মেয়াদ পার হলেও অনেক ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধ না করায় বৈদেশিক মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিল বেড়ে গত নভেম্বর শেষে ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে ওঠে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তদারকির পর মার্চ শেষে তা কমে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে নেমেছে। এর মানে, চার মাসে পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমেছে। সামান্য বিলও যেন অপরিশোধিত না থাকে, সে জন্য ব্যাংকগুলোর সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার জন্য গতকাল নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে বেশ আগে থেকেই আমদানি দায় বকেয়া ছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর হঠাৎ এ প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনলাইন ইমপোর্ট মনিটরিং সিস্টেমের (ওআইএমএস) নভেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, শুধু বৈদেশিক মেয়াদোত্তীর্ণ বিলের পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে এ বিষয়ে কঠোর তদারকি শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একাধিক বৈঠক করে মেয়াদোত্তীর্ণ বিল না কমালে এডি লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অপরিশোধিত বিল কমে গত ডিসেম্বরে ২০ কোটি ডলারে নামে। মার্চ শেষে আরও কমে ৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে নেমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, স্থানীয় মেয়াদোত্তীর্ণ বিলও কমেছে। গত ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ স্থানীয় স্বীকৃত বিল ছিল ৩১ কোটি ২০ লাখ ডলারে। গত মার্চে আরও কমে ১৫ কোটি ৩২ লাখ ডলারে নেমেছে। রপ্তানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে স্থানীয় কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই বিল সৃষ্টি হয়। 

গতকালের সার্কুলারে বলা হয়, আমদানির বিপরীতে বিল মূল্য যথাসময়ে পরিশোধ না করলে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যয় বেড়ে যায়। এখন থেকে বিল দ্রুত পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিল পরিশোধের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। যেসব শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ অপরিশোধিত স্বীকৃত বিল বেশি, সেসব শাখায় বিশেষ পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মামলার কারণে কোনো বিল পরিশোধ না হলে সরবরাহকারী ব্যাংককে জানাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনলাইন পদ্ধতিতে তথ্য আপলোডের আগে ভালোভাবে তথ্য যাচাই করতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমদ ন পর শ ধ ন আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পরপর তিন মেয়ের পর এক ছেলে, তাদের পর এলো জমজ

ছেলের আশায় পরপর তিনটি মেয়ে হয়েছে তানিয়া বেগমের। পরবর্তীতে ছেলেও হয়েছে। সেই ছেলের বয়স এখন তিন। ইচ্ছাপূরণের পর দরিদ্র স্বামী ইস্রাফিল মোল্লা বা তানিয়া– কারোই আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তবে বিধির লীলা বোঝা বড়ই ভার। তানিয়া নতুন করে যখন সন্তানসম্ভবা হন, তখন ভরসা রাখেন আল্লাহর ওপর। নড়াইলের এই গৃহবধূ সোমবার সকালে জন্ম দিয়েছেন জমজ ছেলের।

নড়াইল শহরের বেসরকারি মডার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুই ছেলের জন্ম দেন তানিয়া। তাঁর স্বামী ইস্রাফিল মোল্লা সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় ভ্যানচালক তিনি। ছেলেদের জন্মের পর মা তানিয়া তাদের নাম রেখেছেন– মোহাম্মদ ও আহম্মদ।

সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে নিয়মিত নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান শিশুদের দাদি রেবেকা খাতুন। তিনি বলেন, তারা দরিদ্র মানুষ। ইচ্ছা ছিল স্বাভাবিকভাবেই প্রসব করানোর। কিন্তু সোমবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ করেই পুত্রবধূর ব্যথা ওঠে। তখন বাড়ি থেকে আসার সুবিধার কারণে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন তানিয়াকে।

রেবেকার ভাষ্য, ‘পুতা (সন্তানের ছেলে) জন্ম হওয়ার পর প্রথমজনকে আমি কোলে নিই, আরেকজনকে কোলে নেয় বৌমার মা (শিশুদের নানি) তসলিমা বেগম।’ শিশুদের জন্মের সময় নববর্ষের দিনে পড়েছে কি-না এ বিষয়ে কেউই জানতেন না। তাদের কোলে নেওয়ার পর দাদি-নানিই তাদের কানে আজান দেন। তাদের বাবা বাড়িতে গিয়ে ওজু-গোসল সেরে আজান দিয়েছেন।

প্রতিটি শিশুর ওজনই দুই কেজি ৭০০ গ্রাম করে হয়েছে জানিয়ে রেবেকা খাতুন বলেন, ‘বাচ্চারা এখনো ঠিকমতো মায়ের দুধ পাচ্ছে না। দুধ পাবার চেষ্টা করতিছি।’

১৮ বছর আগে নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের ইস্রাফিল মোল্যার সঙ্গে বিয়ে হয় সদরের বাঁশগ্রামের কিশোরী তানিয়া বেগমের। তখন তানিয়ার বয়স ছিল ১৩ বছর। প্রথম সন্তান মারিয়ার জন্ম হয় এর তিন বছর পর। সেই মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়তো। ঈদুল ফিতরের তিনদিন পর বিয়ে হয়েছে এই কিশোরীর। তার স্বামীই জমজ শ্যালকদের জন্য সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি কিনে দিয়েছে বলে জানান ইস্রাফিল মোল্লা। তিনি বলেন, তাঁর মেঝ মেয়ে মরিয়ম (১০) ও ছোট মেয়ে হাবিবা (৮) বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ছেলে আব্দুর রহমানের বয়স ৩ বছর। ইস্রাফিলের ভাষ্য, ‘৬ সন্তান হলেও আমরা খুশি, আনন্দিত। এ সন্তান আল্লাহর দান।’

মডার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে তানিয়ার অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার। তিনি বলেন, ‘প্রসূতিকে সোমবার সকালে জরুরি অবস্থায় ভর্তি করা হয়। সবাই তাদের বিষয়ে আন্তরিক ছিলাম। নবজাতক ও তাদের মা সুস্থ আছে। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ