সোমবার মধ্যরাত থেকে সাগরে শুরু হচ্ছে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা
Published: 14th, April 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে ৫৮ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, বলবৎ থাকবে ১১ জুন পর্যন্ত। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় এ নিষেধাজ্ঞা আগে শুরু হতো ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় এবার সাত দিন কমানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তা ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়েছে।
দেশের মৎস্যগবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাসের দাবি করে আসছিলেন। সেই সঙ্গে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তার ওপর কারিগরি গবেষণার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করে ১৬ মার্চ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে মৎস্যগবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুনসমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ, খুশি জেলেরা১৮ মার্চ ২০২৫ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জলসীমায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাস করার বিষয়টিকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের সাবেক গবেষক ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘এটা দেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্য সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন দাবি করে আসছিলাম। কারণ, আগে সরকার যে উদ্দেশে এই নিষেধাজ্ঞা দিত, তা দুই দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতিবেশী দেশকে লাভবান করত। এটা আমাদের মৎস্যসম্পদের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রতিবছর বাংলাদেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায় তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন, ৬১ দিন।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, এত দিন বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার মধ্যে প্রায় ৩৯ দিন ভারতীয় জেলেরা দেদার বাংলাদেশের জলসীমায় সুন্দরবন, কুয়াকাটাসহ উপকূলে প্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যেতেন। এতে দেশের লাখ লাখ জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। এবার নিষেধাজ্ঞা একই সময়ে হওয়ায় এমনটা হবে না।
মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌযানকে এর আওতায় আনা হয়। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে দুর্বিষহ অবস্থার মুখোমুখি হন।
দক্ষিণের জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হতো তাঁদের। কিন্তু এখন তা আট দিন কমে যাওয়ায় ১৩৯ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জেলে ট্রলারের মাঝি জাফর হোসেন বলেন, ‘সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। এখন আমরা এই নিষেধাজ্ঞার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।’
নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সাগর থেকে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে মাছ ধরা ট্রলারগুলো। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মালিক সমিতির আওতায় ৪০০ ট্রলার রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩০০-এর মতো ট্রলার ফিরেছে। বাকিগুলো ফিরবে। সেই সঙ্গে বরগুনা সদরের নলী, তালতলীর ফকিরহাট, নিদ্রা, পটুয়াখালীর মহিপুর, আলীপুরেও অনেক ট্রলার ফিরে আসছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ শ র জলস ম য় এই ন ষ ধ জ ঞ ৬৫ দ ন সরক র মৎস য বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ-চার্জিং স্টেশন বন্ধে শুরু হচ্ছে অভিযান
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে ডিএনসিসি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যৌথভাবে কাজ করছে। শিগগিরই অভিযান করে এগুলো বন্ধ করে দেবো।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে রাস্তা, ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। ডিএনসিসির ৬, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকায় ৭টি প্যাকেজে মোট ২০ কিমি রাস্তা, ৩৪ কিমি নর্দমা ও ১৫ কিমি ফুটপাত নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ভেতরে অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এরইমধ্যে অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনের তালিকা করেছে। শিগগিরই অভিযান করে এগুলো বন্ধ করে দেবো।
নির্মাণ কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিক সমিতিকে অনুরোধ করবো আপনারা আপনাদের এলাকায় অবৈধ অটোরিকশা ঢুকতে দেবেন না। আপনাদের আবাসিক এলাকাগুলো যে পরিকল্পনা করে করা হয়েছে, সেই পরিকল্পনার বাইরে কিছু করতে দেবেন না। আবাসিক এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক কাজ করতে দেবেন না। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আপনারা স্থানীয় কমিউনিটি সোচ্চার হলে অবৈধ অটোরিকশা, অবৈধ হকার বন্ধ করা সহজ হবে।
নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করবো আপনারা বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি থেকে প্লট কেনার আগে মৌজা ম্যাপ চেক করে দেখবেন জলাধার কিনা। জলাধার হলে দয়া করে সেই প্লট কিনবেন না। জলাধার হলে পরবর্তীতে সেই প্লট পেতে ঝামেলা হবে।
তিনি আরো বলেন, সবাই একসময় ভাবতেন পল্লবী ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় কোনোদিন পাকা রাস্তা হবে না। এই এলাকায় শুধু গোডাউন ভাড়া দেওয়া হতো একসময়। পরিকল্পিতভাবে মাঠের জায়গা রাখা হয়নি, কোন গাছ লাগানো হয়নি। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ভেতর দিয়ে খাল ছিল। আমরা নাগরিক সমাজ আন্দোলন করেছি সেই খাল উদ্ধারের জন্য, মামলা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ৭টি প্যাকেজের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে, জলাবদ্ধতা দূর হবে।
এ সময় তিনি বলেন, এই এলাকায় যারা বসবাস করেন সবাইকে অনুরোধ করছি আপনারা এই বর্ষায় গাছ লাগিয়ে পুরো ইস্টার্ন হাউজিং এলাকাটিকে সবুজের চাদরে নিয়ে আসুন। আমি অনুরোধ করছি ছোট গাছ না লাগিয়ে বড় গাছ লাগাবেন। পরিকল্পনা করে একটা রোডে কৃষ্ণচূড়া লাগান, আরেকটা রোডে সোনালু লাগান। এরে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
নির্মাণকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।
ঢাকা/আসাদ/এনএইচ