ক্ষণে ক্ষণে ডেকে চলছে বিজু পেক্কো (বিজু পাখি)। বন-পাহাড়ে ফুটেছে বিজু ফুল। পাখির কলতান আর রঙিন ফুলের সৌরভ—এতেই উৎসবের আনন্দধ্বনি ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে পাহাড়ে। এই জনপদে এখন চলছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বর্ষবরণ উদ্‌যাপন। ধর্মীয় রীতি ও প্রথা পালনের পাশাপাশি আনন্দ-উদ্‌যাপনেও আয়োজনের কোনো কমতি নেই। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসব এখন ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের ‘বৈসাবি’ হয়েছে আগের চেয়ে আরও বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য। উৎসবে যুক্ত হয়েছে নানা আয়োজন। সময়ের পাটাতনে দাঁড়িয়ে তাই প্রশ্ন জাগে, তাহলে ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগে কেমন ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বর্ষবরণ ও বিদায় উদ্‌যাপন? তখন কীভাবে উদ্‌যাপন করা হতো মারমাদের সাংগ্রাইং, ম্রোদের সাংক্রান, ত্রিপুরাদের বৈসু, চাকমাদের বিজুসহ অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসব। তখনকার বর্ষবরণের আয়োজন জানার আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে অনেকের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী কী পরিবর্তন এসেছে? আগের সে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, নাকি অনুষ্ঠাননির্ভর হয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর এই উৎসব? এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ ও বিদায় আয়োজনের বিবর্তন।

রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি—দেশের এই তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। তাদের মধ্যে আটটি জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব হচ্ছে ‘বৈসাবি’। মূলত ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইয়ের সঙ্গে প্রায় মিল থাকা ম্রোদের চাংক্রান, খেয়াংদের সাংলান, খুমিদের চাংক্রাই ও চাকদের সাংগ্রাই এবং চাকমাদের বিজু ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসবের আদ্যক্ষর থেকে ‘বৈসাবি’ নামের শব্দটি নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বম, পাংখোয়া ও লুসাইরা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপন করেন।

আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে উৎসব অর্থে বৈসাবি শব্দটি ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করেছে। এর আগে বিজু, বিষু, বৈসু, সাংগ্রাইং, সাংক্রানসহ আরও বিভিন্ন নামে উৎসব হয়েছে। উৎসবটি সবার অভিন্ন, শুধু নাম ভিন্ন। তবে বেশ কিছু বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে বৈসাবি শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, বৈসাবি নামে পাহাড়ে কোনো উৎসব নেই। অন্যরা বলছেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রয়োজনেই বৈসাবি শব্দটি এসেছে।

বৈসাবি নাম আসার সঙ্গে লোকজ উৎসবটির দৃশ্যমান নাগরিক ছোঁয়াও এসেছে। তখন থেকে শোভাযাত্রা, ফুল ভাসানো, মৈত্রী পানিবর্ষণ, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়াসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। অবশ্য বান্দরবানে ১৯৭০–এর দশকের মাঝামাঝিতে পাশের দেশ মিয়ানমারের অনুকরণে মৈত্রী পানিবর্ষণ শুরু হয়েছিল। অভিন্ন নাম বৈসাবি করার আগে উৎসবের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।

প্রবীণদের গোসল করানোর আয়োজন। গতকাল খাগড়াছড়ির আপার পেরাছড়া এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উৎসব র ই উৎসব

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দিদের অন্যরকম বর্ষবরণ 

চার দেয়ালের ভেতরে বন্দিরা বর্ষবরণের আনন্দ থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য বর্ষবরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিল রাঙামাটি জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে কারাগারের ভেতরে পাহাড়ি নৃত্যে গান গেয়ে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব পালন করেন তারা। 

এরপর তাদের পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ এবং পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পিঠা খেতে দেওয়া হয়। এ সময় জেল সুপার মো. দিদারুল আলম, জেলার মো. সাইমুর উপস্থিত ছিলেন। 

কারাবন্দিদের দুপুরে পোলাও, মুরগীর মাংস, ডাল, সালাদ, পান, সুপারি, মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। রাতেও উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।

আরো পড়ুন:

বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

টিএসসিতে ‘ভালো কাজের হালখাতায়’ মনের যত কথা

রাঙামাটি জেল সুপার মো. দিদারুল আলম জানান, পরিবার থেকে দুরে থাকা বন্দিরা যাতে বর্ষবরণের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশে এই আনন্দ আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু বর্ষবরণ পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী উৎসব, তাই কারাগারে বন্দি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী গানে নেচে এই উৎসব উদযাপন করে।
 

ঢাকা/শংকর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষম্যহীন নতুন দেশ গড়ে তুলা সম্ভব হবে’
  • যশোরে নববর্ষকে বরণ, শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ভাস্কর শামীমকে সংবর্ধনা
  • কারাবন্দিদের অন্যরকম বর্ষবরণ 
  • ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • কেউ আসছেন না জেনে, কেউ–বা বর্ষবরণের স্থানটি দেখতে
  • এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • ‘উৎসবের উচ্ছ্বাসে আজ মেতেছে সারা দেশ’
  • রাঙামাটিতে ঘরে ঘরে পাঁজন আপ্যায়ন
  • অনেক আয়োজন বন্ধে ম্লান বর্ষবরণ উৎসব