বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয় ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে ফের চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
এবারের পহেলা বৈশাখের আবহ অন্যবারের চেয়ে একটু আলাদা। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এটাই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদযাপন। নতুন চেতনায় বর্ষবরণ আয়োজনের প্রচেষ্টা চলছে দেশজুড়ে। বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি বদলে নতুন নাম হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা থাকছে দেশজুড়ে। ঢাকায় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ছাড়াও সারাদেশে থাকবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন। গ্রাম-শহরে বৈশাখী মেলা, যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা ছাড়াও থাকবে ঐতিহ্যবাহী খাবার পান্তা-ইলিশ। সেই সঙ্গে থাকবে হালখাতার ঐতিহ্য। ব্যবসায়ীরা লাল খাতা ও নতুন ক্যালেন্ডার বিতরণ করবেন, সঙ্গে থাকবে মিষ্টান্ন বিতরণ।
মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ সালে তার শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলা সাল প্রবর্তন করেন। সেই সময় রাজস্ব আদায় হতো হিজরি চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী, যা ছিল পুরোপুরি চন্দ্রনির্ভর। কিন্তু কৃষিভিত্তিক সমাজে এটি ছিল অনুপযোগী। কারণ, কৃষির মৌসুম অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ইত্যাদি কৃষি মৌসুম ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিশ্র সৌর ও চন্দ্র পদ্ধতির ভিত্তিতে তৈরি হয় ‘তারিখ-ই-ইলাহি’, যা-ই পরে পরিচিতি পায় বাংলা সাল নামে। এই পঞ্জিকা প্রস্তুত করেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী।
যদিও শুরুতে নববর্ষ ছিল প্রশাসনিক কর আদায়ের দিন, ধীরে ধীরে এটি রূপ নেয় একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে। গ্রামবাংলার মানুষ একে একত্রে পালন করতে শুরু করে। রাজস্ব পরিশোধের পর আয়োজিত হতো ‘হালখাতা’, যেখানে ব্যবসায়ীরা পুরোনো হিসাব শেষ করে মিষ্টিমুখ করতেন নতুন খাতা খুলে।
আদিবাসীরা নববর্ষ ঘিরে নিজেদের মতো করে স্বাজাত্যবোধ বজায় রেখে উৎসবের রং ছড়ান। পাবর্ত্য তিন জেলায় আদিবাসীরা উদযাপন করে ঐতিহ্যবাহী উৎসব বৈসাবি। এর নামকরণ হয়েছে বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজু এই শব্দগুলোর আদ্যক্ষর থেকে। এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক বলে অভিহিত করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল নববর ষ আনন দ শ ভ য ত র নববর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
পুরনো ঐতিহ্যে ফিরেছে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
কেউ সেজেছে বর, কেউ কনে, আবার কেউ রাখালী রূপে। কেউ চেপেছে ঘোড়ার গাড়িতে, কেউবা উঠেছে গরুর গাড়িতে। পুরো ক্যাম্পাস এসেছে নতুন আমেজ। বাঙালির ঐতিহ্য বৈশাখ যেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফিরে এসেছে এক নতুন ছন্দে।
এভাবেই সোমবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে বেরোবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ৯টায় প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. শওকাত আলী।
বাঁশি, বৈশাখী গানের সুরে শোভাযাত্রা ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে থামে একাডেমিক ভবনের সামনে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। বাঙালির লোকজ সংস্কৃতি, পোশাক আর আবহ পুরো শোভাযাত্রায় মেলে ধরে তার আপন রূপ।
শোভাযাত্রা শেষে একাডেমিক ভবনের সামনে বৈশাখী মেলায় সাজানো স্টল ঘুরে দেখেন উপাচার্য। সবার সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য আর আত্মপরিচয়ের উৎসব। বাঙালির ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে ধারণ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে নববর্ষ উদযাপন করছে, তা প্রশংসনীয়। আমাদের উচিত এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে একটি মানবিক, সাংস্কৃতিক বাংলাদেশ গড়া।”
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান, নৃত্য আর আবৃত্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারেরও।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজিন করা হয়েছিল। আগের দিন রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল ঘুড়ি উৎসব।
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী