যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তির আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউক্রেন সফরের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনের সুমি শহরে গতকাল রোববার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৪ জন নিহত হওয়ার আগে সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে।

সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্তের আগে, যেকোনো ধরনের সমঝোতার আগে অনুগ্রহ করে এখানের মানুষ, বেসামরিক লোকজন, যোদ্ধা, হাসপাতাল, গির্জা ও শিশুদের দেখে যান, যাঁদের হয় হত্যা করা হয়েছে, না হয় ধ্বংস করা হয়েছে।’

রোববারের হামলা বিষয়ে রাশিয়ার ভাষ্য, তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোয় হামলা চালিয়েছে। হামলার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ট্রাম্পের কাছেও। জবাবে তিনি ওই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেছেন, তাঁকে ‘জানানো হয়েছে-তারা (রাশিয়া) একটি ভুল করেছে।’ যদিও নিজের এ বক্তব্য নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে থেকেই সোচ্চার ছিলেন ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পর এ নিয়ে আরও তৎপর হয়েছেন তিনি। যুদ্ধ থামানোর জন্য ইউক্রেনে বিশেষ দূত হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেইথ কেলগকে নিয়োগ দিয়েছেন। সুমি শহরে রাশিয়ার হামলার পর কেলগ বলেছেন, ওই হামলা ‘শিষ্টাচারের যেকোনো সীমা’ অতিক্রম করেছে।

এদিকে সুমিতে হামলার পর আজ সোমবার সকালে লুক্সেমবার্গে বৈঠকের কথা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের। ইউরোপীয় নেতারাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এই হামলার মাধ্যমে ‘মানুষের জীবন, আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে’ রাশিয়া অবজ্ঞা করেছে বলে উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

জার্মানির আসন্ন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘মারাত্মক যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগ এনেছেন। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, সুমিতে হামলা ‘যুদ্ধবিরতির রুশ সংস্করণকে তুলে ধরেছে।’ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনৈতিক কাজা কালাস বলেছেন, এই হামলা রাশিয়ার ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের জন্য ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষেই লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য। এ ছাড়া জাতিসংঘের হিসাবে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী হিসেবে জীবন যাপন করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র হলো রাজশাহীতে

রাজশাহীতে মঙ্গলবার সকালে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র। উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। এ সময় নতুন এই প্রজনন কেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন ঘড়িয়াল জুটিকে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বনসংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বনসংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্।

বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রটি করা হয়েছে। শহীদ জিয়া শিশু পার্ক রোডে এর অবস্থান। ঘড়িয়ালের নিরাপত্তায় নতুন প্রজনন কেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। 

বন অধিদপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘নদীদূষণ, নাব্য হ্রাস, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, পাচার, ডিম নষ্ট হওয়া ও খাদ্য সংকটের কারণে ঘড়িয়ালের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণে আজ তারা বিলুপ্তির পথে। এ কারণে প্রজনন কেন্দ্রে প্রজননের মাধ্যমে ঘড়িয়ালের বংশ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এ উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়াল প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। রাজশাহীতে আগে থেকে থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’।

এই আন্তঃচিড়িয়াখানা বিনিময়ের মাধ্যমে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’-কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি। কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র। নতুন ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন প্রাণিবিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ