চীন ও ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া করে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা পূরণের প্রচেষ্টা এই অঞ্চলের জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ভারসাম্য রক্ষার কৌশলকেই তুলে ধরে।  

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২৬-২৯ মার্চ চীনে চার দিনের এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে যান। লক্ষণীয় যে এ বছর বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে।  

প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য প্রথমে চীনকেই বেছে নিয়েছেন। তিনি নয়াদিল্লি সফরের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া পাননি। ১৯৭৫ সাল থেকে চীন বাংলাদেশকে ৭.

৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা তাকে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম ঋণদাতা বানিয়েছে।

এই সফর ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
চার দিনের এই সফরে বাংলাদেশ ও চীন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং বিনিয়োগ, অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়বিষয়ক আটটি সমঝোতা স্মারক। উভয় দেশ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) জোরদার ও চীন-বাংলাদেশ ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্ব এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করে।

চীনের সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা বাংলাদেশের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে।

পানিসম্পদে বেইজিং-ঢাকা সহযোগিতা

ইউনূসের চীন সফরে বাংলাদেশের পানিসম্পদ খাত ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর একটি। এই খাত নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেশের বার্ষিক ভূপৃষ্ঠস্থ পানির প্রবাহ প্রায় ১ হাজার ২১০ ঘনকিলোমিটার আর ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণ ২৮ থেকে ৬৫ ঘন কিলোমিটারের মধ্যে। পানি ব্যবহৃত হয় ৮৬ শতাংশ কৃষির জন্য, ১২ শতাংশ গৃহস্থালির জন্য এবং মাত্র ২ শতাংশ শিল্পক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ তার উজানের প্রতিবেশীদের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। কারণ, দেশের ৯০ শতাংশের বেশি নদী ভারত, মিয়ানমার ও চীন থেকে প্রবাহিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত আবহাওয়াজনিত কারণে দেশের পানিব্যবস্থা আরও চাপে পড়েছে। দেশের নিচু ভূপ্রকৃতি, বিস্তৃত বন্যা-ভূমি এবং দীর্ঘ উপকূলরেখা বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।  

তিব্বতে ইয়ারলুং জাংবো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহয গ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত ছাড়লেন ২৭২ পাকিস্তানি, আজ শেষ দিনে ছাড়বেন আরও কয়েক শ

গত দুই দিনে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ২৭২ জন পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছেন। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার সময়সীমার শেষ দিনে আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) আরও কয়েক শ পাকিস্তানি ভারত ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১২ ধরনের স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারী পাকিস্তানের নাগরিকদের আজকের মধ্যেই ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। একজন সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

একই সময়ে পাঞ্জাবের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ৬২৯ জন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তান থেকে নিজ দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ জন কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা।

আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে আবারও গোলাগুলি৬ ঘণ্টা আগে

২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারতের অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত। পাকিস্তান সরকার ভারতের এই দাবি অস্বীকার করেছে। এরপর পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নোটিশ জারি করে নয়াদিল্লি, যা ‘লিভ ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত।

লিভ ইন্ডিয়া নোটিশে কয়েকটি ধরন রয়েছে। এর মধ্যে সার্ক ভিসাধারী পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ছাড়ার সময়সীমা ছিল ২৬ এপ্রিল। চিকিৎসা ভিসাধারীদের ভারত ছাড়তে হবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে।

আজকের মধ্যে ১২ ধরনের ভিসাধারীকে ভারত ছাড়তে হবে। তাঁরা সবাই স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারী। এ ধরনগুলো হলো আগমনী ভিসা বা কোনো দেশে আসার পর যে ভিসা দেওয়া হয়, ব্যবসা, চলচ্চিত্র, সাংবাদিক, ট্রানজিট, সম্মেলন, পর্বতারোহণ, শিক্ষার্থী, ভিজিটর, দলবদ্ধ পর্যটক, তীর্থযাত্রী ও দলবদ্ধ তীর্থযাত্রী ভিসা।

দীর্ঘমেয়াদি ভিসা এবং কূটনৈতিক বা সরকারি ভিসাধারীরা ‘লিভ ইন্ডিয়া’ নির্দেশের আওতার বাইরে থাকবেন।

আরও পড়ুনযেদিকে তাকাই, শুধু অবিশ্বাস: ভারতের বিভিন্ন শহরে ভয়ে ঘরবন্দী কাশ্মীরি শিক্ষার্থীরা৯ ঘণ্টা আগে

সরকারি তথ্যমতে, ২৫ এপ্রিল আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ১৯১ জন পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ত্যাগ করেছেন। পরের দিন ২৬ এপ্রিল আরও ৮১ জন পাকিস্তানি একই পথে ভারত ছাড়েন।

ওই দিন পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরেছেন ২৮৭ জন ভারতীয়। পরদিন ফিরেছেন ৩৪২ জন, যার মধ্যে ১৩ জন কূটনীতিক। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু পাকিস্তানি বিমানবন্দর দিয়েও ভারত ছেড়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় তৃতীয় দেশের মাধ্যমে তাঁরা গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারত সরকারের তথ্যমতে, স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারী পাকিস্তানি সবচেয়ে বেশি ছিলেন মহারাষ্ট্রে। তাঁদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। রাজ্যের মন্ত্রী যোগেশ কাদম বলেছেন, এই এক হাজার পাকিস্তানি নাগরিককে দ্রুত ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আগমনী ভিসা, ব্যবসা, চলচ্চিত্র, সাংবাদিক, ট্রানজিট, সম্মেলন, পর্বতারোহণ, শিক্ষার্থী, ভিজিটর, দলবদ্ধ পর্যটক, তীর্থযাত্রী এবং দলবদ্ধ তীর্থযাত্রী ভিসাধারী পাকিস্তানের নাগরিকদের আজকের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

মহারাষ্ট্রে বর্তমানে আরও প্রায় ৫ হাজার ৫০ জন পাকিস্তানি নাগরিক বাস করছেন, যাঁদের অধিকাংশের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে নাগপুরে ২ হাজার ৪৫০ জন, থানে ১ হাজার ১০০ জন, জলগাঁওয়ে ৩৯০ জন, নবি মুম্বাইয়ে ২৯০ জন, পিম্পরি-চিনচওয়াডে ২৯০ জন, অমরাবতীতে ১২০ জন এবং মুম্বাই শহরে থাকেন ১৫ জন।

এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে আবারও গোলাগুলি হয়েছে। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় রাতের মতো গোলাগুলি হলো। ভারতীয় সেনাবাহিনী আজ এ কথা জানিয়েছে।

আরও পড়ুনসিন্ধু নদের পানি সরবরাহ আটকে দেওয়ার ভারতের হুমকিতে পাকিস্তানে আতঙ্ক৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত ছাড়লেন ২৭২ পাকিস্তানি, আজ শেষ দিনে ছাড়বেন আরও কয়েক শ