কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে নির্ধারিত ইনজেকশনের পরিবর্তে ‘ভুল ইনজেকশন’ পুশ করে অধিক মূল্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হাসপাতালটির কনসালটেশন বিভাগের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতারণা করা মুন হাসপাতালটি নগরীর ঝাউতলায় অবস্থিত।  

রবিবার (১৩ এপ্রিল) মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের) পরিচালক ডা.

আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ।

আরো পড়ুন:

চীনের অর্থায়নে ১০০০ শয্যার হাসপাতালটি পঞ্চগড়ে স্থাপনের দাবি

মায়ের জন্য কাঁদছিল মেয়ে, অপহরণকারী ভেবে বাবাকে গণপিটুনি

স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠিতে আরও বলা হয়, ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল মতিন (সাগর) এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী গত ১০ এপ্রিল মনোয়ারা বেগম নামে রোগীকে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান-নোভার্টিস, সুইজারল্যান্ড) প্রদান করার কথা বলা হয় এবং যার বাজার মূল্য ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা বলে দাবি করা হয়। কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ইনজেকশন অ্যাকলাস্টা পরিবর্তন করে জোলেনিক (প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা বাংলাদেশ) যার বাজার মূল্য ৬,০০০ টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ডা. মোহাম্মদ আশরাফুল মতিনের (সাগর) স্বাক্ষরবিহীন প্রতিবাদ লিপি প্রচার হয়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। এমতাবস্থায় আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত মুন হাসপাতাল লিমিটেড, কুমিল্লা এর কনসালটেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তবে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর কার্যক্রম চালু থাকবে। বিষয়টি সিভিল সার্জন কুমিল্লা তত্ত্বাবধায়ন করবেন। 

রাতে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি পেয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি লালমাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক। অপর দুই সদস্য হচ্ছেন, মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুমন চন্দ্র দত্ত এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা. শফিকুল ইসলাম। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। 

নির্দেশনা অনুসারে মুন হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে তাদের কনসালটেশন সেন্টারের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

ঢাকা/রুবেল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ভ ল স র জন ইনজ কশন ম হ ম মদ

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র হলো রাজশাহীতে

রাজশাহীতে মঙ্গলবার সকালে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র। উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। এ সময় নতুন এই প্রজনন কেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন ঘড়িয়াল জুটিকে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বনসংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বনসংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বনসংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্।

বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্রটি করা হয়েছে। শহীদ জিয়া শিশু পার্ক রোডে এর অবস্থান। ঘড়িয়ালের নিরাপত্তায় নতুন প্রজনন কেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। 

বন অধিদপ্তরের প্রধান বনসংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘নদীদূষণ, নাব্য হ্রাস, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার, পাচার, ডিম নষ্ট হওয়া ও খাদ্য সংকটের কারণে ঘড়িয়ালের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটে। এসব কারণে আজ তারা বিলুপ্তির পথে। এ কারণে প্রজনন কেন্দ্রে প্রজননের মাধ্যমে ঘড়িয়ালের বংশ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ 

ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এ উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়াল প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। রাজশাহীতে আগে থেকে থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’।

এই আন্তঃচিড়িয়াখানা বিনিময়ের মাধ্যমে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’-কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি। কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র। নতুন ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখছেন প্রাণিবিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ