চার দেয়ালের ভেতরে বন্দিরা বর্ষবরণের আনন্দ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য বর্ষবরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল রাঙামাটি জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে কারাগারের ভেতরে পাহাড়ি নৃত্যে গান গেয়ে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করেন তারা।
এরপর তাদের পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ এবং পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পিঠা খেতে দেওয়া হয়। এ সময় জেল সুপার মো.
কারাবন্দিদের দুপুরে পোলাও, মুরগীর মাংস, ডাল, সালাদ, পান, সুপারি, মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। রাতেও উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।
আরো পড়ুন:
বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস
টিএসসিতে ‘ভালো কাজের হালখাতায়’ মনের যত কথা
রাঙামাটি জেল সুপার মো. দিদারুল আলম জানান, পরিবার থেকে দুরে থাকা বন্দিরা যাতে বর্ষবরণের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশে এই আনন্দ আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু বর্ষবরণ পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী উৎসব, তাই কারাগারে বন্দি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী গানে নেচে এই উৎসব উদযাপন করে।
ঢাকা/শংকর/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে ঘরে ঘরে পাঁজন আপ্যায়ন
চাকমা বর্ষবরণের বড় উৎসব ‘বিজু’। বিজুর প্রথম দিনের নাম ফুল বিঝু। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ চৈত্রের শেষ দিনকে বলা হয় মূল বিজু। এদিন থেকে শুরু হয় খাওয়া দাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নের মূল পর্ব। এ উৎসবের মূল উপাদান ‘পাঁজন’।
পাহাড়ি বর্ষবরণের আবহমানকালের বহু ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ হিসেবে চাকমা সংস্কৃতিতে টিকে আছে বিজু উৎসবের এই পাঁজন রান্না। আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাঙামাটির ঘরে ঘরে চলছে পাঁজন আপ্যায়ন।
অন্তত ৩২ রকমের সবজি দিয়ে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী ‘পাঁজন’। আলু, পেঁপে, গাজর, বরবটি, কচু, লাউ, কাঁচকলা, কচি কাঁঠাল, সজনে ডাটা, বন থেকে সংগ্রহ করা নানা প্রকারের সবজি কেটে ধুয়ে নিয়ে শুটকি বা চিংড়ি মাছ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাঁজন বা তরকারি রান্না করেন চাকমা নারীরা। চাকমাদের বিশ্বাস, এই খাবার খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন:
ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব শুরু
বর্ষবরণে থাকছে ‘অন্ধকার কাল থেকে উত্তীর্ণ হবার বার্তা’
উৎসবের তৃতীয় দিন আগামীকাল ১৪ এপ্রিল চাকমা, ত্রিপুরারা গোজ্জ্যাপোজ্জা পালন করবেন।
ত্রিশরণ চাকমা বলেন, “১২ এপ্রিল ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বর্ষকে বিদায় দিয়ে থাকি আমরা। ১৩ এপ্রিল সকালে গোসল শেষে বাসার বয়স্কদের পা ধরে প্রণাম করি। এদিন বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম পাঁজন তরকারি। অনেক ধরনের সবজি দিয়ে এই পাঁজন রান্না হয়। কমপক্ষে ৩২ রকমের সবজি থাকে এতে।”
বিনিতা চাকমা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে তৈরি এই পাঁজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই এটি এটি আমাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।”
বাড়ি বাড়ি বেড়াতে থাকা শিক্ষক রিংকু দে বলেন, “এইদিন আমরা পাহাড়ি বন্ধু ও সহকর্মীদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। যে বাড়িতেই যাই না কেন অবশ্যই পাঁজনটা খাওয়া হবেই।”