পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ কে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই এ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

এবারের শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে ‘নববর্ষ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে আসুক নেমে আলো, নববর্ষে মুক্ত জীবন থাকুক আরো ভালো’। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ শিল্প প্রদর্শনী ও প্রকাশনা উৎসবসহ থাকছে নানা নতুন আয়োজন।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ঘুরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। নিজেদের দক্ষতা ফুটিয়ে তুলে রংবেরঙের পুতুল, ফুল, টেরাকোটা শিল্প, মাছ, চরকি, অরিগ্যামি পাখি, লোকজ পাখি ও বিভিন্ন আকারের পাখির অবয়ব প্রস্তুত করেন তাঁরা।  

দেখা যায় রংতুলি দিয়ে নানা রকম ছবি আঁকছেন তাঁরা, কেউবা গভীর মনোযোগ দিয়ে জলরঙের ছবি আঁকতে মগ্ন। অঙ্কনশৈলীতে তাঁরা নানা দৃশ্যপট ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেকে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন কাঠামো। তৈরি করা হচ্ছে শাপলা ফুল, সূর্যমুখী ফুল, পাখির মকুট, চরকি, তালপাতার সেপাই, লোকজ খেলনা, পাখি, ষাঁড়, গরুর গাড়িসহ গ্রামবাংলার বিভিন্ন শিল্পকে ফুটিয়ে তুলছেন।

ঈদের পর থেকেই বাংলা নতুন বর্ষকে বরণ করতে নানা পরিকল্পনা নেয় চারুকলা অনুষদ। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর রোববার (৮ মার্চ) থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকেরা কাজ শুরু করেন।

নতুন যা থাকছে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবারই প্রথমবারের মতো বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে প্রায় ৩০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিকেল পাঁচটা থেকে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। কনসার্টে অংশগ্রহণ করবে জনপ্রিয় সংগীত ব্যান্ড ‘অ্যাশেজ’, ‘চান্দের গাড়ি’ ও ‘মেটাল ইরর’। আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে জনপ্রিয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্র্যান্ড এয়ারটেল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বৈশাখী শোভাযাত্রা শুরু হবে। এরপর শোভাযাত্রাটি রায়সাহেব বাজার হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে এসে শেষ হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো.

রেজাউল করিম বিজ্ঞান ভবন প্রাঙ্গণে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। সকাল ১০টা ৪০–এ শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ, আবৃত্তি সংসদ ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশনা থাকবে।

দুপুর ১২টায় নাট্যকলা বিভাগের আয়োজনে ‘ভেলুয়া সুন্দরী’ পালা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা তিনটায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে ব্যান্ড সংগীত পরিবেশিত হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে ‘কিম্ভূত’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘অফসাইড’ এবং একাধিক একক শিল্পী পরিবেশনায় অংশ নেবেন। শেষে বিকেল পাঁচটায় বাইরে থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীদের কনসার্টের মাধ্যমে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয় ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

শোভাযাত্রাটি শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে ফের চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। 

শোভাযাত্রার শুরুতে মারমা, ম্রো, চাকমা, খুমি ত্রিপুরা, পাঙখুয়া, রাখাইন, মনিপুরী, খাসিয়া, চা জনগোষ্ঠীসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠী অংশ নিয়েছে।

এবারের পহেলা বৈশাখের আবহ অন্যবারের চেয়ে একটু আলাদা। গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এটাই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদযাপন। নতুন চেতনায় বর্ষবরণ আয়োজনের প্রচেষ্টা চলছে দেশজুড়ে। বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি বদলে নতুন নাম হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশ ও বিশ্বের সব মানুষের উত্তরোত্তর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা থাকছে দেশজুড়ে। ঢাকায় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ছাড়াও সারাদেশে থাকবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন। গ্রাম-শহরে বৈশাখী মেলা, যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা ছাড়াও থাকবে ঐতিহ্যবাহী খাবার পান্তা-ইলিশ। সেই সঙ্গে থাকবে হালখাতার ঐতিহ্য। ব্যবসায়ীরা লাল খাতা ও নতুন ক্যালেন্ডার বিতরণ করবেন, সঙ্গে থাকবে মিষ্টান্ন বিতরণ।

মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ সালে তার শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলা সাল প্রবর্তন করেন। সেই সময় রাজস্ব আদায় হতো হিজরি চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী, যা ছিল পুরোপুরি চন্দ্রনির্ভর। কিন্তু কৃষিভিত্তিক সমাজে এটি ছিল অনুপযোগী। কারণ, কৃষির মৌসুম অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ইত্যাদি কৃষি মৌসুম ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিশ্র সৌর ও চন্দ্র পদ্ধতির ভিত্তিতে তৈরি হয় ‘তারিখ-ই-ইলাহি’, যা-ই পরে পরিচিতি পায় বাংলা সাল নামে। এই পঞ্জিকা প্রস্তুত করেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী।

যদিও শুরুতে নববর্ষ ছিল প্রশাসনিক কর আদায়ের দিন, ধীরে ধীরে এটি রূপ নেয় একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে। গ্রামবাংলার মানুষ একে একত্রে পালন করতে শুরু করে। রাজস্ব পরিশোধের পর আয়োজিত হতো ‘হালখাতা’, যেখানে ব্যবসায়ীরা পুরোনো হিসাব শেষ করে মিষ্টিমুখ করতেন নতুন খাতা খুলে।

আদিবাসীরা নববর্ষ ঘিরে নিজেদের মতো করে স্বাজাত্যবোধ বজায় রেখে উৎসবের রং ছড়ান। পাবর্ত্য তিন জেলায় আদিবাসীরা উদযাপন করে ঐতিহ্যবাহী উৎসব বৈসাবি। এর নামকরণ হয়েছে বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজু এই শব্দগুলোর আদ্যক্ষর থেকে। এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসুক বলে অভিহিত করেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আয়োজনে বর্ষবরণ
  • জাবিতে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত 
  • গানে গানে শিল্পীদের বর্ষবরণ
  • চারুকলা থেকে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'
  • বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু
  • আজ সকাল ৯টায় শুরু ঢাবির বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’
  • রাত পোহালেই আনন্দ শোভাযাত্রা, প্রস্তুতি প্রায় শেষ
  • ঢাবির বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ শুরু সকাল ৯টায়
  • ঢাবির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় শুরু