শান্তি, স্বস্তি ও সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে হবে
Published: 13th, April 2025 GMT
আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে রাজনীতির মতো দেশের সংস্কৃতিতেও একটি দলের আধিপত্য ছিল। এখন বিভিন্ন জায়গায় সরকারি অর্থ খরচ করে সাংস্কৃতিক উৎসব করা হলেও সেগুলো প্রাণ পাচ্ছে না
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের রাজনীতি ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন
সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সমকালের সহকারী সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ
সমকাল : বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশের উৎসব হিসেবে পহেলা বৈশাখকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : শুভেচ্ছা। বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনে এক উজ্জ্বল আনন্দময় উৎসব। এ উৎসব সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আয়োজন। নতুন বছর মানে অতীতের সব ব্যর্থতা, জরাজীর্ণতা পেছনে ফেলে নতুন উদ্দীপনা ও উৎসাহে সুন্দর-সমৃদ্ধ আগামী বিনির্মাণে এগিয়ে যাওয়া। বৈশাখ বরণ শুরু হয় চৈত্রসংক্রান্তি বা চৈত্র মাসের শেষ দিন থেকে। আমরা জানি, বাংলা মাসের সর্বশেষ দিনটিকে সংক্রান্তির দিন বলা হয়। বাংলার চিরায়ত বিভিন্ন ঐতিহ্য ধারণ করে আসছে এই চৈত্রসংক্রান্তি। বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরোনোকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন। চৈত্রসংক্রান্তি অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন। তাই চৈত্রসংক্রান্তি হচ্ছে বাঙালির আরেক বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তির দিন নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। এ ছাড়া চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে নানা ধরনের মেলা ও উৎসব হয়। হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় চৈত্রসংক্রান্তি। পুরাতন ক্লেদ ও বেদনার সবকিছু বিদায় জানানোর পাশাপাশি সব অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার থাকবে গোটা জাতির। এবার বাংলা নববর্ষ আমাদের বাংলাদেশে আরও নতুন কিছু নিয়ে আসবে।
সমকাল : এবারের পহেলা বৈশাখ ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন কেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এবার দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশীয় সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতে বিএনপি দলীয়ভাবেও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বৈশাখী যাত্রা/র্যালি থেকে শুরু করে মেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ফেলে আসা বছরের অশান্তি, স্থবিরতা কাটিয়ে আমরা নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার অপার সম্ভাবনা দেখতে পাব বলে বিশ্বাস করি। আমাদের শান্তি, স্বস্তি, সুস্থতা ও সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা ও বিভাজন দূর করে পরস্পরের শুভকামনায় আমরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করব। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এ ক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা রাখতে পারে।
সমকাল : বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কীভাবে হারানো সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার করতে পারে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা বহু পুরোনো। এই ভূখণ্ডের সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটেছিল প্রগতিবাদী রাজনীতির। তারই পরম্পরায় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। আমাদের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে সমাজ। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হবে সম্প্রীতি ও মানবতার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সব ধর্মের সমান অধিকার এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বারবার বলেছেন। সবাইকে তিনি বাংলাদেশি মূলমন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছেন। আগে দেশের গ্রামে গ্রামে যাত্রা, পালাগান, কবিগান, মেলা হতো। এখন গ্রামের কী অবস্থা? বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে রাজনীতির মতো দেশের সংস্কৃতিতেও একটি দলের আধিপত্য ছিল। তাদের বন্দনাই ছিল দেশের সংস্কৃতির চিত্র। তারা অসাম্প্রদায়িকতার কথা মুখে বললেও প্রতিফলন দেখা যায়নি। এখন বিভিন্ন জায়গায় সরকারি অর্থ খরচ করে সাংস্কৃতিক উৎসব করা হলেও সেগুলো প্রাণ পাচ্ছে না। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে মানুষ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
সমকাল : এবারের বাংলা নববর্ষ নিয়ে আপনার স্বতন্ত্র কোন ভাবনা কাজ করছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের মানুষ একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বিশ্বাসী। তাই এ দেশে আমরা শান্তি কামনা করি। বিভিন্ন মাধ্যমে যারা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে, সেটি থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। তাহলে অসাম্প্রদায়িক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্প্রীতির বন্ধন দেশে ছড়িয়ে দিতে চাওয়ার মনোভাব নিয়েই বিএনপি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। সব ধর্মের নিরাপদ ও আনন্দময় সহাবস্থান নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
সমকাল : বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার কি নিরপেক্ষতা নিয়ে সবকিছু সামাল দিচ্ছে বলে মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : কথা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি পক্ষপাতমুক্ত থাকতে না পারে, তাহলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন দেখা দেবে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়। এখন বিভিন্ন মহল থেকে কথা উঠছে, কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারছে না। সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত সরকারের। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারই জনআকাঙ্ক্ষা ও মানুষকে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করতে সক্ষম হবে। কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই বিএনপি নির্বাচনের দাবি করছে না। নির্বাচন আয়োজনে সময়ক্ষেপণ করা হলে অশুভ শক্তি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হতে হবে। কারণ, নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একমাত্র প্রবেশপথ।
সমকাল : রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে নিয়ে চক্রান্ত হওয়ার কথা আপনাদের দলের কেউ কেউ বলছেন.
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপিকে টার্গেট করে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা উচিত, যে দলই হোক না কেন। যারা সংস্কারের দাবি তুলেছেন, তাদের মতামতকে সম্মান করি। যদি তারা জনগণের বাইরে গিয়ে কিছু করতে চায়, তবে বিএনপি সেটি সমর্থন করবে না। গণতন্ত্রই হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। যদি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, তবে জনগণ তাদের প্রতিহত করে। এর বাস্তব প্রমাণ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পরিণতি দেখার পরে আর কেউ এমন আচরণ করবে বলে মনে হয় না।
সমকাল : পহেলা বৈশাখের শিক্ষা কী তবে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : প্রতিটি উৎসবের অন্তস্তলে থাকে কোমলতা, শ্রদ্ধা, সংকীর্ণহীনতা ও হীনমন্যতা থেকে মুক্তির মন্ত্র। দেশের সব মানুষের সুখ ও শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ-সংঘাত পেরিয়ে শান্তিময় বিশ্ব হয়ে উঠবে– এই প্রত্যাশা করি। আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, অসুন্দরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, অসত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে– এটাই হচ্ছে আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা।
সমকাল : এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : সমকালকেও ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ত রস ক র ন ত অন ষ ঠ ন নববর ষ আম দ র র জন য মন ত র দ ধ কর নত ন ব আওয় ম সমক ল সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে থাকবে রাবি অধ্যাপকের ৩০০ ফুটের স্ক্রলচিত্র প্রদর্শনী
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্য নিয়ে একক স্ক্রলচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবাহান (হীরা সোবাহান)।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২ ফুট প্রস্থের এই শিল্পকর্মটি প্রদর্শিত হবে। দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন অ্যাকাডেমিক ভবনের ৩০৪ নম্বর কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
আরো পড়ুন:
রাবি শিক্ষার্থীদের বিজু উৎসব উদযাপন
৫ বিভাগে অনুষ্ঠিত হলো রাবির ভর্তি পরীক্ষা
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আবদুস সোবাহান বলেন, “আমরা চারুশিল্পীরা রঙ ও তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাস রাঙিয়ে তুলি। যেখানে ফুটে উঠে আমাদের প্রকৃতি, আমাদের গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস ঐতিহ্য এবং লোকজ সংস্কৃতি। একজন চারুশিল্পী হিসেবে আমিও এসব বিয়বস্তুকে নিয়ে ক্যানভাস পরিতলে ২ মাসের প্রচেষ্টায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ২ ফুট প্রস্থের (মিশ্র মাধ্যম) একটি স্ক্রলচিত্র অঙ্কন করেছি।”
তিনি বলেন, “স্ক্রলচিত্রে স্থান পেয়েছে দেশের গ্রাম-বাংলার হারানো লোকজ-ঐতিহ্য। বিভিন্ন উৎসব (বাংলা নববর্ষ, নবান্ন, পৌষসংক্রান্তি), কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, লোকমেলা, লোকসংগীত, লোকসাহিত্য, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, শৈশব, মাছধরা, প্রাত্যহিক ব্যবহৃত বিষয়বস্তু ইত্যাদি। আমার জানা মতে, ৩০০×২ বর্গফুট দৈর্ঘ্যের পেইন্টিং বাংলাদেশে ইতোপূর্বে প্রদর্শিত হয়নি।”
সংবাদ সম্মেলনে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বনি আদম উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী