প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে আরও দুই মামলায় শেখ হাসিনা-জয়সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
Published: 15th, April 2025 GMT
প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আরও দুটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ মঙ্গলবার সকালে এ আদেশ দেন। এ নিয়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার পরিবারের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হলো।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় গত রোববার শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর আগে প্লট দুর্নীতির আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে ১০ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হয়।
আজ দুই মামলায় অন্য যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো, তাঁরা হলেন—সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য মেজর (অব.
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়া প্লটের দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহেনার পরিবারের সাত সদস্যসহ অন্যদের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুদক। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয় মামলায় গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক। পরে ছয়য় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
দুদকের অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহরে রাজউকের প্রতিটি ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ব র র স ম হ ম মদ র জউক র ল ইসল ম সদস য ম পর য় ন
এছাড়াও পড়ুন:
সংকট এড়াতে হাত বাড়াতে হবে ট্রাম্পকেই
যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক আরোপের ফলে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা থামানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে প্রথমবারের মতো নমনীয়তা দেখিয়েছেন। ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, চীনের ওপর আরোপ করা ১৪৫ শতাংশ শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
পরে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ‘উত্তেজনা হ্রাস’ পাওয়ার পূর্বাভাস দেন।
বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে অবশ্যই চুক্তিতে আসতে হবে। তবে সংকট সমাধানে ট্রাম্পকেই আগে হাত বাড়াতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ মার্কিন শেয়ার বাজার থেকে কেড়ে নিয়েছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার। পড়ে গেছে ডলারের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনা মালবাহী জাহাজের বুকিংও কমে গেছে। ফলে চীনের রপ্তানি খাতেও নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এরপরও দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হচ্ছে না। সংকট সমাধানের ব্যাপারে এখনও উদাসীন ওয়াশিংটন-বেইজিং।
এর নেপথ্যে কতকগুলো কারণ রয়েছে। বিশেষ করে সংকট সমাধানের মেজাজ চীনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। দেশটির নেতারা বিশ্বাস করেন, তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনায় শৃঙ্খলিত। বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবেলায় তারা কঠোর ও বেশি ঐক্যবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা নেই, যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ব্যবহার করে জনসাধারণকে তারা ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে।
তাছাড়া চীনের হাতে এমন বিরল খনিজ আছে, যা মার্কিন অর্থনীতিকে আঘাত হানতে পারে।
বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘ হলে এই বিরল খনিজের মাধ্যমে চীন মার্কিন কারখানাগুলোকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিতে পারে। উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি তৈরি করতে পারে।
আর এসব ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দ্রুত আসার আশঙ্কা রয়েছে, যা ট্রাম্পের জন্য ক্ষতিকর হবে। সেক্ষেত্রে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এরকম কোনো চাপ নেই।
এসব কারণেই চীন বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধে আগে থেকেই কোনো পদক্ষেপ নেবে না। তারা ট্রাম্পের পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করবে।
ইতোমধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, বল চীনের কোর্টে। তবে তার জোর দাবি, চীনকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে আসতেই হবে। ট্রাম্পের এই মনোভাব সম্পর্কে বেইজিং চুপ। ব্যাপারটি তারা কানেই নিচ্ছে না। কারণ চীনা নেতারা মনে করেন, ট্রাম্প এমন একজন নেতা, যিনি বারবার মন পরিবর্তন করেন। দীর্ঘ সময়ের জন্য কোনো চুক্তিতে আটকে থাকতে পারেন না।
বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, এসবের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানের পদক্ষেপগুলো ট্রাম্পের কাছ থেকেই আসতে হবে। সংকটের সমাধান বেইজিং থেকে উদ্ভূত হবে না।
সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকেই চুক্তির ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ চিন লড়াইয়ে জিততে চায়। তারা আন্তর্জাতিকভাবে এই জয়কে উপস্থাপন করতে চায়।
ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন বেইজিং ২০০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত মার্কিন পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত অকার্যকর হয়ে পড়ে।
কারণ বেইজিং ক্রয় প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। চীন এভাবে করতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হতে পারে।
বিশ্লেষণে বলা হয়, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়া জরুরি। যাতে উভয়পক্ষ বাণিজ্যের জন্য আগ্রহ পেতে পারে।
সেক্ষেত্রে দুই পক্ষের উচিত যৌথ বাণিজ্যিক পদক্ষেপ ঘোষণা দেওয়া। যেমন, চীন পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা দিয়েছে।
চীন যদি তা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিকভাবেই তারা কমিয়ে দেবে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের সামনে জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট খাতের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগের দরজা উন্মুক্ত রাখার সুযোগ আছে। কারণ চীনা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পায়নে অগ্রগতি এনে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শি জিনপিংও মার্কিন বাজারে মুনাফা করে সাফল্যের দাবিদার হতে পারেন।
আগামী নভেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়ায় এপিইসি বা অ্যাপেক সম্মেলনে ট্রাম্প ও শির মধ্যে বৈঠক হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।
সেখানে আলোচনার মাধ্যমে একটা পথ খুলে যেতে পারে দু’দেশের জন্য। আর এর আগে যদি ক্রমবর্ধমান সংকট এড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়, তবে তা ট্রাম্পকেই নিতে হবে। সূত্র: টাইম।