দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।

উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র‍্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।

হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷

তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।

ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।

সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।

বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷ 

ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বরপক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

রাঙামাটিতে গুর্খা সম্মেলন ও গুণীজন সম্মাননা

বিষু উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাঙামাটিতে বসবাসরত গুর্খা জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গুর্খা সম্মেলন, গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে তবলছড়িস্থ স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ।

রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মঞ্জু রাণী গুর্খার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন, রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বরুণ প্রসাদ নেওয়ার, রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মনোজ বাহাদুর গুর্খা, দীলিপ বাহাদুর রায়, পংকজ বাহাদুর গুর্খা, ত্রিদীপ বাহাদুর রায় প্রমুখ।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, আদিকাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নেপালী বংশোদ্ভূত গুর্খা সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে চলার পথ দেখাতে হবে। যাতে করে এই নতুন প্রজন্ম গুর্খা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে পারে। আর এই উৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতি-ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সৌহাদ্য উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

আরো পড়ুন:

অভ্যুত্থানে আহতদের সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ

সাজেকে ঢল নেমেছে পর্যটকদের, খালি নেই রিসোর্ট 

আলোচনা সভা শেষে গুর্খা জনগোষ্ঠীর ছয় নেতাকে গুণীজন সংবর্ধনার ক্রেস্ট দেওয়া হয়। পরে গুর্খা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরে নিজের ভাষায় সঙ্গীত ও মনোমুগ্ধকর নাচ পরিবেশন করেন। 

ঢাকা/শংকর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাঙামাটিতে গুর্খা সম্মেলন ও গুণীজন সম্মাননা
  • জাহাঙ্গীরনগরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মানববন্ধন
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথে মাস্টার্স, ক্লাস শুক্রবার
  • নাসিরনগরের শুঁটকি মেলা: আগে বেচাকেনা ছিল বিনিময় প্রথায়, এখন নগদ টাকায়
  • নববর্ষে জাবিতে গাজার মানচিত্র এঁকে গণহত্যার অভিনব প্রতিবাদ 
  • বর্ষবরণের রঙে রঙিন সারা দেশ, জেলায় জেলায় যত আয়োজন
  • ব্যাঙের বিয়ে, লাঠিখেলাসহ নানা আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তি উদ্‌যাপন
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কক্ষে তালা
  • সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক