ছেলেধরা সন্দেহে সন্তানের সামনে বাবাকে মারধর
Published: 13th, April 2025 GMT
শিশুর কান্না শুনে ছেলেধরা সন্দেহে অতি উৎসাহী জনতা এক বাবাকে বেধড়ক মারধর করেছে। রোববার বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের রামদী ইউনিয়নের তাতারকান্দা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত সোহেল মিয়াকে (৩০) পুলিশ উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে।
সোহেল মিয়া কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া সওদাগর পাড়ার জজ মিয়ার ছেলে। ঘটনার সময় তিনি ৩ বছরের শিশু সন্তান লাইসাকে নিয়ে অটো রিকশাযোগে আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন। পরে শিশুটি চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে অটোরিকশার গতিরোধ করে তাকে মারধর করে। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাদের দুইজনকে নিয়ে যায়।
উপজেলার রামদী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.
পুলিশ জানায়, প্রায় ১০ বছর পূর্বে সোহেল তার প্রতিবেশী লালন মিয়ার মেয়ে সাবিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। তার সংসারে সজিব (৮), লাইসা আক্তার (৩) এবং ৭ মাসের আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
কুলিয়ারচর থানার উপ-পরিদর্শক শুভ আহমেদ বলেন, উদ্ধারের পর সোহেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি জানান, সোহেলের স্ত্রী কোলের সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় ভৈরবে তার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন স্ত্রীর খোজে।
সোহেলের প্রতিবেশীরা জানায়, স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। ঝগড়া করে তার স্ত্রী সাবিনা প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের বাসায় আশ্রয় নেয়। আগে নৈতিক সমস্যা থাকলেও এখন সোহেল ভালো হওয়ার চেষ্টা করছে। ফেরি করে বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রি করে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল আলম শামীম বলেন, এক সময় সোহেল মাদক এবং ছিচকে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সোহেল ও তার মেয়ে লাইসাকে রাত ৯টার দিকে জিডি মূলে তার মা, বাবা ও ভাই-বোনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকজন ভুল বুঝে তাকে মারধর করেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন বছরে ঘর আলো করে এলো প্রভা
প্রথম কন্যা অরফি আফরিন আভার বয়স সাড়ে ৪ বছর। এর মাঝেই আবার গর্ভবতী হন গৃহিনী মোসা. জুঁই। ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন। পহেলা বৈশাখের পরে তাঁর সিজার হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন বছরের শুরুর দিনই ঘর আলো করে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার নাম রাখা হয়েছে প্রভা। নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছেন।
পারিবারিকভাবে ২০২০ সালে জুঁইয়ের বিয়ে হয় কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। স্বামী আকাশ হোসেন অভি কুষ্টিয়া আদালতে একজন আইনজীবীর সহকারী।
জুঁইয়ের সাথে অভির বিয়ে হওয়ার বছর খানেকের মধ্যে জন্ম হয় প্রথম কন্যা সন্তানের। সেই মেয়েকে নিয়ে তাদের সুখে দিন কাটছিল। এর মাঝে নববর্ষের দিন নতুন যোগ হয়েছে আরও এক কন্যা সন্তান। এতে ভীষণ খুশি তারা।
কুষ্টিয়া লালন শাহ প্রাইভেট হাসপাতালে গর্ভবেদনা নিয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় ভর্তি হন জুঁই। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেন তিনি দ্বিতীয় কন্যা সন্তান। হাসপাতালের চিকিৎসক মোহসিনা হায়দার তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। এখন মা ও শিশু হাসপাতালের বরীন্দ্রনাথ কেবিনে আছেন।
জুঁইয়ের স্বামী অভি বলেন, ‘আমাদের বাসা পৌর এলাকার মধ্যে। শ্বশুর বাড়ি কয়েক কিলোমিটার দূরে। সকালে ব্যথা ওঠার পর বাসা থেকে দেড় কিলোমিটারের দূরে লালন শাহ হাসপাতালে এনে ভর্তি করাই। এরপর চিকিৎসক সাড়ে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচার করেন। কোন সমস্যা হয়নি।’
প্রায় ৩ কেজি ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া সন্তানকে প্রথম কোলে নেন নানি। এ সময় নানির নিজ হাতে তৈরি করা কাঁথা ও পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয় শিশুটির শরীর। হাসপাতালের পরিচালক হারুন অর রশিদ হিরো নববর্ষের দিনে জন্ম নেওয়া এ শিশুর অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান।
জুঁইয়ের স্বামী অভি জানান, তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিতেন। খাওয়া-দাওয়া ঠিকভাবে করছেন কি-না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেন। চিকিৎসক মোহসিনা হায়দারকে দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার। স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা ছিল না। জুঁইয়ের বাবার বাড়ি শহরতলির কবরবাড়িয়া এলাকায়। হাসপাতালে জুঁইয়ের আম্মা তার সাথে আছেন দেখাশোনা করার জন্য। বড় মেয়ে আভা আছে তাদের সাথে। নতুন বোন পেয়ে সেও খুব খুশি।
জুঁই বলেন, তাঁর স্বামী আইনজীবীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া মাঝে মধ্যে বালুর ব্যবসা করেন। এ আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। খুব বেশি আয় না হলেও তাদের সংসারে সুখ আছে। কিছুটা আর্থিক সংকট থাকলেও দ্বিতীয় সন্তান পেটে আসার পর কোন সমস্য হয়নি। তাঁর স্বামী নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন। যতটা পেরেছেন ভালো খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের পর আবার মেয়ে হওয়াতে খুশি আমরা। এখন ছেলে-মেয়েতে কোন তফাত নেই। সবই সৃষ্টিকর্তার দান। আমরা দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে ভালো মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
এসএসসি পাশ জুঁই মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও মেয়েদের প্রতি তিনি যত্নশীল। তাদের সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
জুঁই বলেন, বড় মেয়ের নাম আভা। বাবার নাম অভি, অভি থেকে আভা রাখা হয়েছে। এ কারণে মিল রেখে ছোট মেয়ের নাম রাখা হলো প্রভা। দুই মেয়ের নামই তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে রেখেছেন। বাড়িতে গিয়ে আকিকা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যাতে মহান আল্লাহ মুছিবত দূর করে দেন। বাড়ির সবাই খুশি। হাসপাতালে কয়েকদিন থাকতে হবে। এখানে সবাই সহযোগিতা করছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না।
মেয়েদের নিয়ে কি স্বপ্ন আছে জানতে চাইলে বলেন, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে। আমরা নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। মেয়েদের ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর ইচ্ছা আছে। বড় মেয়েকে সবেমাত্র একটি কিন্ডার গার্ডেনে প্লেতে ভর্তি করিয়েছি। সে স্কুলে যায়। আর ছোট মেয়ের যত্ন নেওয়া আমার প্রধান কাজ। বুকের দুধ পান করছে ছোট মেয়ে। মেয়ে যাতে সুস্থ থাকে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
জুঁই বলেন, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি সন্তানকে আরবি শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা আছে। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বেড়েছে। তাই ছেলে-মেয়েদের সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষা বেশি প্রয়োজন।
ডা. মোহসিনা হায়দার বলেন, ‘জুঁই আমার রোগী ছিল। সন্তান পেটে আসার পর বেশ কয়েকবার সে চেকআপের জন্য আসে। পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়া করেছে। কোন সমস্যা ছিল না।’
নববর্ষের দিন সিজার করানোর কারণ জানতে চাইলে জুঁইয়ের পরিবার জানায়, পহেলা বৈশাখের দিন সকালে হঠাৎ করেই ব্যথা শুরু হয়। এ জন্য তারা তড়িঘড়ি করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। সেখানে অস্ত্রপচার করেন তিনি। এ কারণে নতুন বছরেই তারা নতুন অতিথি পেয়েছেন। এ জন্য সবাই খুশি।
হাসপাতালের নার্স রেবেকা খাতুন বলেন, তিনজন সেবিকা তাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। নতুন বছরে যারা জন্ম নিয়েছেন নার্সরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। শিশুদের কোলে নিয়ে আদর করেছেন। নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন তারা।
হাসপাতালে যখন শিশুটির জন্ম হয় তখন তার বাবা কালেক্টটরেট চত্বরে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ছিলেন। সকালে শিশুকে একবার দেখে চলে যান অনুষ্ঠানে। পরে আবার আসেন। হাসপাতালের পরিচালক হারুন অর রশিদ হিরো বলেন, পহেলা বৈশাখে তাঁর প্রতিষ্ঠান রোগীদের জন্য বিশেষ সেবা দিয়ে থাকে। এদিন যাদের ঘরে নতুন অতিথি আসে সেই সব পরিবারকে তারা যথাসাধ্য ছাড় দেওয়াসহ অন্যান্য সুবিধা দেন। এছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়।