ওয়াক্ফ আইন ঘিরে মুর্শিদাবাদে সহিংসতার ঘটনায় ২০০ গ্রেপ্তার
Published: 14th, April 2025 GMT
ভারতে বিজেপি সরকারের পাস করা বিতর্কিত ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন ঘিরে এখনো অশান্ত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ। সহিংসতার ঘটনায় সেখানে এ পর্যন্ত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ এখন ওই এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার কাজ করছে। বিতর্কিত আইনটি নিয়ে সহিংসতায় ইতিমধ্যে তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্য পুলিশের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) জাভেদ শামীম বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনতে পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।
আজ সোমবার ভবানী ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম নিশ্চিত করেন, ‘সহিংসতার ঘটনায় ২০০–এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে যা ঘটেছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবাইকে বুঝতে হবে, কোনো রাজ্যে যদি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, সেই রকম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে।
মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, সুতি, সামশেরগঞ্জ এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল রোরবার থেকে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নেমেছে ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। আরও জওয়ান আনা হচ্ছে।
গত তিন দিনে এই মুর্শিদাবাদে অশান্তির জেরে গঙ্গা নদী পেরিয়ে মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে মালদহের বৈষ্ণবনগরে। সেখানে রাজ্য প্রশাসন পালিয়ে আসা মানুষজনের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছে। যৌথ বাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যেন গুজবে কান না দেয়। মুর্শিদাবাদ এবং পাশের মালদহ ও বীরভূমের সীমান্ত এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ইউসুফ পাঠানের ভূমিকায় একদল এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ইতিমধ্যে বিতর্কিত ওয়াক্ফ আইন ঘিরে সহিংসতায় মুর্শিদাবাদে তিনজন নিহত হয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের ঘটনার প্রতিবাদে এবং পশ্চিমবঙ্গের ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছে বিজেপি। গতকাল রোববার কলকাতার কলেজ স্কয়ারে দলটির প্রতিবাদ–বিক্ষোভ থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। পরে মিছিল বের হয়। মিছিল শেষ হয় কলকাতার কেন্দ্রস্থল ধর্মতলায়।
বিজেপির বিক্ষোভকারীরা মুর্শিদাবাদের ঘটনায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। বলেছেন, পুলিশ সক্রিয় থাকলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত। একই সঙ্গে রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করে বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতারা বলছেন, এই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি সহিংসতা মোকাবিলায় ব্যর্থ।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিজেপির সংসদ সদস্য জগন্নাথ সরকার দাবি তুলেছেন, এই রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, মালদহসহ সাতটি জেলায় অবিলম্বে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা বলবৎ করা হোক।
অন্যদিকে চাকরিহারাদের সংগঠন ‘যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী ঐক্য মঞ্চ’–এর অন্যতম আহ্বায়ক চিন্ময় মন্ডল গতকাল ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল আজ দুপুরে বিশেষ বাসে রাজধানী দিল্লি যাচ্ছে। তাঁরা বুধবার দিল্লির যন্তরমন্তরে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়ে অবস্থান ধর্মঘটে বসবেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করবেন। চাকরিহারা প্রতিনিধিরা বাসে করে যেসব রাজ্যের মধ্য দিয়ে দিল্লি যাবেন, সেসব রাজ্যে তাঁদের দাবিসংবলিত প্রচারপত্র বিলি করবেন।
তৃণমূল সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বাংলাকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের আইজি রাজীব কুমার রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, কোনো গুন্ডাবাজিকে বরদাশত করা হবে না। গুজবে কান দেবেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র পর স থ ত র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
৪৮তম বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসকের বিজ্ঞপ্তি শিগগিরই, দ্রুত নিয়োগ
৪৮তম বিসিএস থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে জোর দিচ্ছে সরকার। এ জন্য সরকারি কর্ম কমিশনকেও (পিএসসি) তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দ্রুতই দিয়ে দ্রুতই শেষ করার বিষয়ে সরকারে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে পিএসসি। পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনসরকারি ব্যাংকে ষষ্ঠ-নবম-দশম গ্রেডে বড় নিয়োগ, পদ ৬০৮টি২৪ এপ্রিল ২০২৫জানতে চাইলে ৪৮তম বিসিএসের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত পিএসসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের থেকে ৪৮তম বিসিএস থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র এসেছে। এখন এই নিয়োগের বিষয়ে বিধি কিছুটা সংশোধন করার দরকার আছে। সেটি সাধারণত তিন মাস সময় লাগে। অনেক মন্ত্রণালয়ের মতামতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই নিয়োগে সেটি না করে কম সময়ে নিয়োগ দিতে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনিও মত দিয়ে দিয়েছেন বলে জেনেছি। এখন সেই মত পেলে বিধি সংশোধন করে দ্রুতই ৪৮তম বিসিএস থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি জুন বা জুলাইয়ের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া আর নিয়োগ দেওয়ার কাজ শেষ করব। এ বিষয়ে সরকারের নির্দেশনাও আছে। মোটকথা, ৪৮তম বিসিএস থেকে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে জোর দিচ্ছে সরকার। সে জন্য সব কাজ দ্রুত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনমে মাসে ছুটির পর ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা১২ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে যে আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কথা উঠেছে, তা কি ৪৮তম বিসিএস হতে যাচ্ছে? অঘোষিতভাবে সেই দিকেই এগোচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। সম্প্রতি পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম প্রথম আলোকে এই কথা জানান। নতুন বিসিএস বা বিশেষ বিসিএস, যা-ই হোক, চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়ার এই বিসিএস ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের দিকেই মোড় নিচ্ছে।
চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। সম্প্রতি নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার বয়স ৩২ বছর। এটাকে দুই বছর বাড়িয়ে চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষার বয়স ৩৪ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনপিএইচডি ফেলোশিপ দিচ্ছে সরকার, গবেষকেরা মাসে পাবেন ২৫০০০২১ ঘণ্টা আগেঅধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের সময় বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে চিকিৎসকেরা গত বুধবার তাঁদের বেতন-ভাতা নিয়ে ধর্মঘট করেছিলেন। তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে বর্তমান সরকার আন্তরিক। অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই কিছু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাঁদের এসব দাবি পূরণ করার চেষ্টা করবে।
নতুন বিসিএস থেকে কেন, আগের বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকেই তো চিকিৎস নিয়োগ দ্রুত সময়ে দেওয়া যাবে—এমন প্রশ্নে পিএসসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আগের দুটি বিশেষ বিসিএসে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একটি ৩৯তম আরেকটি ৪২তম বিশেষ বিসিএস। এগুলো বেশ আগে নেওয়া হয়েছে ও আগের সরকারের আমলের। নতুনভাবে না নিলে নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে। সে জন্য নতুন বিসিএস থেকেই দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। নতুন বিসিএস হলে কোনো বিতর্ক থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।