বিএনপির ৩১ দফা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পথরেখা
Published: 15th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছে। প্রথম দফায় জিঘাংসার রাজনীতি পরিহার করে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য দফায় অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন, দলীয়করণ রোধ করা এবং সরকার পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠন ও বিচারপতি নিয়োগের আইন প্রণয়নসহ জাতীয় জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসংগতি দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিপ্রায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যাকে একটি উদার, মধ্যপন্থি ও গণতান্ত্রিক দলের কর্মসূচি বিবেচনা করা যায় এবং তা অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে বলে অনুমিত হয়।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ব্যর্থতার কারণে যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো, তেমন বাস্তবতায় আমার মনে হয়, একই ভুল আর বিএনপি করতে চায় না; যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণও প্রত্যাশা করে না। জনমতকে অবজ্ঞা করে বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করলে সুদীর্ঘকাল ক্ষমতা টেকসই হয় না। স্বল্পকালের বিষয় হলেও তা দীর্ঘকালের নয়। আবার আমাদের ভূরাজনীতি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দলটির প্রতি প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্রের সমর্থন ও দুর্বলতাকে অগ্রাহ্য করলে চলে না। সেটা হতে পারে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবিবেচনা ও অবিচক্ষণতা।
আজ ড.
ছাত্র-জনতার উপলব্ধি আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ত্রুটিপূর্ণ, তার মধ্য দিয়ে শীর্ষ নেতা-নেত্রী হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী। তাই বন্দোবস্ত পরিবর্তনের সংস্কার জরুরি। সে কারণেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া অনিবার্য। তবে বিচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের মালিকানা। তাদের যথার্থ বিচার হোক, আবার অচোরা যেন বন্দি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাচ্যুত দলটির নিরপরাধ নেতাকর্মীর রাজনীতি করার পথ উন্মুক্ত হলে জাতিকে ঐক্যের বন্ধনে বাঁধা সহজ হতে পারে।
সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের উপলব্ধি তার অধিকাংশের সঙ্গেই রয়েছে ৩১ দফার সংগতি। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে ছাত্র-জনতার নতুন দলের আবির্ভাব, জামায়াতে ইসলামী ও সরকার এই তিন শক্তির প্রাবল্য দেখে আমার মনের জানালায় কবির অমিয় বাণী উঁকি দেয়, ‘ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট’। ওই তিন শক্তির প্রাবল্যকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে তাদের সঙ্গে বিএনপি যদি সুকৌশলে সমঝোতা করতে পারে, ধৈর্যের সঙ্গে ঐক্য গড়তে পারে তাহলে তার অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পথ মসৃণ হতে পারে। সেটা করতে পারলে মধ্যপন্থি উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তার ঘরে সোনালি ফসল তোলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে। তবে দলটির বিজয় অর্জনের পথের কাঁটা হলো, তার চাঁদাবাজ দখলদার নেতাকর্মী। তাদের শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাই বয়ে আনতে পারে সফলতা। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হতে পারে চালকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া। তাই মনে হয়, দলটির সামনে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা আবার অগ্নিপরীক্ষা।
ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান: সাবেক অধ্যক্ষ, নওগাঁ সরকারি কলেজ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র জন ত র র জন ত সরক র দলট র ক ষমত ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
জেনে নিন, জান্নাতি ২০ সাহাবির নাম
ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের অবদান অতুলনীয়। তাঁরা ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে নিকটতম সঙ্গী, যাঁরা ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ ত্যাগ ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন।
তাঁদের মধ্যে কিছু সাহাবি জীবদ্দশায়ই রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। এই সাহাবিদের মধ্যে ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির নাম সহিহ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন সাহাবিকে আল্লাহর রাসুল বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে জান্নাতি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
আশারায়ে মুবাশশারা: জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবি‘আশারায়ে মুবাশশারা’ অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন। এই ১০ জন সাহাবি জীবদ্দশায় রাসুল (সা.) থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।
একটি হাদিসে সাঈদ ইবনে জায়িদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘১০ জন জান্নাতে যাবে: আবু বকর জান্নাতি, ওমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, জুবাইর ইবনুল আওয়াম জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনে আউফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে জায়িদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ জান্নাতি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৬৮০)
আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবী১৩ নভেম্বর ২০২৩এই ১০ সাহাবিকে ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো—
১. আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.): ইসলামের প্রথম খলিফা, রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষ।
২. ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.): দ্বিতীয় খলিফা, যিনি ইসলামি রাষ্ট্রের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
৩. উসমান ইবনে আফফান (রা.): তৃতীয় খলিফা, যিনি কোরআনের সংকলন ও প্রমিতকরণে অবদান রাখেন।
৪. আলী ইবনে আবু তালিব (রা.): চতুর্থ খলিফা, রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা।
৫. তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.): প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারী ও বদর যুদ্ধের বীর।
৬. জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.): রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও বীর যোদ্ধা।
৭. আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.): প্রথম আটজন ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন, দানশীলতার জন্য বিখ্যাত।
৮. সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.): কাদিসিয়া যুদ্ধের নায়ক এবং প্রথম দিকের মুসলিম।
৯. সাঈদ ইবনে জায়িদ (রা.): প্রথম দিকের মুসলিম ও সাহাবিদের মধ্যে বিশিষ্ট।
১০. আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রা.): ‘আমিনুল উম্মাহ’ (উম্মাহর বিশ্বস্ত) হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক কুস্তিগিরের গল্প১০ এপ্রিল ২০২৫জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত অন্যান্য সাহাবিআরও কয়েকজন সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন, যদিও তাঁদের নাম একত্রে এক হাদিসে উল্লেখ নেই, তবে বিভিন্ন হাদিসে পৃথকভাবে এসেছে। যেমন
১১. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.): রাসুল (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। হাদিসে আছে, জিবরাইল (আ.) তাঁকে জান্নাতে মুক্তার প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৮২০)
১২. ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (রা.): রাসুল (সা.)-এর কন্যা, যিনি জান্নাতি নারীদের সরদার হবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
১৩. হাসান ইবনে আলী (রা.): রাসুল (সা.)-এর নাতি, জান্নাতের যুবকদের সরদার। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
১৪. হোসাইন ইবনে আলী (রা.): রাসুল (সা.)-এর নাতি, জান্নাতের যুবকদের সরদার। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
১৫. আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.): সাবেক ইহুদি পণ্ডিত, যিনি ইসলাম গ্রহণের পর জান্নাতের সুসংবাদ পান। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮১৬)
১৬. উক্কাশা ইবনে মুহসিন (রা.): বদর যুদ্ধের সাহাবি, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পান। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৪)
১৭. জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.): রাসুল (সা.)-এর পালিত পুত্র, যিনি কোরআনে যার নাম উল্লেখ আছে এবং জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। (সুরা আহজাব, আয়াত: ৩৭)
১৮. আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.): রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী, যিনি জান্নাতি নারীদের অন্যতম। (ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার আসকালানি, পৃষ্ঠা: ৭/১২৩, দারুল মা’রিফা, ১৯৮৯)
১৯. আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.): প্রথম দিকের মুসলিম, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পান। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮০০)
২০. বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.): মুয়াজ্জিন এবং প্রথম দিকের মুসলিম, যিনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৫৮)
কিছু সূত্রে হজরত হোসাইন ইবনে হারিস (রা.), আউফ ইবনে উসাসা (রা.) বা ইয়াজিদ ইবনে রুকাইশ (রা.)-এর নামও উল্লেখ করা হয়, কিন্তু সহিহ হাদিসে এই নামগুলোর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। (মান বুশশিরা বিল জান্নাহ মিন গাইরিল আশারাহ, পৃষ্ঠা: ৫৫, দারুল উলুম প্রকাশনী, ২০১৫)
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫