ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে তার প্রতিবেশীর উপকার করা এবং তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে। এ-ক্ষেত্রে ইসলামের পরিভাষা হলো ‘ইহসান’। ইহসান একটি ব্যাপকার্থক শব্দ, যা বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিককে শামিল করে।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য রাসুল (সা.) পরস্পরকে উপহার প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকেই তার প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবে, চাই সামান্য খাবার হোক। এখানে কম-বেশি কোনো বিচার্য বিষয় নয়। বরং এতটুকু ভাববিনিময় করা, যার মাধ্যমে আন্তরিকতা প্রকাশ পায়।

আবু যর (রা.

) বর্ণনা করে বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আবু যর, তুমি কিছু রান্না করলে তাতে ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো এবং তোমার প্রতিবেশীকে উপহার দিয়ে তাকে দেখে আসো। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬২৫)

উপহার আদান-প্রদানের বিষয়টি তিনি শুধু পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং নারীদেরও আদেশ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘মুসলিম নারীগণ, তোমাদের কোনো প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীর উপহারকে তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা বকরীর ক্ষুর হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫৬৬)

আরও পড়ুনজান্নাতে আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চেয়েছেন যে নারী১৯ জানুয়ারি ২০২৫

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত, একবার তার জন্য একটি বকরি জবাই করা হলো। তিনি তার খাদেমকে বললেন, আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীর জন্য এর কিছু হাদিয়া পাঠিয়েছ? আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জিবরাঈল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর সম্পর্কে আমাকে এত বেশি বলতে থেকেছেন যে আমার ধারণা হলো, প্রতিবেশীকে হয়তো ওয়ারিশ বানিয়ে দেওয়া হবে। (আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি, হাদিস: ১০৫)

যদি কোনো ব্যক্তি অধিক প্রতিবেশীকে উপহার দিতে সক্ষম না হয়, তাহলে অন্তত তার দরজার সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীকে দেবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল, আমার তো দুজন প্রতিবেশী। দুজনের কাকে উপহার দেব?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘যে দরজার দিক থেকে তোমার বেশি কাছের।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,২৫৯)

ইবনে জুবায়ের (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায়, আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি, হাদিস: ১১২)

আরও পড়ুনদুঃস্থ-অভাবীদের অভাব মোচনে দান-সদকা নিয়ে এগিয়ে আসা একটি গুণ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমাদের ওপর এমন একটি সময় অতিবাহিত হয়েছে, যখন অর্থকড়িকে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিত না। আর এখন অর্থ আমাদের অনেকের কাছে তার মুসলিম ভাইয়ের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে গেছে। আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন অনেক প্রতিবেশী তার কাছের প্রতিবেশী সম্পর্কে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমার সামনে সে আমার জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছে। তার উপকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি, হাদিস: ১১১)

এখানে উপকার থেকে বঞ্চিত করার অর্থ হলো, প্রয়োজনের মুহূর্তে প্রতিবেশীকে ধার চাইলে তাকে নিত্য ব্যবহার্য বস্তু না দেওয়া। কোরআনে এ-ধরনের কাজের নিন্দা করা হয়েছে। (সুরা মাঊন)

আরও পড়ুনঅনাথ ও দরিদ্রের প্রতি কোমলতা ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপহ র দ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ আইনের লঙ্ঘন, বলল কুয়েট কর্তৃপক্ষ

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তালা ভেঙে হলে প্রবেশের ঘটনাকে স্পষ্টত বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার রাতে কুয়েট কর্তৃপক্ষের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। 

কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহেদুজ্জামান শেখ এর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের বিভ্রান্তিকর নামের তালিকা ও সংখ্যা দেখা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। তাই এসব তালিকা দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সব শিক্ষার্থীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পরবর্তী সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি এই তদন্ত প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার মাধ্যমে শাস্তিবিষয়ক সিদ্ধান্ত নেবে।

সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও গুটিকয়েক শিক্ষার্থী তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছে, যা স্পষ্টত বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আইনের লঙ্ঘন। ওই শিক্ষার্থীদের দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান রেখে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখার জন্য বলা হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলা যাচ্ছে যে, তারা যেন কোনো ধরণের অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধি ও শৃঙ্খলা যথাযথভাবে অনুসরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে সকলের সহযোগিতা কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ