ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের দুই ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন সাব্বির ও রহিম আহমেদের নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত হয়ে গেছে স্বেচ্ছায় আউটের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পরই। বিসিবি দুর্নীতি দমন বিভাগের (এসিইউ) তদন্তে তারা দোষ স্বীকার না করলেও শাস্তি অবধারিত হয়ে গেছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।

আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী ন্যূনতম শাস্তি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা। আর ভুল স্বীকার করলে এক বছরকে স্থগিত শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।

গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে পয়েন্ট ছেড়ে দিতে স্বেচ্ছায় ম্যাচ হারের অভিযোগ উঠেছে। নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত করতে লোয়ার অর্ডারে মিনহাজুল ও রহিম ইচ্ছা করে আউট হন। বিশেষ করে মিনহাজুলের স্টাম্পড আউটটি চাক্ষুস প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৯ এপ্রিল দশম রাউন্ডের খেলায় বিতর্কিত এ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ফিক্সিং সন্দেহে পরের দিনই তদন্তে নামেন এসিইউ কর্মকর্তারা। গতকাল দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিসিবি কার্যালয়ে মিনহাজুল, রহিমের সঙ্গে গুলশান ক্লাবের উইকেটরক্ষক আলিফ হাসান ইমনকেও ডাকা হয়েছিল।

মিনহাজুলকে দ্বিতীয় সুযোগে স্টাম্পিং করেন তিনি। প্রথম চেষ্টায় বেলসে বল লাগাতে না পারায় মিনহাজুল অপেক্ষা করেন ক্রিজের বাইরে। ফলে সময় নিয়ে আউট করার সুযোগ পান তিনি। এসিইউর এক কর্মকর্তা জানান, ভিডিও দেখিয়ে সত্য বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ফিক্সিংয়ের কুশীলবদের নাম প্রকাশ করছে না ছেলেগুলো। যদিও তাদের বলা হয়েছে শাস্তি অবধারিত। দোষ স্বীকার করলে সেটা কমবে, না করলে বাড়বে। এর পরও তারা মুখ খুলছে না।’

মূলত সন্দেহের তীর গুলশান ক্লাবের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের দিকে। এই কোচের হাতে উভয় ক্লাবের কর্তৃত্ব থাকায় প্রশ্ন উঠছে। বিসিবির এক কর্মকর্তা হতাশ কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ছেলেগুলোর ক্যারিয়ার নষ্ট হবে। অথচ পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত টিম ম্যানেজমেন্ট। তাদের শাস্তি দেওয়া না গেলে কোনো পরিবর্তন হবে না।’ এসিইউ কর্মকর্তাদের সুপারিশে ক্লাবকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড প এল কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তান জন্মের সময় ভেসে আসছিল নববর্ষের গান 

মেহেরপুর শহরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে হাসি ফুটে উঠল গোলাম মর্তুজা ও নাসরিন আক্তার দম্পতির মুখে। তাদের কোলজুড়ে এলো কন্যাসন্তান। বাংলা নববর্ষে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হলো এই দম্পতির। 

মর্তুজা ও নাসরিনের বাড়ি একই গ্রামে, মেহেরপুর সদর উপজেলার চকশ্যামনগরে। সেই কবেকার কথা। পরস্পরের সঙ্গে দেখা, কথা। এরপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাকে এক যুগ আগে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়েতে রূপ দেন তারা। বিয়ের পর কেটে যায় পাঁচটি বছর। এ সময় তাদের একটি ছেলের জন্ম হয়। এরপর থেকেই তাদের প্রত্যাশা ছিল মেয়ের। অবশেষে এবার নববর্ষের প্রথম প্রহরে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
 
শিশুটির বাবা মর্তুজা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ সবসময়ই আমার মধ্যে আলোড়ন তুলত। মনে মনে বাসনা ছিল যদি বৈশাখের প্রথম দিন আমাদের সন্তান জন্ম হয় তাহলে খুব ভালো হতো। তবে সব কিছু তো পরিকল্পনা করে হয় না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রার্থনা কবুল করায় পহেলা বৈশাখে আমাদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এতে আমাদের পরিবারের লোকজন সবাই খুব খুশি। আমরা দু’জনই কৃষক পরিবারের সন্তান। দু’জনই স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় সেই অর্থে লেখাপড়া হয়নি। তবে কৃষক পরিবারে পহেলা বৈশাখের যে আমেজ আনুষ্ঠানিকতা তা সবসময় আমার কাছে প্রিয়।’ সন্তান ও মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন তিনি।

শিশুটির মা নাসরিন বলেন, ‘জন্মের পরপরই নার্সরা আমার বোনের কোলে তুলে দেয় আমার নাড়িছেঁড়া মামণিকে। মেয়ের বাবা ও খালা খুশিতে ভরে যায়। তোয়ালে জড়ানো মেয়েকে রাঙাতে দ্রুত বাজার থেকে একটি গোলাপি রংয়ের জামা কিনে এনে গায়ে পরিয়ে দেন মেয়ের বাবা। তখন আমার মেয়েকে দেখে পরীর মতো মনে হচ্ছিল। তখনও আমার শরীর অনেকটাই অবশ। হাসপাতালের বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হলো আমাকে। পাশেই দেওয়া হলো আমার রাজকন্যাকে। শরীরে যন্ত্রণা থাকলেও মেয়েকে দেখে মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। যন্ত্রণাও যেন কমে গেল অনেকটাই।’

নাসরিন জানান, সন্তান গর্ভে থাকাকালে তাঁর কোনো শারীরিক সমস্যা ছিল না। নিয়মিত চিকিৎসক দেখাতেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন যত এগিয়ে আসছিল ততই তাঁর স্বামী বলতে লাগলেন, তাদের সন্তান ছেলে বা মেয়ে যা-ই হোক না কেন যদি পহেলা বৈশাখে হয় তাহলে সেটি হবে একটি স্মরণীয় ঘটনা। অবশেষে নববর্ষের দিন সকালেই তাঁর ব্যথা ওঠে। তাদের গ্রাম থেকে হাসপাতাল ছয় কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় বাহন নসিমনে করে তাঁকে হাসাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক বলছিলেন মায়ের স্বাস্থ্য ভালো আছে। নরমাল ডেলিভারি হয় কিনা সেই চেষ্টা করা যাক। তবে প্রথম বাচ্চা সিজারিয়ান হওয়ায় ব্যথা ওঠার ছয় ঘণ্টা পর স্বাভাবিক ডেলিভারি না হওয়ায় আবার সিজার করে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই হাসপাতালের মাইকে আজান দেওয়া হয়েছে। তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন। তিনি পরে জেনেছেন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই বারান্দায় অপেক্ষারত সন্তানের বাবা, চাচা, খালারা পরস্পরের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
 
নাসরিন বলেন, ‘আমি যেখানে সন্তান জন্ম দিয়েছি, সেখান থেকে অল্প দূরেই শহরের শহীদ সামসুজ্জোহা পার্ক। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ওই পার্কে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। সেই অনুষ্ঠান থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। মনে মনে ভাবছিলাম এমন স্মরণীয় দিনে আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে খুব ভালো হবে। আমার রাজকন্যা পৃথিবীতে এলো। হাসপাতাল থেকে আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা দিতে এলে মনে হচ্ছিল আমার কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নপূরণ হলো। আমাদের দু’জনেরই সিদ্ধান্ত মেয়েকে প্রথমে কোরআনের হাফেজ বানাব। এরপর সে স্কুলে পড়ালেখা করবে। মেয়েকে নিয়ে তেমন বড় কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তার ভাগ্যে যেটা আছে সেটাই হবে তার পেশা। তবে সে যেন মানুষর মতো মানুষ হয়, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। পহেলা বৈশাখ সন্তান জন্ম হওয়ায় আমি ও আমার স্বামী দু’জনই খুব খুশি।’

মেহেরপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও সার্জন রামানা হেলালী জুসি বলেন, ‘মর্তুজা-নাসরিন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান পহেলা বৈশাখ দুপুর আড়াইটার সময় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। এদিন পহেলা বৈশাখ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে সন্তানের মাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। শিশুটির মা ম্যাটার্নিটি হাসপাতালে তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতেন। শিশুটির বাবা তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসা করাতেন। তিনি স্ত্রীর প্রতি খুবই যত্নশীল বলে তাঁর মনে হয়েছে। মায়ের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। কোনো সমস্যা ছিল না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুটির ওজন ছিল তিন কেজি। তার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ