বঙ্গোপসাগরে শুরু হচ্ছে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা
Published: 14th, April 2025 GMT
আজ মধ্য রাত থেকে দেশের বঙ্গোপসাগরে নতুন সময়সীমা অনুযায়ী শুরু হচ্ছে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে এই সময়ে। দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে একযোগে এই অবরোধে খুশি জেলেরা। এসময় তালিকাভুক্ত জেলেরা পাবেন সরকারি সহায়তা। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলছে জেলেরা এবং শেষ মুহূর্তে সমুদ্রে মাছ না থাকায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছের অবাদ প্রজনন আর জাটকা সংরক্ষণে বাংলাদেশের জলসীমায় এতদিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত অন্যদিকে ভারতীয় জেলেদের জন্য দেশটি এই নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত বলবৎ রাখত। ফলে যখন বাংলাদেশে জেলেরা অবরোধে অলস সময় কাটাত তখন বাংলাদেশের জলসীমায় দাপিয়ে বেড়াত ভারতীয় জেলেরা। ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে সমন্বয় করে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা সময়সীমা নির্ধারণে দাবি করে আসছিল বাংলাদেশের জেলেরা। দীর্ঘদিন পর পূরণ হয়েছে সেই দাবি, নিষেধাজ্ঞা সময় নিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি বছর থেকে বাংলাদেশ ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা ধার্য করেছে। এতে করে যেমন একপেশে সুবিধা পাবে না ভারতীয় জেলেরা, তেমনি প্রতিবেশী দেশ থেকে দুই দিন কম অবরোধ থাকবে বাংলাদেশে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে খুশি উপকূলের জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা।
পটুয়াখালীর জেলার সব চেয়ে বড় দু'টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুরের জেলেরা সকল প্রস্তুতি সেরে এখন ঘাটে পৌঁছেছে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে।
জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরের জেলে মো.
আলিপুর বাজারের ইউসুব কোম্পানি নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসনে উপকূলীয় এলাকার জেলেরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এবার সেই কষ্টের অবসান ঘটল, আজকের পর থেকে আমরা সমুদ্রে নামবো না। আমাদের জেলেরা অন্য পেশায় ঝুঁকবে বেঁচে থাকার জন্য। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে চুরি করে দেশের কিংবা ভারতের কেউ মাছ ধরতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা।
সমুদ্রে মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় নিষেধাজ্ঞার পূর্বে খালি হাতে ফিরছে অনেক জেলে। তবে এই সময়ে পটুয়াখালীর উপকূলীয় নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত এলাকায় জেলেদের দেওয়া হবে প্রণোদনা। ৬৫ দিনে দুইবারে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়া হবে তাদের। সরকারের এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলছেন জেলেরা।
কুয়াকাটা এলাকার হোসেন পাড়ার জেলে আবুল কালাম আজাদ জানান, মূলত আমরা জেলেরা জেলে পেশা ছাড়া অন্য কোন কাজ পারি না। আমাদের একটি পরিবারের পাঁচ থেকে ছয় জন সদস্য। আর মাত্র ৮৬ কেজি চাল আমাদের জন্য খুবই অল্প। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করব আমাদের প্রণোদনা যেন আরেকটু বৃদ্ধি করা হয়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল হকের মতে, সরকারের এই নতুন সময়সীমা অবশ্যই যৌক্তিক, কারণ ভারতীয় জেলেরা যে সুযোগটা নিত সেটা আর সম্ভব না। আর এখন বাংলাদেশের জেলেরা ভারতীয় জেলেদের আগে সমুদ্রে মাছ ধরার সুযোগ পাবে। এতে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হবে অন্যদিকে জেলে পেশা হুমকি থেকে বেরিয়ে আসবে।
জেলেদের দাবি রক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে অবরোধ সফল করতে প্রশাসনকে সহযোগীতার কথা জানান মহিপুর মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা।
কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও জন সচেতনতায় পুরো উপকূলীয় এলাকা ও পটুয়াখালীর বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুরে চলছে প্রচারণা। সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের জেল জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনার কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এই অবরোধ কালীন সময়ে সরকারের দেয়া প্রণোদনা নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হবে।
কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৪ জন তবে মোট জেলে ৩০ হাজারের বেশী। তবে অনিবন্ধিত জেলেদের দাবি সরকার যেন দ্রুত অনিবন্ধিত জেলেদেরকেও নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন বন ধ ত জ ল সরক র র র জন য আম দ র মৎস য উপক ল অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শুরু হচ্ছে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা, খুশি জেলেরা
ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য ২০১৫ সাল হতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে সরকার। ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় এ অবরোধের বিরোধিতা করে আসছিলেন জেলেরা।
প্রতিবেশী জেলেদের আগ্রাসন বন্ধে পালন করেন সময়সীমা কমিয়ে পেছানোর জন্য মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। তাই জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবছর ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।
অবরোধের সময়সীমা কমিয়ে পুনর্বিন্যাস করায় উচ্ছ্বসিত রয়েছেন জেলেরা। তাই এ অবরোধকে স্বাগত জানিয়ে ইতোমধ্যে অনেক জেলে গভীর সমুদ্রে থেকে তীরে ফিরেছেন। এছাড়া এখনো যে সকল জেলেরা গভীর সমুদ্রে রয়েছেন তারা ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে তীরে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন জেলেরা। তবে অবরোকালীন সময়ে সরকার কর্তৃক প্রদেয় প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো, নিষেধাজ্ঞা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রণোদনা প্রদানের এবং সাগরে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জেলেরা।
মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব জেলে আমির হোসেন বলেন, “২০১৫ সাল থেকে ৬৫ দিনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে সরকার। এ সময় ভারতের অবরোধ না থাকায় তারা আমাদের দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে নিয়ে যেত। অবরোধের পর সম গভীর সমুদ্রে গিয়ে আমরা ফিরতাম খালি হাতে। আমরা শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছি। তবে এবছর সরকার সময়সীমা এক সপ্তাহ কমিয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছে। এতে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি অবরোধের পর আমাদের জালে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়বে। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের যেন অবরোধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেওয়া হয়।”
লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের চল্লিশোর্ধ্ব জেলে মোসলেম মিয়া বলেন, “আমরা শুনেছি এই ৫৮ দিনে মাত্র ৭৭ কেজি করে চাল পাবো। আমার পরিবার ছয় সদস্যের। এ চাল আসলে অপ্রতুল। তাই সরকারে কাছে অনুরোধ আমাদের যেন চালের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া অনেক সময় প্রকৃত জেলেরা চাল পায় না। আমরা যারা নিবন্ধিত জেলে রয়েছি আমরা যেন চাল পাই, সে ব্যবস্থা যেন করা হয়।”
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “জেলায় প্রায় ৮১ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে ৪৭ হাজার। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে প্রত্যেক জেলেকে ৭৭ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। এছাড়া অবরোধ শতভাগ সফল করতে আমাদের প্রচারণা চলছে। অবরোধকালীন সময়ে সমুদ্রে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ টহল পরিচালনা করবেন।”
ঢাকা/ইমরান/টিপু