‘পোড়া চা’ বানিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার মধ্য রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের ফয়জার রহমান। ছয় মাস হলো তিনি মারা গেছেন। এখন তাঁর বড় ছেলে সাদেকুল ইসলাম ‘পোড়া চা’ বিক্রি করেন। সঙ্গে যুক্ত করেছেন আরও কিছু স্বাদের চা। ফলে বেচাকেনা বেড়েছে, বেড়েছে আয়রোজগারও।

বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটির কাপ পুড়িয়ে তাতে দুধ, চিনি, চাপাতি মিশিয়ে এই পোড়া চা তৈরি করা হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছেন এই চায়ের স্বাদ নিতে।

‘পোড়া চা’–এর দোকানটির নাম ‘ফয়জার টি স্টল’। দোকানটির অবস্থান গাইবান্ধা পুলিশ লাইনস-ত্রিমোহিনী সড়ক ঘেঁষে। ২০২০ সালে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ফয়জার তৈরি করেছিলেন বিশেষ পোড়া চা। এটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়। ফয়জারের ছেলে সাদেকুল বলেন, তাঁর বাবা বেঁচে থাকতে প্রতিদিন দুই মণ দুধের চা বিক্রি করতেন। এখন তিনি প্রতিদিন বিক্রি করছেন ১০ মণ দুধের চা। বাবার সময় প্রতি কাপ পোড়া চা ছিল ১৫ টাকা, এখন সেটার দাম ৩০ টাকা। বাবার খরচ বাদে মাসিক আয় হতো ১০–১৫ হাজার টাকা। তাঁর আয় দাঁড়িয়েছে মাসে ৩৫–৪০ হাজার টাকা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে।

সম্প্রতি ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায়, চা বানাতে ব্যস্ত সাদেকুল। তাঁকে সাহায্য করছেন তাঁর ছোট ভাই সাব্বির (২৫) ও দুই কর্মচারী। দোকানে টানানো ব্যানারে চায়ের দাম দেওয়া আছে। ক্রেতারা পছন্দমতো চা নিচ্ছেন। এক পাশে মাটির তৈরি কাপ বড় সসপ্যানে রেখে আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। আরেক পাশে একটি থালার ওপর সারিবদ্ধভাবে সেই পোড়া কাপ রাখা। অন্যদিকে চুলায় রাখা পাতিলে দুধ, চাপাতি আর চিনি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চা। সেই চা আগুনে পোড়া কাপে ঢেলে ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে। দোকানের ভেতরে ও বাইরে বসানো টঙে চা পান করছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। দীর্ঘ সময় দুধ জ্বাল দেওয়ায় এবং মাটির কাপটি গরম থাকায় চায়ের স্বাদটা ভিন্ন হয়।

চা পান করতে আসা গাইবান্ধা শহরের পলাশপাড়া এলাকার কলেজছাত্র জিসান মাহমুদ বলেন, পোড়া চায়ের গল্প শুনে তিনি এখানে এসেছেন। ভিন্ন নামের এই চা অন্য চায়ের তুলনায় অনেক সুস্বাদু। তিনি জীবনে প্রথম এ ধরনের পোড়া চা খেলেন। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি এলাকার ব্যবসায়ী তামজিদুর রহমান জানালেন, তিনি ফেসবুকে পোড়া চায়ের কথা শুনে এখানে এসেছেন।

পলাশবাড়ী উপজেলার মহদিপুর এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত এখানে চা খেতে আসি। এখানে চায়ের গুণগত মান ভালো। এই চা খেলে ভালো লাগবে।’

মা সাজেদা বেগম, ছোট ভাই সাব্বির, স্ত্রী ফাতেমা খাতুন, তিন মেয়ে সাদিকা, সুমি ও আদরিকে নিয়ে সাতজনের সংসার সাদেকুলের। একমাত্র বোন রশিদা খাতুনের বিয়ে হয়েছে। সাদেকুলের স্ত্রী বাড়ির কাজের পাশাপাশি দোকানের দুধ জ্বাল করাসহ নানা কাজে সহযোগিতা করেন। ছেলের পরিশ্রমে সংসারের অভাব দূর হয়েছে, এতেই খুশি মা সাজেদা বেগম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফয়জ র

এছাড়াও পড়ুন:

শক্তিশালী সৌরঝড়ের আশঙ্কা

সৌরঝড় শব্দের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে নির্গত শক্তিশালী বিকিরণ ও চার্জিত কণার বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৌরঝড় সৃষ্টির হয়। এই ঝড়ের সময় স্যাটেলাইট যোগাযোগ, জিপিএস, রেডিও তরঙ্গ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে থাকে। শিগগিরই আকারে বড় ও শক্তিশালী একটি সৌরঝড় বা সুপারস্টর্মের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এতে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট দুর্যোগ বা অ্যাপোক্যালিপস দেখা যেতে পারে। যেকোনো মুহূর্তে বড় আকারের সেই সৌরঝড় পৃথিবীর ওপরে আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

১ হাজার ২৫০ বছর আগে সর্বশেষ বড় আকারের সৌরঝড় আঘাত হেনেছিল পৃথিবীতে। সেই ঘটনাকে মিয়াকি ইভেন্ট বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে আঘাত হানতে যাওয়া সৌরঝড়টি অনেকটা মিয়াকি ইভেন্টের মতো হতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ম্যাথিউ ওয়েন্স বলেন, ‘আরেকটি মিয়াকি ইভেন্ট পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাতে পারে। আপনি যদি মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞানী হন তবে, তা আপনার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ। যদিও এমন ঘটনা বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের জন্য উদ্বেগের। যদি আবার মিয়াকির মতো কোন ঘটনা ঘটে, তবে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা দেখতে হবে।’

আরও পড়ুনপৃথিবীতে আঘাত হানবে সৌরঝড়, কবে ও কখন০৩ অক্টোবর ২০২৪

সৌরঝড়ের কারণে জনজীবন থমকে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ম্যাথিউ ওয়েন্স। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বড় আকারের কোন সৌরঝড় আঘাত হানার ঘটনা আগে থেকে জানার সুযোগ বেশ কম। এমন কোন ঘটনা ঘটলে ১৮ ঘণ্টা আগে কিছুটা আন্দাজ করা যেতে পারে। ঝড়ের কারণে স্যাটেলাইট বিকল হলে অনেক সংকট তৈরি হবে। বিমান চলাচলে বিভ্রাট দেখা যাবে।’

১৮৫৯ সালে পৃথিবীতে শক্তিশালী সৌর ঝড় আঘাত হেনেছিল। ক্যারিংটন ইভেন্ট নামে পরিচিত সেই ঝড়ের সময় আকাশে বিস্ময়কর অরোরা দেখা গেলেও সারাবিশ্বের টেলিগ্রাফ সিস্টেম বিকল হয়ে যায়। পৃথিবীতে আঘাত হানতে যাওয়া সৌরঝড়টি ক্যারিংটন ইভেন্টের চেয়েও ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী হতে পারে।

সূত্র: ডেইলি মেইল

আরও পড়ুনঅরোরা সম্পর্কে জানতে চান বিজ্ঞানীরা২৮ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ