ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণে রাবি শিক্ষার্থীদের অনুভূতি
Published: 14th, April 2025 GMT
বাংলা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে বাঙালি মেতে উঠেছে নানা আয়োজনে। দিনটিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের সর্বত্রই বইছে উৎসবের আমেজ। জাতি-গোত্র-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একযোগে দিনটি উদযাপন করেছে। তবে স্বৈরাচার মুক্ত ২৪ এর নতুন বাংলাদেশে কেমন কাটলো শিক্ষার্থীদের নববর্ষ, তা জানতে রাইজিংবিডির কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে।
অগণতান্ত্রিক পরিবেশ আমাদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছিল
নববর্ষ মানেই নতুন আশা, নতুন দিনের হাতছানি। কিন্তু গত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, কিভাবে একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশ আমাদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। এবারের পহেলা বৈশাখ আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমরা একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে বর্ষবরণ করতে পারছি। এই নতুন সূর্যোদয় আমাদের মনে সাহস জুগিয়েছে, স্বপ্ন দেখিয়েছে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। যেখানে আমরা নির্ভয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারব, যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
(লেখক: ফারিহা সাঈদ, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, অর্থনীতি বিভাগ)
আরো পড়ুন:
সুরে-গানে-তালে বৈশাখকে বরণ করল রাবি
নববর্ষে থাকবে রাবি অধ্যাপকের ৩০০ ফুটের স্ক্রলচিত্র প্রদর্শনী
ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চা করতে পারব
শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা সবসময় একটি জ্ঞানভিত্তিক, প্রগতিশীল সমাজের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী শাসনের যাতাকলে আমাদের সেই স্বপ্ন প্রায় ধূলিসাৎ হতে চলেছিল। মুক্তচিন্তার অভাব, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ এবং ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাস- আমাদের ক্যাম্পাসগুলোকে বিষিয়ে তুলেছিল। ২০২৫ সালের এই নববর্ষ আমাদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ফ্যাসিবাদ মুক্ত পরিবেশে আমরা আবার মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চা করতে পারব, নিজেদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হতে পারব।
(লেখক: তানভীর খান তরুণ, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ)
ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে আমরা বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি
পহেলা বৈশাখ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, আমাদের ঐতিহ্যের ধারক। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখেছি কিভাবে একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমাদের সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছিল। নববর্ষের আনন্দ উদযাপনও তাদের রক্তচক্ষু এড়িয়ে যেতে পারেনি।
এ বছর, একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে আমরা বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছি, নিজেদের সংস্কৃতিকে আপন মহিমায় উদযাপন করতে পারছি। এই নববর্ষে আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করব, তার বিকাশ ঘটাব এবং বিশ্ব দরবারে তুলে ধরব।
(লেখক: নাদিয়া হক মিথি, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, লোক প্রশাসন বিভাগ)
আমরা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারব
তরুণ প্রজন্ম সবসময় পরিবর্তনের অগ্রদূত। আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী শাসনে আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বহু বাধা এসেছে। ভোটাধিকার হরণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন আমাদের হতাশ করেছিল। জুলাই আন্দোলনের পর এ নববর্ষ আমাদের মনে নতুন আশা জাগিয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, এই ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে আমাদের ভোটাধিকার সুরক্ষিত হবে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে আমরা সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারব।
(লেখক: ফজলে রাব্বী পরশ, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, আরবি বিভাগ)
এই নববর্ষ আইনের শাসনের প্রত্যাশা নিয়ে এসেছে
একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে আইনের শাসন অপরিহার্য। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি কিভাবে আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, কিভাবে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হওয়ার পর এই নববর্ষ আমাদের জন্য আইনের শাসনের প্রত্যাশা নিয়ে এসেছে।
আমরা বিশ্বাস করি, এখন থেকে আইনের চোখে সবাই সমান হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।
(লেখক: আবু সালেহ শোয়েব, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ)
বিদ্বেষ ভুলে সবাই মিলে ভালোবাসার বাংলাদেশ গড়ে তুলি
পহেলা বৈশাখ মানে মিলনমেলা, নতুন করে সম্পর্কের সূচনা। কিন্তু একটি বিভেদ সৃষ্টিকারী শাসন আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছিল, ভয় আর অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিল। নতুন বাংলাদেশে এই নববর্ষ আমাদের জন্য সেই দূরত্ব ঘোচানোর। আবার একসঙ্গে হাসার সুযোগ নিয়ে এসেছে। একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে আমরা আবার ঐক্যবদ্ধ হতে পারব, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারব এবং একটি সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারব। এ নববর্ষে আমাদের কামনা, বিদ্বেষ ভুলে আমরা সবাই মিলে একটি ভালোবাসার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
(লেখক: ফাহিমা করিম বন্যা, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ)
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র স পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ স্লোগানে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নওগাঁয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৮টায় শহরের এটিম মাঠ থেকে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে নববর্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও দিনব্যাপী সেখানে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণ মেলার।
শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়া, পালকি, মাটির তৈরি বাসনসহ বিভিন্ন বর্ণের বেলুন ফেস্টুন, মাথাল শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করে তোলে।
এ সময় পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ারসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের নওজোয়ান মাঠ থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয় শেষ হয়।