নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে (১৪৩২ বঙ্গাব্দ) বরণ করে নিয়েছে পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পিবিপ্রবি)। 

বর্ষবরণ উপলক্ষে সোমরাব (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১টায় আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন। 

ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, “এ দিনটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসার দিন। আজ একটি নতুন দিনের, নতুন বছরের আগমন। এদিন আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখি, নতুন করে পথচলার প্রতিজ্ঞা করি। পুরনো দিনের সকল গ্লানি, মলিনতা ধুয়ে যাক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

তিনি বলেন, “নতুন বছর বয়ে আনুক সবার জন্য অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। আসুন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করি- নতুন বছরে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।”

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণ থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের সিও অফিস মোড় প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তারা নাচ, গান, আবৃত্তি, একক অভিনয়সহ বিভিন্ন পরিবেশনায় দিনভর সবাইকে মাতিয়ে রাখেন।

ঢাকা/তাওহিদ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ মুক্ত বর্ষবরণ: যা ভাবছেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

বাংলা ১৪৩২ সন এসেছে ফ্যাসিবাদ মুক্ত এক স্বপ্নের বাংলাদেশে এক নতুন বার্তা নিয়ে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দমনপীড়ন, বাকস্বাধীনতার সংকোচন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর জনগণ ফিরে পেয়েছে মুক্তির স্বাদ। ২০২৪ সালে আগস্টে জনতার ঐক্য ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে এক নতুন রাজনৈতিক আবহ, যেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আবারও গুরুত্ব পায়।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলা নববর্ষের আনন্দ ছিল ব্যতিক্রম। এটা শুধু সংস্কৃতির উৎসব নয়, বরং মুক্তির আনন্দ। রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষের অংশগ্রহণে নববর্ষ উদযাপন হয়েছে নতুন প্রত্যয়ের সঙ্গে ভয় নয়, অধিকার ও সম্মানের কণ্ঠে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরাও নব স্বাধীনতার এই নতুন বছরের আগমনকে উপভোগ করেছেন দারুণভাবে। মুক্তির স্বাদ ও নববর্ষের আনন্দে ভিন্নরকম এক উৎসব মুখর পরিবেশে তারা উৎযাপন করেছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। রাইজিংবিডির কাছে তারা তাদের অনুভূতি জানিয়েছেন।

এবারের বর্ষবরণ এক আশাবাদী স্বপ্নের প্রতিধ্বনি

 ২৪-এর নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণ- এক আশাবাদী স্বপ্নের প্রতিধ্বনি। যেখানে নিঃশ্বাস নেয় মুক্ত চিন্তা, মুখরিত হয় গণতন্ত্রের গান। এ বার্তা যেন এক নবজাগরণের আহ্বান। স্বাধীনতার সত্য আলোয় ভেসে ওঠা সাহসী একটি ভোর। ফ্যাসিবাদের আঁধার পেরিয়ে এক নতুন সূর্যোদয়ের দিকে এগিয়ে চলার প্রতিজ্ঞা এটি।

বর্ষবরণ যেন শুধু একটি উৎসব নয়, বরং মানুষের মৌলিক অধিকারের জয়গান। এই যাত্রা হোক ন্যায়, মুক্তি ও সৌন্দর্যের পথে এক অনন্য অভিযান।
(লেখক: সাদিয়া সিদ্দিকা শান্তা, শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, ভেটেরিনারি অনুষদ) 

ফ্যাসিবাদ মুক্ত উৎসবের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়

আমি মনে করি, স্বাধীনতা ছাড়া কোনো উৎসবই সত্যিকারের হয় না। ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে মুক্ত এই প্রথম পহেলা বৈশাখ। আশেপাশের মানুষের মধ্যে যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখতে পাচ্ছি, সত্যিকার অর্থে এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করবার মতো নয়। আমি চাই, সবাই যেন মুক্তভাবে গান গাইতে, আলপনা আঁকতে, মেলা করতে পারে।
(লেখক: নাসরিন জাহান মহুয়া, শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ)

বাংলাদেশকে নতুনভাবে ফিরে পাওয়ার বছর

এ বছরের বর্ষবরণ শুধু বর্ষবরণ নয়, বাংলাদেশকে নতুনভাবে ফিরে পাওয়া, নতুনভাবে উদযাপন করার একটি অনুভূতি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, বছরের সব আবর্জনা দূর করে দেওয়ার মত করে আমরা ২৪ এর আন্দোলনের মাধ্যমে  ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। সব অসূচি দূর করে একটি সুন্দর বাংলাকে বরণ করে নিচ্ছি।”
(লেখক: সায়েদা জাহান খুকী, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি অনুষদ)

এবারের পহেলা বৈশাখ দেশের মানুষের জন্য অনেক স্পেশাল

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জনগোষ্ঠির জন্য একটি সার্বজনীন লোক উৎসব। এটি বাংলার ইতিহাস , ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক। প্রতিটি বছর বর্ণিল ও আনন্দঘন পরিবেশে বাংলার নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। কিন্তু বিগত বেশকিছু বছর থেকে হয়তো সেটা সেভাবে সম্ভব হয়নি। এর একটি বড় কারণ হতে পারে, বিগত বেশকিছু পহেলা বৈশাখ রোজার মাঝে পড়ে যাওয়া । 

এছাড়া এবারের পহেলা বৈশাখ দেশের জনমানুষের জন্য অনেক স্পেশাল। ফ্যাসিবাদী সরকারের ১৫ বছরের শাসন ও শোষণের অবসান ঘটিয়ে দেশের বিভিন্ন জনগোষ্টির মানুষ এক স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে । ২৪ এর আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ কে ফিরে পেয়েছি, এই নতুন বাংলাদেশে আজ প্রথম পহেলা বৈশাখ পালিত হতে যাচ্ছে । দেশের মানুষজন নতুন বছরকে মন খুলে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

যারা এতদিন ক্ষমতার প্রয়োগে চাপা পড়ে ছিল, বঞ্চিত ছিল নিজের অধিকার থেকে, তাদের সবার কাছে আজ একটি নতুন দিগন্তের শুরু। কত শত মানুষ তাদের পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আয়না ঘরে বছরের পর বছর বন্দী ছিল, তারা জানতোই না তাদের দোষটা কি। নিজের জীবন থেকে কতটা বছর তারা হারিয়েছে, হারিয়েছে নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত । তাদের সবার কাছেই আজ এক নতুন সূচনা।
(লেখক: মো. মেহেরাজ হোসেন ইমন, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, কৃষি অনুষদ)

বাক-স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার ছায়া পড়েছে এবারের নববর্ষে

এই তো গত বছরের কথা—মানুষ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে। সঙ্গে ছিল মুক্তির স্বপ্ন, ছিল বাক-স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার ছায়া এবার পড়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষে।

এবারের বর্ষবরণ শুধুই রঙ আর ঢাকঢোলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; ছিল একটা দৃঢ় বার্তা। আনন্দ শোভাযাত্রার ভেতর দিয়ে মানুষ শুধু বর্ষবরণ করেনি, বরং স্পষ্ট করেছে যে আমরা কথা বলতে শিখেছি, প্রশ্ন করতে শিখেছি।

শোভাযাত্রার ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতির মাধ্যমে উঠে এসেছে ফ্যাসিজমের প্রতি গণপ্রতিরোধ। যদিও প্রতিকৃতিটা একবার নষ্ট করা হয়েছিল। কিন্তু একবার আমরা মাথা তুলতে শিখে গেছি, এই মাথা সহজে নত হবে না। আবারো বানানো হয় সেই ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি, যার হাতে লেগে আছে হাজার মানুষের রক্ত।

এ নববর্ষ শুধু নতুন ক্যালেন্ডারের সূচনা নয়, এটি ছিল নতুন সাহসের সূচনা। একটা স্পষ্ট বার্তা, আমরা বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো ফ্যাসিজম সহ্য করব না।”
(লেখক: নাঈম সারোয়ার অপু, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ভেটেরিনারি অনুষদ)

এবারের পহেলা বৈশাখ নবজাগরণের উৎসব

‘যদি একদিন নেমে আসে আলো/আমরা হাত ধরবো সবাই’— নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এই পংক্তিটি আজ যেন বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এক নতুন আশার সুর তোলে। কতদিন আমরা অপেক্ষায় ছিলাম একটি আলোর, একটি পরিবর্তনের, একটি মুক্ত শ্বাসের। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের আঁধার, ভয় আর দমন-পীড়নের ভার পেরিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে নিজের স্বরূপ একটি স্বপ্নময়, গণতান্ত্রিক, বৈচিত্র্যময়, ভালোবাসার দেশ।

এবারের পহেলা বৈশাখ তাই শুধু একটি ক্যালেন্ডার বদলের দিন নয়, এটি এক নবজাগরণের উৎসব। ১৪৩২ বঙ্গাব্দের এই প্রথম প্রহরে নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে গোটা জাতি। রাজধানীর রাজপথ থেকে শুরু করে গ্রামের মেঠোপথ পর্যন্ত, পাহাড় থেকে সমতলে—সবখানেই মানুষ একত্র হয়েছে হৃদয়ের বন্ধনে। ধর্ম, জাতি, ভাষা—সব পার্থক্য ছাপিয়ে সবাই আজ একই ছায়ার নিচে, একই মাটির গান গাইছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবার, সত্যিকারের সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে নববর্ষ। এই উৎসব রাষ্ট্রীয় ছুটির গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের মনের গহীনে গেঁথে গেছে। যেখানে কণ্ঠে গান, চোখে জল, আর হৃদয়ে প্রতিজ্ঞা—আর কখনো নয় আঁধার, আর কখনো নয় শাসনের শৃঙ্খল।
(লেখক: আবু হানিফ, শিক্ষার্থী, প্রথম বর্ষ, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ)

সবার প্রত্যাশা দেশ আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাক
 
বাংলা নববর্ষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল বাঙালির জীবনে  এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে। সারা বছরের সব গ্লানি ভুলে  সম্প্রীতির এক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দিনটি উৎযাপন করেন এদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। পূর্বের ফাসিবাদ সরকারের অত্যাচার নির্যাতন থেকে মুক্ত হয়ে নতুন বছর মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা।

সেই ধারাবাহিকতায় দিনের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী নতুন বছরকে সাদরে গ্রহণ করেছে। সম্প্রীতির এক দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে  দেশের সেবায় নিজেকে উদ্বুদ্ধ রেখে দেশ আরো সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাক, এটাই সবার প্রত্যাশা।
(লেখক: মো. শাকিব হাসান, শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ)
 

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জলকেলিতে শেষ হলো পাহাড়ের উৎসব
  • ফ্যাসিবাদ ভুলে বেরোবি শিক্ষার্থীদের মুখে বাঙালির নবজাগরণ
  • ফ্যাসিবাদ মুক্ত বর্ষবরণ: যা ভাবছেন বাকৃবি শিক্ষার্থীরা
  • ঢাকের বাজনা ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে নতুন বছরকে বরণ
  • মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা...
  • বর্ণাঢ্য আয়োজনে পটুয়াখালীতে নতুন বছরকে বরণ
  • সুরের ধারার চৈত্রসংক্রান্তি আয়োজন, নাচ-গানে পুরোনো বছরকে বিদায়
  • নতুন বছরে কেমন হওয়া চাই প্রিয়জনের উপহার
  • ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব শুরু