চট্টগ্রামের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ
Published: 14th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম জেলার জন্য কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি জরুরি? অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজটিকে সবার আগে প্রাধান্য দেওয়া উচিত? এ রকম প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বিভ্রান্ত হবেন। ধন্দে ও দ্বন্দ্বে পড়ে যাবেন।
আসন্ন বৃষ্টির মৌসুমের কথা ভেবে অনেকেই জলাবদ্ধতা প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করার কথা বলবেন। কেউ কেউ বলবেন কালুরঘাট সেতুর কথা। কেউ কেউ হয়তো বলবেন অসহনীয় যানজট দূর করতে। ফুটপাত ও নদী দখলমুক্তও করতে বলবেন। নদীদূষণ বন্ধ ও পাহাড় কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়াকে অনেকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা নিশ্চয়ই বলবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি কাজ বলে মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ।
জলাবদ্ধতা, কালুরঘাট সেতুর দুই পাড়ে প্রতিদিন শত শত গাড়ির ভিড়, যানজট, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাসহ সব ভোগান্তিকে ছাপিয়ে যে কষ্ট, যে বেদনা মানুষকে কাঁদায়, মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, সেটাই লাঘবের কথা মানুষ নিশ্চয় সবার আগে বলবে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু মহামারিকবলিত এলাকার চেয়েও ভয়াবহ হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে ২৭টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৬ জন। এর আগে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৪ বছরে মারা গেছেন ২২৪ জন।
সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে এই মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ৩টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। শুধু জাঙ্গালিয়া এলাকা নয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা। ১৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক এখন এক সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ। একেকটি দুর্ঘটনা একেকটি পরিবারকে তছনছ করে দিচ্ছে। একটি দুর্ঘটনা চিরদিনের হাহাকার বয়ে আনছে পরিবারগুলোয়। পত্রিকায় পাতায় দুর্ঘটনার একটি ছবি কিংবা সংবাদ উঠছে, তার পরদিন আরেকটি নতুন দুর্ঘটনার খবরে আগের দিনের কথা সবাই ভুলে যাচ্ছে। কিন্তু যে মানুষ তার স্বজনকে হারাল, তার জীবনে নেমে আসছে ধস। সড়কে বেঘোরে প্রাণ যাওয়ার মতো করুণ নির্মম নিয়তি মেনে নেওয়া খুব কঠিন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন।
এখন এই মুহূর্তে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা। মানুষের এই মুহূর্তের দাবি মরণফাঁদ থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কিছু কারণ রয়েছে—অপ্রশস্ত সড়ক, লোনাপানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল থাকা, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক বাঁক, ওভারটেকিং, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল এবং সড়কের দুপাশে উঁচু-নিচু জায়গা। কিন্তু দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ অপ্রশস্ত সড়ক। এ জন্যই সম্প্রতি কক্সবাজার–চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এই দাবিতে সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ সভা-সমাবেশ করছে। চার লেনের সড়কের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় মানববন্ধন করেছে রাজনৈতিক দলগুলো।
কে কার আগে যাবে এমন প্রতিযোগিতায় ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন এই ম হ র ত দ র ঘটন র সবচ য় সড়ক র বলব ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বিয়ের দাবিতে এক নারীর অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষ, আহত একজনের মৃত্যু
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় বিয়ের দাবিতে এক নারীর অবস্থানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া মকবুল হোসেন (৩৮) দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের আমগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এর আগে সোমবার বিকেলে ওই এলাকায় বিয়ের দাবিতে এক নারীর অবস্থানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা জানান, হামলার সময় মকবুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
মকবুল এলাকায় বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান আয়নাল ও সদস্যসচিব জোবায়েদ হোসেন একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, আনুলিয়া গ্রামের এক নারী প্রেমের টানে আমগ্রামের ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে আসেন। গ্রামবাসী তাঁদের বিয়ের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেন। এ সময় আমগ্রামের কিছুসংখ্যক লোক এবং পার্শ্ববর্তী তরিপতপুর গ্রামের লোকজন ইসমাইল হোসেনের পক্ষ নিয়ে ওই বিয়ে বন্ধের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আমগ্রামের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব হয় এবং এক পর্যায়ে পালিয়ে যান। ওই ঘটনার জের ধরে পরের দিন রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে প্রেমিক ইসমাইল হোসেনের পক্ষের লোকজন সশস্ত্র হামলা করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন এবং বেশ কয়েকজনকে আহত করেন। আহতদের কেউ কেউ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে একজন মঙ্গলবার বিকেলে মারা যান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে উপজেলা বিএনপি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। এই হত্যাকাণ্ডে বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলের ইন্ধন বা সম্পৃক্ততা আছে কি না এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো ব্যক্তিবিশেষ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হুদা মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, একটি পরকীয়ার ঘটনা মীমাংসার জের ধরে এই সংঘর্ষ হয়েছিল। এটা একটা ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা। যে পক্ষের লোক মারা গেল, তারা বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে চেয়েছিল। অন্য পক্ষ একই প্রস্তাব দিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মামলা করার জন্য তাদের বলা হয়েছে তারা এখনো আসেনি।