জবি ছাত্রদল আহ্বায়কের বিরুদ্ধে ডাক্তারকে মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগ
Published: 14th, April 2025 GMT
ডাক্তারকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে এনে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেলের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও আইসিইউ এর প্রধান ডা. মো. মোশাররফ হোসেন।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর মিডফোর্ডে মেডিলাইফ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে ঘটনাটি ঘটে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ডা.
কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক, মোজাম্মেল মামুন ডেনি, সদস্য মাইদ, সাদমান সাম্যসহ ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী মেডিলাইফ হাসপাতালে প্রবেশ করেন এবং তারপর অপারেশন থিয়েটারে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হিমেলসহ তার নেতাকর্মীরা অপারেশন থিয়েটার রুমে অপারেশন চলাকালে প্রবেশ করে ড. মোশাররফের কলার ধরে টানাটানি শুরু করেন। পরে হুমকি-ধামকি দেওয়ার একপর্যায়ে মারধর শুরু করেন।
ভুক্তভোগী ডা. মো. মোশাররফ বলেন, “মিডফোর্ডে আমার মেডিলাইফ হাসপাতালে আমি অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। তখন অপারেশন চলছিল। আসরের আজান হলে আমি নামাজ পড়ছিলাম। সালাম ফিরিয়ে দেখি হিমেলসহ ১০-১৫ জন আমার পেছনে দাঁড়ানো। আমাকে হিমেল জিজ্ঞেস করলো, ‘এই তোর নাম কি ডাক্তার মোশাররফ?’ পরিচয় তাদের বললাম, আমি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের অধ্যাপক এবং সেখানকার আইসিইউ এর প্রধান।”
তিনি বলেন, “আমি তাদের সুন্দর করে কথা বলতে বললাম। আমি তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে বলল, সে জগন্নাথের ভিপি, তার নাম হিমেল। সে আমার ফোন চাইল এবং এক পর্যায়ে হিমেল আমার ফোন কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে বলে, এখানে ব্যবসা করতে হলে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “বিল্ডিংয়ের তিন তলায় আমার একটা আইসিইউ ছিল। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমলে আমার সেই আইসিইউ দখল করে রেখেছিল। ৫ আগস্টের পর তারা পালিয়ে যায়। কমিশনার কাজী আবুল বাশারসহ আমরা একটা মিটিং করি। সেখানে ওসি ছিল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক সফু ভাই ছিল। আমরা বিচারে বসেছিলাম সমস্যা সমাধানের জন্য। সবার সাথে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঝামেলা না করে তিন তলায় তালা মারা থাকুক। বিচার করে, ফাইনাল করে আমরা তালা খুলে দেব।”
ভুক্তভোগী বলেন, “আমি যখন হিমেলকে বললাম, আমি এ বিষয়টি সফু ভাইকে জানিয়েছি। সফু ভাই বিচার করে একটা ব্যবস্থা নেবেন। তখন হিমেল বলে, ‘ওই সফু কে, সফু কে? আমি হিমেল, জবির ভিপি।’ আমি তখন তাকে সফু ভাই ও ডিসির সঙ্গে কথা বলতে বলি। কিন্তু তারা আমার ফোনটা আমাকে দেয়নি। এক পর্যায়ে তারা রুম আটকিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে। হিমেল আমাকে হুমকি দেয়, আমি আমার ওয়ারীর যে বাসায় থাকি, সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসবে। আমার হাসপাতালে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল। তারা সবাই দেখেছে।”
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমি সেখানে গিয়েছিলাম, আমার মামার বিল্ডিং ডাক্তার হারিস তালা দিয়ে রাখছে। আমি তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করেছি। সে যে মারধরের কথা বলছে, সেটা মিথ্যা। আমি কেন মারব?”
তিনি বলেন, “বিল্ডিংটি যার, সে আমার মামা। পারিবারিক সম্পর্কের কারণে আমি বলতে গিয়েছি। তারা চারজন পার্টনারে হাসপাতাল দিয়েছিল। সেখানের কিছু জিনিস ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা। সেটা আমি সমাধান করতে গিয়েছি। চাঁদা যাওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা ও বানোয়াট।”
তিনি আরো বলেন, “আমি বলে আসছি তারা বুধবার বসবে, তারপর একটা সমাধান করবে। এখানে আমার আত্মীয় বা রক্তের না হলে যেতাম না। রুমে যে তালা ঝুলিয়ে রাখছে ডাক্তার হারিজ, আমি রুমের তালাও খুলিনি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জগন ন থ ম শ ররফ ছ ত রদল পর য য় ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ের শাটার খুলে পড়ল লরির ওপর
ঢাকার অদূরে সাভার উপজলায় আশুলিয়ায় নির্মাণাধীন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি ‘পিআর ক্যাপের’ শাটার খুলে একটি লরির ওপর পড়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগরমুখী লেনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিআর ক্যাপের একটি শাটারের পাইপে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অবশ্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে পিলারের ওপরের অংশ থেকে শাটার পড়েছে, সেই পিলার টিন দিয়ে ঘেরা। কোনো গাড়ি ধাক্কা দিতে গেলে প্রথমে ঘেরা দেওয়া টিন ভেদ করতে হবে; কিন্তু টিন অক্ষত পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘রাত আটটার দিকে আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় নির্মাণাধীন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ থেকে বিকট শব্দ শুনতে পান তাঁরা। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান নবীনগরমুখী লেনে থাকা একটি লরির ওপর বড় আকৃতির লোহার খণ্ড (পিআর ক্যাপের শাটার) পড়ে আছে। লোহার অপর একটি অংশ ফুট ওভারব্রিজের ওপর পড়ে আছে। পরে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সেগুলো সরানোর চেষ্টা চালায়।’
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে পিআর ক্যাপ ঢালাই করা হয়েছিল। এখন সেটি খোলা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে খোলা শুরু হয়। পুরোটা খুলতে দুই দিন সময় লাগে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, একটি লরি ওই দিক দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরে শাটারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে শার্টারটির ওপরের কিছু অংশ খুলে লরির ওপর পড়ে আটকে যায়। এ ঘটনায় পিআর ক্যাপ, ঢালাই ও সড়কের কোনো ক্ষতি হয়নি।
ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই জায়গার (ঘটনাস্থল) পিলারটি টিন দিয়ে ঘেরা। কোনো গাড়ি ধাক্কা দিলে টিনের ঘেরা অংশটিতে আগে ধাক্কা দিতে হবে। টিন অক্ষত থাকায় গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে না।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সওগাতুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শাটার সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনার সময়ে ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এরপর থেকে সড়ক খুলে দেওয়া হলে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।