সবাই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুগম হবেই বলে মন্তব্য করেছেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, আমরা এক আলোকিত দেশ ও সমাজের স্বপ্ন দেখি, যে দেশের মানুষ সর্বজনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম-জাতি-বিত্তের বিভাজন ভাঙবে, গড়বে উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেছেন, মুক্তির অন্বেষায়, দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় অর্ধশতকবর্ষ পূর্বে, বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ওই যাত্রাপথের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে, ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীতসহ সব মাধ্যম এবং বিভিন্ন স্থাপনায়। বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামে অনন্য মাত্রা যুক্ত করেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব, নতুন বাংলা বছরকে বরণ করার আয়োজন।

ছায়ানটের সভাপতি বলেন, বাঙালির মানবতার মুক্তিসাধনা স্বাধীন দেশেও প্রত্যাশা এবং আশাভঙ্গের নানান চড়াই উতরাইয়ের দোলাচল প্রত্যক্ষ করেছে। নববর্ষের ঊষালগ্নে, আজ চোখ ফেলি হিসাব-নিকাশের হালখাতায়। একদিকে মুক্তির জন-আকাঙ্ক্ষা অর্জনের প্রত্যাশা, অন্যদিকে পীড়াদায়ক বিদ্বেষ-বিভক্তি, নারী-শিশুর অমানবিক মর্যাদাহানি ও অপরিণামদর্শী অসহিষ্ণুতা। সব অতৃপ্তি প্রতিবিধানের দায় রাষ্ট্রের। তবে সমাজকেও সে দায় নিতে হয় বৈকি। সবাই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে, মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুগম হবেই।

আজ সোমবার সূর্যোদয়ের পর পর শুরু হয় বর্ষবরণের ছায়ানটের অনুষ্ঠান। এবারে অনুষ্ঠানের মূলভাব ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। ছায়ানটের ৫৮তম এই অনুষ্ঠান সাজানো হয় নতুন আলো, প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসার গান ও আত্মবোধনের জাগরণের সুরবাণী দিয়ে।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শেষের আগমুহূর্তে শিল্পী ও দর্শনার্থীরা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে ছায়ানটের শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ হয়।

নীরবতা পালনের আগে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘ফিলিস্তিনে, গাজায় ভয়াবহ মানবতার বিপর্যয় এবং গণহত্যায়, বিশেষ করে শিশু হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনবাসী আপন ভূমি রক্ষায় যে সংগ্রাম করছেন, তার প্রতি আমরা সংহতি জানাই। ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে নিহত মানুষদের স্মরণে সবাইকে এক মিনিট নীরবতা পালনের অনুরোধ করছি।’

এবার ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। আলো, প্রকৃতি, মানুষ ও দেশপ্রেমের গান দিয়ে সাজানো হয় আজকের অনুষ্ঠান।

বাংলা বর্ষবরণের এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও এই অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।

দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংস্থা ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এবার ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে গত তিন মাস ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে চলে গানের মহড়া। আর ৮ এপ্রিল রমনার বটমূলে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ন র ছ য় নট র

এছাড়াও পড়ুন:

বর্ষবরণ শোভাযাত্রায় ডিসি-এসপির সঙ্গে মামলার আসামি আ.লীগ নেতা

কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এক আওয়ামী লীগ নেতাকে। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে বের হওয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত শোভাযাত্রায় ব্যানারের সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।

এজাহারভুক্ত আসামির নাম মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর দায়ের হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তিনি। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন মোকারম হোসেন।

আরো পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে ডেকে নিয়ে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ১

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ মামলার চার্জশিট দিল পুলিশ

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, “আমি তাকে চিনি না। খেয়ালও করিনি। তিনি মামলার আসামি হলে আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলব।”

 

জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখতে পেয়ে রাজনৈতিক ও সাধারণ মহলে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। শোভাযাত্রায় তার উপস্থিতির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন নেটিজেনরা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নানা আয়োজন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। মজমপুর গেটসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে বনবীথিতে গিয়ে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যানার ধরে সামনের সারিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেমকেও দেখা যায়। 

মোকারম হোসেন গত ৫ আগস্ট কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তামজিদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত ৪২ নম্বর আসামি। ওই মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও আরো ৪০ থেকে ৪৫ জনকে নাম না আসামি করা হয়। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন ভুক্তভোগী বড় ভাই জিলহজ হোসেন।

জানতে চাইলে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম প্রথমে মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমি আজ সকালে জেলা প্রশাসনের বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলাম।” মামলার প্রমাণ রয়েছে জানালে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা আছে বলে তিনি জানান।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, “এমনটা কেন হলো। ব্যাপারটি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।”

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, “আমি কিছু জানি না। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেত্রকোনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যুবদলের হামলা, মূল অভিযুক্ত বললেন, ‘আমাদের ভুল হয়ে গেছে’
  • বাচসাস’র বর্ষবরণ ও কার্যালয় উদ্বোধন
  • দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বর্ষবরণ
  • বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগ
  • বর্ষবরণ শোভাযাত্রায় ডিসি-এসপির সঙ্গে মামলার আসামি আ.লীগ নেতা
  • উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ গড়ার আহ্বান
  • উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ গড়ার আহ্বান ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে
  • ‘আবহমান সংস্কৃতির যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে ভবিষ্যৎ সুগম হবেই’
  • আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা ধারণ করলে মুক্তির ভবিষ্যৎ সুগম হবেই: ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি