আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা ধারণ করলে মুক্তির ভবিষ্যৎ সুগম হবেই: ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি
Published: 14th, April 2025 GMT
দেশের মানুষ সর্বজনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম-জাতি-বিত্তের বিভাজন ভাঙবে। গড়বে উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ। এমন আলোকিত দেশ ও সমাজের স্বপ্ন দেখেন বলে উল্লেখ করেছেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, সবাই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুগম হবেই।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন সারওয়ার আলী।
আজ ভোর সোয়া ছয়টায় রমনা বটমূলে শিল্পী সুপ্রিয়া দাশের কণ্ঠে ভৈরবী রাগালাপের মাধ্যমে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় সকাল সাড়ে আটটার দিকে।
অনুষ্ঠান শেষ করার আগে ‘নববর্ষের কথন’ বিষয়ে বক্তব্য দেন ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, মুক্তির অন্বেষায়, দীর্ঘ বন্ধুর পথপরিক্রমায় অর্ধশতবর্ষ পূর্বে, বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এই যাত্রাপথের নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে বাঙালির শিল্প, সাহিত্য, সংগীতসহ সব মাধ্যম ও বিভিন্ন স্থাপনায়। বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের সংগ্রামে অনন্য মাত্রা যুক্ত করেছে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব, নতুন বাংলা বছরকে বরণ করার আয়োজন।
সারওয়ার আলী বলেন, ‘আমরা এক আলোকিত দেশ ও সমাজের স্বপ্ন দেখি, যে দেশের মানুষ সর্বজনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম-জাতি-বিত্তের বিভাজন ভাঙবে, গড়বে উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ।’
বাঙালির মানবতার মুক্তির সাধনা স্বাধীন আপন দেশেও প্রত্যাশা ও আশাভঙ্গের নানা চড়াই-উতরাইয়ের দোলাচল প্রত্যক্ষ করেছে বলে উল্লেখ করেন সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, নববর্ষের উষালগ্নে, আজ চোখ ফেলি হিসাব-নিকাশের হালখাতায়। একদিকে মুক্তির জন-আকাঙ্ক্ষা অর্জনের প্রত্যাশা, অন্যদিকে পীড়াদায়ক বিদ্বেষ-বিভক্তি, নারী-শিশুর অমানবিক মর্যাদাহানি ও অপরিণামদর্শী অসহিষ্ণুতা। সব অতৃপ্তি প্রতিবিধানের দায় রাষ্ট্রের, তবে সমাজকেও সে দায় নিতে হয় বৈকি। সবাই ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, মুক্তচিন্তার নির্ভয় প্রকাশ, আবহমান সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা হৃদয়ে ধারণ করলে মুক্তির আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুগম হবেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ য় নট র
এছাড়াও পড়ুন:
নানা আয়োজনে চিরায়ত ঐতিহ্য তুলে ধরে বর্ষবরণ
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণ করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সোমবার (১৪ এপ্রিল) আনন্দ শোভাযাত্রা, মেলা, গ্রামীণ খেলাধূলা, নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কয়েক স্থানে গরুর গাড়ির শোভাযাত্রা, ঘুরে ঘুরে মানুষকে পান্তা খাওয়ানোর মতো ব্যতিক্রমী আয়োজনও করা হয়। এ সব আয়োজন বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। এতে ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষ সব শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়।
চট্টগ্রাম
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বর্ণিল নানা আয়োজনে বর্ষবরণ করা হয়। সকাল ৮টায় জাতীয় সঙ্গীত শেষ আনন্দ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। এরপর ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…’ গানে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা শিশু একাডেমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাদ্যের তালে তালে গ্রাম-বাংলার লোকজ উপকরণ পালকি, পুতুল, রঙিন প্ল্যাকার্ড আনন্দ শোভাযাত্রায় অনন্য মাত্রা যোগ করে। সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট রকমারি জীবজন্তু ও পাখির অবয়বের মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে। এতে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষজন অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি নগরীর চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে আলমাস, কাজীর দেউড়ি মোড়, এসএস খালেদ রোড, প্রেস ক্লাব থেকে ইউটার্ন হয়ে সার্সন রোড থেকে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়।
পিরোজপুর
সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুসঙ্গ নিয়ে শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসে শেষ হয়ে।
পিরোজপুরের জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। পুলিশ সুপার খাঁন মোহাম্মদ আবু নাসের, কলেজ সমূহের অধ্যক্ষ-শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রা শেষে সরকার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৭ দিনের বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় নাগরদোলা, টয়ট্রেন, বিভিন্ন রাইডসসহ শতাধিক স্টল রয়েছে।
এছাড়া পিরোজপুর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ও সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু নেতৃত্ব জেলা বিএনপি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্র শেষে তারা জেলার টাউন ক্লাবে পান্তা ও ইলিশ পরিবেশন করে।
জেলার সব উপজেলায় আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া কাউখালী উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে সাঁতার প্রতিযোগিতা, নাজিরপুর উপজেলায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ
প্রতি বছরের মতো ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বৈশাখী মেলা বসেছে। মেলায় মাটির তৈরি বাহারি জিনিসপত্র, মুড়ি-মুড়কিসহ নানা পণ্যের সমাহার ঘটেছে।
বৈশাখী সাজে সেজে সকাল থেকে নানা বয়সী মানুষ এই মেলায় ভিড় করছে। তবে তীব্র গরমে মেলা তেমন জমেনি। মেলার পাশেই চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নগরীর মহাবিদ্যালয় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে নতুন বাজার টাউন হল মোড় ঘুরে জয়নুল আবেদীন পার্ক বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ। শোভাযাত্রায় শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা রাখা হয়। এছাড়াও শোভাযাত্রা বায়স্কোপ, শাপলা, দোয়েল, মাছ স্থান পায়।
কেরানীগঞ্জ
সকালে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়ার কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় অফিস প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়। এতে এলাকা বর্ণিল ব্যানার, ফেস্টুন, মুখোশ, ঢাক-ঢোল আর বৈশাখী গান-বাজনায় মুখর ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাংলো প্রাঙ্গণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে স্থানীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা নৃত্য, গান, কবিতা ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন।
এছাড়া দিনব্যাপী বিটি মাঠে বৈশাখী মেলা বসে। এতে হস্তশিল্প, মাটির পাত্র, বাঁশ ও কাঁসার তৈরি সামগ্রী, গ্রামীণ খাবারের স্টল, খেলাধুলা, পুতুল নাচসহ নানা ধরনের বিনোদনের আয়োজন ছিল। বৈশাখী মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
ফেনী
সকালে ফেনী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন জেল রোডের পিটিআই স্কুল মাঠে শেষ হয়। সেখানে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সাত দিনব্যাপী লোকজ ও সাংস্কৃতিক মেলার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা রঙিন সাজে সেজে মুখোশ পরে অংশ নেয়। তবে সেখানে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে মক্তবের তৈরি প্রতিকৃতি, যেখানে শিশু-কিশোরেরা আরবিতে লেখা স্লেট হাতে তুলে ধরে।
ফেনী সাংস্কৃতিক পরিষদের এসব উপস্থাপনা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সংগঠনের সদস্য ওসমান গনি রাসেল বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছি লোকজ ঐতিহ্যের পাশাপাশি ইসলামী সংস্কৃতির এক ঝলক তুলে ধরতে। দর্শকদের যে সাড়া পেয়েছি, তাতে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’’
দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফেনী জেলা বিএনপির উদ্যোগে বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা ও পান্তা-ইলিশ ভোজ। প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ
সকাল ৮টায় শহীদ মিনার চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নববর্ষের শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল।
শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুরাতন জেলা প্রশাসক আদালত চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা পরে পুরাতন জেলা প্রশাসন আদালত চত্বরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
জেলা বিএনপি পহেলা বৈশাখে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, লাঠিখেলা, দাড়িয়াবান্ধা, ঝাঁপান খেলা (সাপ খেলা) সহ বর্ণাঢ্য আয়োজন করে। জেলা বিএনপির সভাপতি আইনজীবী এমএ মজিদ বেলা সাড়ে ১০টায় লাঠি খেলার উদ্বোধন করেন। শহরের ওয়াজির আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ লাঠিখেলা প্রদর্শিত হয়।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে জেলা বিএনপি। শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার ঐহিত্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। কেউ কেউ প্রতীকী জেলে, কামার-কুমোর, বাউল-গায়েন রুপে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ঝিনাইদহ শহর ঢাক, ঢোল, কাঁসর, সানাইয়ের সুরে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গ্রামীণ খেলাধুলা, পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়।
পঞ্চগড়
সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পঞ্চগড় সরকারি অডিডিয়াম চত্বরে এসে শেষ হয়।
পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে বেলুন উড়িয়ে বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী। মেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬টি স্টল অংশ নিয়েছে। পরে অডিটোরিয়াম চত্বরের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, কাবাডি খেলা, মোরগ লড়াই খেলার আয়োজন করা হয়।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে আনন্দ শোভাযাত্রা, বর্ষবরণ এবং তিনদিন ব্যাপী লোকজ মেলা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্মীপুরে উদযাপন করা হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা কালেক্টর ভবন প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। পরে কালেক্টর ভবন প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ ও তিনদিন ব্যাপী লোকজ মেলার উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার।
এদিকে, ১০টার দিকে জেলা বিএনপি’র আয়োজনে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী শোভাযাত্রা বের করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উত্তর তেমুহনী গিয়ে শেষ হয়। এতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক এড. হাছিবুর রহমানসহ দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সকালে ঢাক-ঢলের তালে তালে কালেক্টরেট চত্বর থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও একইস্থানে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। পরে বৈশাখ উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে দিনব্যাপী ৬১টি স্টল নিয়ে লোকজ মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
শেরপুর
সকালে শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি উদ্বোধন করেন শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান। শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে শেষ করা হয়। পরে সেখানে নববর্ষের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সবশেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
শোভাযাত্রায় বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পালকিসহ বাঙালির নানা ঢংয়ের পোশাক পরে এবং নানা রঙের ব্যানার-ফ্যাস্টুন বহন করা হয়।
সকাল ১০ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে তিন দিনব্যাপী গ্রমীণ লোকজ মেলা উদ্বোধন করা হয়। মেলায় লোকজ আসবাবপত্র, কারুশিল্পের পোশাক, শিশুদের খেলনা ও বিভিন্ন খাবারের স্টল প্রদর্শন করা হয়েছে।
জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, শেরপুর সরকারি মডেল কলেজ সহ জেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখের নানা অনুষ্ঠানমালা, খেলাধুলা ও গ্রামীণ মেলা আয়োজন করা হয়।
রাঙামাটি
সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেটি শহরের পৌরসভা চত্বর শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক উৎসব পালনে এখন শহর, নগর আর পাহাড়ি পল্লীগুলো ব্যস্ত রয়েছে। বাংলা বর্ষের বিদায় ও বরণ উপলক্ষে চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে উৎসব পালন করা হয়।
পাবনা
নববর্ষ উপলক্ষে পাবনার চাটমোহরে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে পান্তা খাওয়ালেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সকালে চাটমোহর বালুচর খেলার মাঠের পূর্বপাশের বটতলায় পান্তা খাওয়ানোর উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় চাটমোহর পৌর বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান আরশেদ, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাইজুল সহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা সেখান থেকে চাটমোহর উপজেলা পরিষদ চত্বর সহ পৌর সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে পান্তা খাওয়ান। পান্তার সঙ্গে ছিল আলু ভর্তা, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ।
এ বিষয়ে চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাইজুল বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের উৎসব। নববর্ষের দিনে পান্তা ইলিশের আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। যা অনেক সাধারণ মানুষ খেতে পান না। আমরা একদম গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যেমন তারা চিরাচরিতভাবে পান্তা পেঁয়াজ কাঁচামরিচ খান সেই আয়োজনটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেরন। যাতে সবাই খেতে পারেন।
রংপুর
সকাল ১০টায় জিলা স্কুল বটমূল থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী। জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
দিবসটি ঘিরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি, টাউন হল, কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক উপস্থাপনার মাধ্যমে বৈশাখের চিরায়ত রূপ তুলে ধরা হয় নানা আয়োজনে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশিত হয় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশও।
মুন্সীগঞ্জ
সকাল সোয়া ৮টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে লোকজ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরে ১৪ টি স্টল বসেছে।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে জাতীয় সঙ্গীত, পহেলা বৈশাখের গান, আনন্দ শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করেছে জেলা প্রশাসন। সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জনসেবা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক।
জেলা প্রশাসক শরীফা হক টাঙ্গাইল জেলাবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, নতুন বছরে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
নড়াইল
সকাল সাড়ে ৬টায় বর্ষবরণ উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ চত্ত্বরে প্রভাতী সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিবসের নানা কর্মসূচির শুভ সূচনা হয়।
সকাল সাড়ে ৭টায় সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ চত্ত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পকলা একাডেমি চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরষ্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়।
বাগেরহাট
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাগেরহাটে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের ষ্টেডিয়াম থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম মিলনায়তন প্রাঙ্গনে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ব্যানার প্লাকার্ড নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করেন।
শোভাযাত্রা শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে সাত দিনের বৈশাখী মেলার উদ্ধোধন করেন জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান।
ঢাকা/বকুল