শোভাযাত্রায় তরমুজের মোটিফ দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি
Published: 14th, April 2025 GMT
‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানানো হয়েছে।
পহেলা বৈশাখ (সোমবার, ১৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রায় এক টুকরা তরমুজের মোটিফ প্রদর্শন করে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানানো হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তরমুজ ফিলিস্তিনিদের কাছে প্রতিরোধ ও অধ্যাবসায়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এই মোটিফের পাশে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায় শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এবারের শোভাযাত্রায় ২৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নিয়েছেন।
এ বছর শোভাযাত্রায় প্রধান সাতটি মোটিফ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে দীর্ঘসময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের চিত্র তুলে ধরতে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ ছিল।
বাঁশ-কাঠ দিয়ে মুখাকৃতিটি তৈরির পর শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে এক দুর্বৃত্ত এটি জ্বালিয়ে দেয়। পরে কর্কশিটের ওপর পুনরায় এটি তৈরি করা হয়।
এবারের শোভাযাত্রায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদের ‘প্রতীকী মোটিফ’ রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। তবে, পরিবারের অনুরোধে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রশাসন। আবু সাঈদের প্রসারিত দুই হাত না থাকলেও আনন্দ শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে শহীদ মুগ্ধের প্রতীকী পানির বোতল। এটি দ্বারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা ও পালকি ছিল।
মাঝারি মোটিফ ছিল সাতটি। এর মধ্যে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, তুহিন পাখি, পাখা, ঘোড়া ও লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস ছিল। ছোট মোটিফগুলোর মধ্যে ছিল—বাঘের মাথা, পলো, মাছের চাই, মাথাল, লাঙল এবং মাছের ডোলা।
এবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বাংলার প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পটচিত্র। পট বা বস্ত্রের ওপর এই লোকচিত্র আঁকা হয়। চারুকলায় এবার ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলির পটচিত্র আঁকা হয়েছে।
এবারের বর্ষবরণ অন্যবারের চেয়ে একটু আলাদা। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটাই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন। ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিবাদমুক্ত বর্ষবরণ উৎসবে মাতোয়ারা দেশবাসী। এক নতুন চেতনায় বর্ষবরণ আয়োজনের প্রচেষ্টা চলছে দেশজুড়ে।
পটচিত্রে আকবর, বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ১৯৫২ ও ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, বেহুলা-লখিন্দর, বনবিবি এবং গাজীর পট আঁকা হয়েছে।
এর আগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বের হয় শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সাল থেকে এ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায় এ শোভাযাত্রা। এবার বর্ষবরণের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম বদলে রাখা হয় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ না পাওয়ার অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধীরা বলছেন, অপমানিত বোধ করেছি
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ময়মনসিংহে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ এনেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা ও মহানগরের নেতারা। আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বর্ষবরণেল আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন নিমন্ত্রণ পেয়ে অপমানিত বোধ করেছেন বলে জানান।
সকালে শোভাযাত্রা শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, বর্ষবরণের এক জমকালো অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়নি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর শাখার নেতাদের। তারা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সমন্বয় করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছে, অথচ তাদের কাউকেই বিষয়টি জানানো হয়নি। জেলা প্রশাসনের দাওয়াত না পেয়ে পরে আলাদাভাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান পালন করেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগরের সদস্যসচিব আল নূর আয়াস বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অথচ আমাদের কাউকেই জানানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জুলাই-আগস্টে রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা আমাদের বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাউকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানটি কিভাবে হবে, এটা জানতে আমি স্বপ্রণোদিতভাবে জেলা প্রশাসককে ফোন করি। তখন তিনি আমাদের অনুষ্ঠানে যেতে বলেন। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধারা এভাবে নিমন্ত্রণ পেয়ে অপমানিত বোধ করেন। তাই তারা কেউ অনুষ্ঠানে যায়নি।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, ‘বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আমরা কাউকে অফিসিয়ালি দাওয়াত দেইনি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্যসচিবকে বলা হয়েছিল, সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য। ডিসির পক্ষে সবাইকে আলাদা আলাদা নিমন্ত্রণ করা সম্ভব না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আরও অনেক অফিসার আছে। তারা সবাইকে দাওয়াত দিতে পারেন।’