্থিক সহায়তা যেই কোনো বিচারে অসাধারণ উদ্যোগ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে রোগী ও তাঁহার পরিবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে অর্ধলক্ষ টাকা প্রয়োজনের তুলনায় কম হইলেও উহাই অসহায় পরিবারের মুখে হাসি ফোটাইতে সক্ষম। এই অর্থ ঠিক যখনই প্রয়োজন তখনই দেওয়ার ব্যবস্থা করিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়া উচিত।
সাধারণ নাগরিকের চিকিৎসা সহজ করিতে সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা আরও জনবান্ধব করিতে হইবে। যেই সকল জটিল রোগীর চিকিৎসায় সরকার অনুদান দিয়া থাকে, তাহাদের সকল চিকিৎসার ব্যয় সরকারি হাসপাতাল হইতে বহন করিলেও ইহাতে অধিক নাগরিক উপকৃত হইবে। সেই ক্ষেত্রে এই সকল চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করিতে হইবে। তবে আপাতত সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুদান যথাশীঘ্র পৌঁছাইয়া দেওয়া হইবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ অন দ ন র জন য ই সকল হইল ও সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে সন্তানের নাম রাখা হবে
বাংলা নববর্ষের সকালে রাজিব ও তানিয়ার কোল জুড়ে আগমন হলো ৩য় পুত্র সন্তানের। সোমবার তিন কেজি ৩ গ্রাম ওজন নিয়ে ফরিদপুর শহরের ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন শিশুটি।
বছরের প্রথম দিনে নতুন অতিথিকে পেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দে ভাসছে তাদের পরিবার।
সাইদুল ইসলাম রাজিব ও তানিয়া আক্তার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট হাউজিং স্টেট এলাকার খসরু ব্যাংকার এর বাসার ভাড়াটিয়া। রাজিব শহরে গাড়ির ব্যবসায় করেন। দীর্ঘদিন তারা ফরিদপুর শহরে বসবাস করেন। স্ত্রী তানিয়া আক্তারের বাড়ি শহরের গোয়ালচামট রথখোলা এলাকায়। এই দম্পতির ৯ বছর ও ২ বছরের পুত্র সন্তানের পর ৩য় পুত্র সন্তান জন্ম নিলো।
গত রাতে তানিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিজারের পর মা ও শিশু সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন ডা. দিলরুবা জেবা।
শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আক্কাস হোসেন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, ফুটফুটে পুত্র সন্তান উপহার পেয়ে তারা অনেক খুশি। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে জন্ম হওয়ায় নববর্ষের সঙ্গে মিল রেখে তার নাম রাখবো।
বাবা রাজিব বলেন, আমি গাড়ির ব্যবসার কাজে বেশির ভাগ সময় বাইরে বাইরে থাকি। এজন্য বাসায় ফিরেই আগে স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ নিতাম। তবে আমার স্ত্রীর ওপর আমার ভরসা অনেক। তার সক্ষমতাও অনেক। আমার পরিবারের লোকজন সবসময় তার কেয়ার নিতেন। সেই সাথে তানিয়ার মা বোন কাছাকাছি থাকায় তারাই সব সময় সাহস দিয়ে থাকতেন আমার স্ত্রীকে। এজন্য বলতে পারেন আমি অনেকটা নিশ্চিন্তে থাকতাম।
তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতিনীতি সব সময় পালন করেছি, করবো। তবে কোন প্রকার কুসংস্কার নিয়ে আমরা ভাবি না। ১১ বছর আগে তানিয়ার সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় আমাদের। আমাদের বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদি এলাকায়। আমি ফরিদপুর শহরে প্রায় ২০ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করি। পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। যদিও ৩য় সিজার নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টার পরে নার্স এসে ছেলেকে কোলে তুলে দিলে প্রথমেই আমি আযান দেই। তারপর তার নানীর কোলে তুলে দেই। পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিনে জন্ম গ্রহণ করাটা আমাদের কাছে আনন্দের তবে সেটা দিনক্ষণ ঠিক করে নয়। ডাক্তারের পরামর্শে আজ সিজার অপারেশন হয়। সন্তানের আগমন ও মায়ের সুস্থতা নিয়ে আমাদের বেশি চিন্তা ছিল। পহেলা বৈশাখ আমাদের মাথাতেই ছিল না। আপনারাই বরং আমাদের বিশেষ উপলক্ষ করে দিলেন, স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমার নবাগত সন্তানকে পহেলা বৈশাখের আনন্দের স্বাদ পাইয়ে দিলেন। এজন্য সমকাল কর্তৃপক্ষকে আমি আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে সন্তান যখন তার জন্মদিন ও বৈশাখ নিয়ে আনন্দ করবে সেটাই আমার কাছে বেশি আনন্দের হবে।
শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আক্কাস হোসেন বলেন, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ আছেন। আমাদের নার্স ও ডাক্তাররা নিয়মিত দেখভাল করছেন। তিনি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে ওই শিশুটিকে কোন প্রকার আয়োজনে অংশগ্রহণ করাতে পারিনি। হাসপাতালেও বৈশাখ উপলক্ষে কোন আয়োজন করা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ একজন আরেকজনকে উইশ করে থাকতে পারে। একই দিনে আমাদের হাসপাতালে আরও ৪টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছেন। রাত্রি নাগাদ আরও একটি বা দুটি শিশু জন্ম নিতেও পারে। আপনারা এসে হাসপাতালে নববর্ষ উৎসবকে মনে করিয়ে দিলেন। আগামীতে এ বিষয়গুলো নিয়ে কিছু করা যায় কিনা সেটা ভাবনায় রাখলাম।
নবজাতকের নানী বাবলী বেগম সমকালকে জানান, আমরা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি কোন কুসংস্কার নয়। রোববার ডাক্তারের কাছে মেয়েকে নিয়ে নিয়মিত চেকআপ করাতে আসলে ডাক্তার পরামর্শ দেন সিজারের সময় হয়ে গেছে আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। ভর্তি হয়ে ডাক্তারকে জানালে তিনি সকালে অপারেশন করবেন বলে সময় দিয়ে যান। আল্লাহ আমাদের একটি সুস্থ পুত্র সন্তান দান করেছেন। এই সন্তানকে ভবিষ্যতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ। তবে তার জন্য এখন থেকেই কোনো লক্ষ্য ঠিক করে দিতে চাই না, যে তোমাকে এটা বানাবো বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাবো, বা এটা হতে হবে বা ওটা হতে হবে এরকম টা নয় আমাদের কাছে।