‘আমাকে ক্ষমা করো মা’, নিহত হওয়ার আগমুহূর্তে কেন বলেছিলেন রিফাত রাদওয়ান
Published: 15th, April 2025 GMT
ছেলের শেষ কথাটা মা ঘালিয়া রাদওয়ানকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ঠান্ডা মাথায় গুলিবর্ষণে নিহত ২৪ বছর বয়সী রিফাত রাদওয়ানের শেষ কথা ছিল, ‘আমাকে ক্ষমা করো মা।’
গত ২৩ মার্চ এক উদ্ধার মিশনে থাকার সময় এই তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীকে তাঁর আরও ১৪ সহকর্মীর সঙ্গে গুলি করে মারা হয়। শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাদের হামলার বিবরণ রেকর্ড করে গেছেন তিনি।
রিফাত মায়ের কাছে ওই ক্ষমা চেয়েছিলেন এ উদ্দেশ্যে যে, এতে হয়তো তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হবে। তিনি জানতেন, প্যারামেডিক হওয়ার পর মা তাঁর জন্য প্রতিদিন দুশ্চিন্তায় থাকতেন।
রিফাত মায়ের কাছে ওই ক্ষমা চেয়েছিলেন এ উদ্দেশ্যে যে, এতে হয়তো তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হবে। তিনি জানতেন, প্যারামেডিক হওয়ার পর মা তাঁর জন্য প্রতিদিন দুশ্চিন্তায় থাকতেন।ছেলের ক্ষমা চাওয়ার কথা শোনার পর থেকে অসংখ্যবার সিক্ত নয়নে ঘালিয়া বলেছেন, ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি, ছেলে।’ মা ঘালিয়া জানতেন, দক্ষিণ গাজায় আরও ১৪ সহকর্মীর সঙ্গে নিহত হওয়ার আগে রিফাত তাঁর বিবেককে পরিষ্কার করতে চেয়েছিলেন।
মায়ের আশা, তাঁর ছেলে জানতেন, তিনি সব সময়ই তাঁকে ক্ষমা করে এসেছেন।
‘যেন চাকু দিয়ে আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে’
২২ মার্চ ভোরে অন্যান্য দিনের চেয়ে খানিকটা দেরিতে ওঠেন ঘালিয়া। ঘুম থেকে জেগে রিফাতকে দেখতে ছুটে যান। কিন্তু আগেই ছেলেটা কাজে বেরিয়ে গেছে।
সেদিন রিফাতের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় ঘালিয়ার মনটা কষ্টে ভরে যায়। বলছিলেন, ‘আগের রাতে সে যখন ঘুমাচ্ছিল, আমি বারবারই তাকে দেখছিলাম।’
২১ মার্চের রাতটা ছিল অন্য দশটা রাতের মতোই। সারা দিন রোজা রেখে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে রিফাত তাঁবুতে আসেন। ইসরায়েলের হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে এই তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।
সাদামাটা ইফতার শেষে মা–বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন রিফাত। পরে সারা দিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন।
‘(রিফাতের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে) আমি হন্যে হয়ে একবার এদিকে গেছি, আরেকবার ওদিকে। কেঁদেছি, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি, রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান অভিযান চালাতে ইসরায়েলকে রাজি করানোর চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু প্রতিবার তারা (কর্তৃপক্ষ) বলেছে, ইসরায়েল সহযোগিতা করতে সম্মত হয়নি। তা শুনে মানসিক যন্ত্রণায় আমি মূর্ছা গেছি।’ঘালিয়া রাদওয়ান, নিহত স্বাস্থ্যকর্মী রিফাতের মারিফাতের বাবা (৫২) আনোয়ার রাদওয়ান বলেন, ‘রিফাত ঘরে না থাকলে আমি তার জন্য খুবই শূন্যতা অনুভব করি। সব সময় অপেক্ষায় থাকি, কখন ফিরবে, আমরা গল্প করব। আমাদের সঙ্গে গল্প করতে, রাত জাগতে তাকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি।’
ঘালিয়া বলেন, ‘ঘরে এলে আমি তার (রিফাত) কাপড় ধুয়ে দিতাম। বিছানা ঠিক করে দিতাম, যেন বিশ্রাম নিয়ে কাজে বেরোতে পারে।’
২২ মার্চ ভোরে কাজে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রিফাত সাহ্রি খেতে উঠেছিলেন কি না, নিশ্চিত না হলেও মা ঘালিয়ার ধারণা, তিনি রাতে উঠেছিলেন। সাহ্রি খেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা রোজা শুরু করেন। কাজে যেতে ওই দিন সকাল ছয়টায় রিফাতের সহকর্মীরা এসে তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেননি রিফাত। এর পরিবর্তে দ্রুত সাড়াদানে নিয়োজিত উদ্ধারকর্মীদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে থাকেন।
সহকর্মী ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় মুষড়ে পড়েন অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র দওয় ন ইসর য় ল সহকর ম র জন য জ নত ন কর ম র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই ভাইয়ের গ্রেপ্তারের খবর ‘বিশ্বাস করতে পারছেন না’ বাবা
রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজন রাজশাহীর বাসিন্দা। সম্পর্কে তাঁরা ভাই। বড় ভাই সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব—দুজনেই রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
তাঁদের বাবা এস এম কবিরুজ্জামান পেশায় একজন গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। দুই ছেলের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলছেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
এস এম কবিরুজ্জামানের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে। এক দশক আগে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রি করে রাজশাহীতে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ১১ ঘণ্টা আগেপরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফিলিং স্টেশনে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন কবিরুজ্জামান। যার মধ্যে বেশির ভাগ দেন বাড়িভাড়া। আগে দুই ছেলে টিউশন করে খরচ চালাতেন, তবে কয়েক মাস হলো তা ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকেও আর টাকা পাঠাতে হয় না তাঁদের।
আজ সোমবার বিকেল চারটায় ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কবিরুজ্জামান নিজেই গাড়িতে গ্যাস দিচ্ছেন। সেখানেই বলেন, ‘আমার আয় খুব কম। বাসাভাড়ায় প্রায় সবটাই চলে যায়। ছেলেদের পড়াশোনায় মাসে ২০ হাজার টাকার মতো লাগে। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে, সেটা দিয়ে চলি।’
কবিরুজ্জামান আরও বলেন, ‘দুই ছেলে আগে টিউশনি করত। কিছুদিন হলো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে শুনেছি। রোববার সকালে জানলাম, তারা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। ওদের জীবনধারা আলাদা—দাড়ি রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়াবে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
ফিলিং স্টেশনের কয়েকজন সহকর্মীও নিশ্চিত করেছেন, কবিরুজ্জামানের রাজশাহীতে কোনো নিজস্ব সম্পত্তি নেই। তাঁর ছেলে গ্রেপ্তার হয়েছে শুনে তাঁরাও বিস্মিত।
চাঁদাবাজির অভিযোগে গত শনিবার রাতে গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তাঁরা দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর সংগঠন থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। অন্য দুজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। তাঁদেরও নিজ নিজ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান আবদুর রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ। ফেসবুকেও তাঁর সঙ্গে তাঁদের চলাফেরার একাধিক ছবি রয়েছে।
সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘এরা তো আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। খুব ভালো ছেলে। ওরা গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা শুনে আমি হতবাক।’
আরও পড়ুনঅনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ উঠছে ভবন, এলাকায় নানা আলোচনা২১ ঘণ্টা আগে