রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের ঘটনার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে এবং এর ঘণ্টাখানেক পর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে আইন বিভাগ ও ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীরা হলেন ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আসিফুর রহমান ও শাহাদাৎ হোসেন এবং আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মোহাইমিনুল ইসলাম নুহান ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরুখ মাহমুদ। তাঁদের মধ্যে শাহরুখ মাহমুদ রাজশাহী মহানগর শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও আসিফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কার্যনির্বাহী সদস্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত সাধন মুখার্জি নামের ছাত্রলীগের এক নেতাকে কেন্দ্র করে। সাধন আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, গত বছরের রমজান মাসে সাধন মুখার্জির এক জুনিয়রকে ইভ টিজিং করেন ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোসেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

তবে অন্য পক্ষের দাবি, গত বছর ফিন্যান্স বিভাগের পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে ওই বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুম মিয়াকে আমন্ত্রণ না জানালে সাধনসহ অনুষ্ঠানে গিয়ে বাধা দেন তিনি। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত শাহাদাৎ হোসেনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতা সাধন মুখার্জি। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে ক্যাম্পাস ছাড়েন ছাত্রলীগের নেতা সাধন মুখার্জি। পরে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আর ক্যাম্পাসে ফেরেননি তিনি। তবে মাস্টার্সের পরীক্ষায় অংশ নিতে কিছুদিন আগে আবার ক্যাম্পাসে ফেরেন সাধন মুখার্জি। তাঁর বন্ধু ছাত্রদলের নেতা শাহরুখ মাহমুদের ‘আশ্রয়ে’ ক্যাম্পাসে চলেন তিনি।

গত বছরের ঘটনার জেরে গতকাল সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন কাজলায় একটি বাস কাউন্টারে সাধন মুখার্জিকে মারধর করেন শাহাদাৎ, আসিফুরসহ ফিন্যান্স বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে সাধন মুখার্জির পক্ষ নিয়ে আসিফুর রহমানের ছাত্রাবাসে গিয়ে তাঁকে শাসিয়ে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব, ছাত্রদলের নেতা শাহরুখ মাহমুদসহ আইন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এ ঘটনার জেরে আজ বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে শাহাদাৎকে মারধর করেন ছাত্রদলের নেতা শাহরুখ, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আমির, রফিক, নুহানসহ অন্তত ১০ শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে শাহাদাৎকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন তাঁর বন্ধু আসিফুর রহমান। এ সময় তাঁকেও মারধর করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে আহত হন শাহাদাৎ, আসিফুর ও নুহান। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।

পরে বেলা দুইটার দিকে দলবল নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে যান ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেখানে গিয়ে তাঁরা নুহানের সঙ্গে থাকা শাহরুখ মাহমুদকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে নুহান ও শাহরুখকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পাঠানো হয় শাহাদাৎ ও আসিফুরকে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরের নেতৃত্বে কয়েকজন। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের চালককেও মারধর করেন তাঁরা।

এ ঘটনার পর আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আমিরের ছাত্রত্ব বাতিলসহ কয়েক দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করেন ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার বিষয়ে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘গত বছর রমজানে ইফতার মাহফিল করতে গেলে সাধন আমাদের বাধা দিয়েছিল। গতকাল (সোমবার) তাঁকে ক্যাম্পাসে দেখতে পেয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে সেই ঘটনার বিষয়ে কথা বলি। একপর্যায়ে আমাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আজকে সাধনের পক্ষ নিয়ে ছাত্রদলের কয়েকজন ছেলে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

মারধরের শিকার আরেক শিক্ষার্থী আসিফুর রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসরকে বাঁচাতে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা আমাদের ওপর টুকিটাকিতে হামলা করেছে। এর আগে সোমবার রাতেও সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মী আমার বাসার সামনে গেয়ে বিশৃঙ্খলা করে। এরপর আজ আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে তারা হামলা চালায়। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ছাত্রদলের নেতা আহত শাহরুখ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি ঘটনার তেমন কিছু জানতাম না। বিভাগের বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় আমি উপস্থিত হয়েছিলাম।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের হবিবুর রহমান হল শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাধন মুখার্জি বলেন, ‘২০২৪ সালে এক নারী শিক্ষার্থীকে ইভ টিজিংয়ের জন্য ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়। পরে আমি পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে গেলে আমার ওপর গতকাল (সোমবার) হামলা করা হয়েছে। পরে আমি বাড়িতে চলে এসেছি। পরবর্তী ঘটনার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এ বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদা আঞ্জু ও ফিন্যান্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শিবলি সাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদলের নেতার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘যত দূর জানতে পেরেছি, এ ঘটনায় ছাত্রদলের যারা জড়িত, তারা ব্যক্তিগত কারণে গিয়েছে। তবে ছাত্রদলের কেউ আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, এ ঘটনার সব ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জড়িত সব অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন ব ভ গ র শ ক ষ র থ ছ ত রদল র ন ত শ ক ষ বর ষ র ঘটন র জ র একপর য য় গত বছর র ঘটন র স এ ঘটন র স ঘর ষ স মব র আম দ র ঘটন য় র ওপর গতক ল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে পুলিশ পরিচয়ে পাথরবোঝাই নৌকা থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ, কনস্টেবল আটক

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ