পরিবর্তনের আহ্বানে নতুন আলোর পথে ঐক্যের ডাক নিয়ে এলো বাঙলা নববর্ষ। আজ সোমবার পয়লা বৈশাখ। সুর-গীত, শোভাযাত্রা আর বহুত্বের আনন্দ আয়োজনে বৈশাখের প্রথম প্রভাতে নতুন বর্ষকে বরণে প্রস্তুত গোটা বাংলাদেশ। বাজবে ঢাকা, বাজবে বাদ্য-বাঁশি, কণ্ঠ উঠবে শিল্পীর, রঙিন পোশাক পরবে বাঙালি, উৎসব হবে দেশজুড়ে। ‘এসো হে বৈশাখ’ অনুরণন তুলবে লাল-সবুজে হৃদয় মোড়া বাংলাদেশে।

চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরের বিদায় ঘটিয়ে জরাজীর্ণতা ভুলে নতুন সূর্যোদয় নিয়ে আসবে নবঘন দিন; আজ পয়লা বৈশাখ, বাংলা বর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম আলো ছড়িয়ে পড়বে এই দেশে, আমাদের বাংলাদেশে।

নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে সরকারি, বেসরকারি এবং প্রাতিষ্ঠাকিন, সামাজিক ও পারিবারিক পরিসরে। সুন্দরের আহ্বানে মাঠে-ময়দানে, সাজানো ছাউনিতে, অডিটোরিয়ামে, সরকারি-বেসরকারি ভবন ও প্রাঙ্গণে, রাজপথে, ফুটপাতে, পার্কে, খোলা আকাশের নিচে, বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাবে বাঙালি খাবারের পসরা আর বিনোদনের নানা আয়োজন। এ জন্য সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা গেছে।

আরো পড়ুন:

পটুয়াখালীর আড়তে ইলিশের কেজি ২৫০০ টাকা 

‘হাসিনার দোসররা ভোরে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে’

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তোর আকাঙ্ক্ষায় যে বাংলাদেশের যাত্রা আট মাস আগে শুরু হয়, তারপর এই প্রথম নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে। এবারের নববর্ষ বরণের সরকারি-বেসরকারি আয়োজনে সেই পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে; পরিবর্তন এসেছে সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’, সমন্বয়ের সেই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার ডাক পড়েছে ৩২টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের।

নবসূর্যের প্রথম আলোয় নতুন পথের আহ্বান-বন্দনায় সুরে সুরে ভরে উঠবে ছায়াবিথী রমনার বটমূল। ঢাকার সব উদ্যান, বিনোদনকেন্দ্রে বর্ষবরণের প্রস্তুতি দেখা গেছে। ফুলের দোকানে এসেছে হরেক রকম ফুল। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাঙালি খাবারের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ আজ দেশি খাবারে মন ভরাবে; কেউবা খাবে পান্তা-ইলিশ।

সব আয়োজনের মধ্যে বর্ষবরণের প্রতিপাদ্যে ভাবাদর্শিক পরিবর্তনের ধারা লক্ষ্যণীয়।  ঐতিহ্যবাহী ও জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম আনন্দ শোভাযাত্রা করার ব্যাখ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “এই শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যে দুটো মেসেজ (বার্তা) আছে। একটি হচ্ছে, একটি নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার অবসান। রাজনৈতিক ও সামাজিক নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সেই বিষয়টি তুলে ধরা। কিছু মোটিফ সেই কাজটি করছে। আর দ্বিতীয় যে অংশটি আছে, সেটি হচ্ছে মূলত ঐক্যের ডাক, সম্প্রীতির ডাক।”

‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পয়লা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকার ‍চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার জন্য বানানো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পুড়ে যাওয়ার পর সেটি আবার নতুন করে বানিয়েছেন চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাতেই থার্মোকল বা শোলা দিয়ে নতুন করে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি বানানোর কাজ শুরু হয়। নতুন করে তৈরি এই ‘মোটিফটির উচ্চতা ১৬ ফুট। এটিসহ এবার ছোট-বড় মোট ২১টি মোটিফ রাখা হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু দিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪ এর চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

পয়লা বৈশাখের প্রথম প্রভাতে মঙ্গল, মুক্তি ও নতুনের আহ্বানে দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ঢাকার রমনার বটমূলে অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কয়েক ঘণ্টা বাদে ভোরে সেই আয়োজনে একাত্ম হবে দেশ।

ছায়ানটের বর্ষবরণের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণের এবার ৫৮তম আয়োজন। ছায়ানটের এবারের বার্তা, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। বিশ্বব্যাপী যেমন ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, তেমনই এ দেশেও ক্রমান্বয়ে অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। তবু আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, স্বপ্ন দেখি, হাতে হাত রেখে সকলে একসঙ্গে মিলবার, চলার। বাঙালি জাগবেই, সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফিরবেই।”

বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং শোভাযাত্রার ইতিহাস, ইউনেস্কোর স্বীকৃতিসহ নানা বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি বিভিন্ন অনুষ্ঠান রেখেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রস্তুতি নিয়েছে।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল, সোমবার সরকারি ছুটি। তবে উৎসবের আবহ সর্বত্র। নতুন দিনে দেশের সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সাল গণনা শুরু হয়। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন পঞ্জিকার আলোকে প্রবর্তন করা হয় নতুন বাংলা সন।

একসময় বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। তখন নতুন-পুরোনো ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করা হতো এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করা হতো। চিরাচরিত সেই আয়োজন আজো দেখা যায়।

 ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে। পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।

পয়ালা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। অবশ্য এবার শোভাযাত্রার নাম বদলে গেছে; করা হয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রা।

নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো.

আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, “নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আমি পরিবর্তন বলতে চাই না। শুরুতে বর্ষবরণ ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। আগে যেভাবে হয়েছিল, সেটির স্বতঃস্ফূর্ততা কতোখানি ছিল, সেটা বিশ্লেষণের বিষয়। পরবর্তীতে মঙ্গল শোভাযাত্রার ক্ষেত্রে কী ঘটেছে? এ জন্য পরিবর্তন নয়, পুনরুদ্ধার বলছি আনন্দ শোভাযাত্রাকে।”

তবে এই নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা ও নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির মধ্যে জরাজীর্ণ-আবর্জনা আর পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুন সূর্যোদয়ে বর্ষবরণে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

রমনা বটমূল ও ঢাবিকেন্দ্রিক যেসব সড়ক বন্ধ থাকবে আজ

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রমনা বটমূল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় ভোর ৫টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কিছু এলাকায় রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে।

ভোর ৫টা থেকে রমনা পার্ক (রমনা বটমূল), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও আশপাশের বাংলামোটর ক্রসিং/নেভি গ্যাপ, পুলিশ ভবন ক্রসিং, সুগন্ধা ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, কদম ফোয়ারা ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং (পূর্ব ও দক্ষিণ), দোয়েল চত্বর ক্রসিং, রোমানা ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং ও কাঁটাবন ক্রসিং বন্ধ থাকবে বা রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে।

গাড়ি চলাচল নির্দেশনা

১। রমনা পার্ক (রমনা বটমূল), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডাইভারশন পয়েন্ট ছাড়া মিরপুর-ফার্মগেট থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন বাংলামোটর ক্রসিংয়ে বামে মোড় নিয়ে মগবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

২। গোলাপশাহ মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন কদম ফোয়ারা ক্রসিং-ইউবিএল ক্রসিং- নাইটেঙ্গল ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

৩। সায়েন্সল্যাব ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন মিরপুর রোড দিয়ে আজিমপুর ক্রসিং-চাঁনখারপুল ক্রসিং-বকশীবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

রাজধানীবাসীকে নির্দেশনা অনুযায়ী রাস্তা-সড়ক ব্যবহার করতে অনুরোধ করেছে ডিএমপি।

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পয়ল ব শ খ নববর ষ উৎসব আনন দ শ ভ য ত র নববর ষ র র জন ত ক প রস ত ত ছ য় নট র অন ষ ঠ ন র প রথম ল ক রস র ক রস বর ষ র চ র কল বটম ল সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পহেলা বৈশাখে রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন  

পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন, আনন্দের দিন, সম্প্রীতির দিন, সৌহার্দ্যের দিন। বাংলা ১৪৩২ সনকে বরণে রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজন করা হয়েছে। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মাধ্যমে শুরু হবে বৈশাখবন্দনা, নতুন বছরকে বরণ করার আয়োজন।

বাঙালি সমাজকে নিয়ে আলোর পথে মুক্তির পথযাত্রী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে এবার পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠানে। ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন ভোর সোয়া ৬টায় বৈশাখের ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীর রাগালাপ দিয়ে শুরু হবে। এবারে অনুষ্ঠানের মূলভাব ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। 

ছায়ানটের এবার অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসার গান ও আত্মবোধনের জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। এতে থাকবে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক কণ্ঠের গান ও ৩টি পাঠ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে (সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে) অনুষ্ঠান শুরু হবে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে। শেষে ছায়ানটের কথন পাঠ করবেন ডা. সারওয়ার আলী। প্রায় দুই ঘণ্টার এ আয়োজন ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজসহ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

রবীন্দ্র সরোবর

পহেলা বৈশাখে সকাল ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তমঞ্চে হবে  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশে পাবেন বাহারি বাঙালি খাবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’–এই প্রতিপাদ্যে চব্বিশের চেতনা ধারণ করে সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবারের নববর্ষের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এই আয়োজনে বাঙালিসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন  শিল্পী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়া, বম, ম্রো, রাখাইন, খিয়াং, বানাই, সাঁওতাল, ওঁরাও, তুরী, মাহালি, মালপাহাড়িয়া, কোল, মাহাতো, মুণ্ডা রাজোয়াড়, মনিপুরী, খাসিয়া, চা-জনগোষ্ঠী, গারো, হাজং, কোচ ও মালো। এছাড়াও শোভাযাত্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস অংশগ্রহণ করবে এবং পৃথিবীর শান্তি কামনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে গান পরিবেশিত হবে।

এবারের শোভাযাত্রা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি, শান্তির পায়রা, পালকি, মীর মুগ্ধের স্মৃতিবাহী পানির বোতল—শোভাযাত্রায় থাকবে এই সাতটি বড় মোটিফ বা শিল্প-অবকাঠামো। এর বাইরে থাকবে মাঝারি আকৃতির ১০টি সুলতানি আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, আটটি তালপাতার সেপাই, পাঁচটি তুহিন পাখি, চারটি পাখা, ২০টি ঘোড়া ও ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফের মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০০টি বাঘের মাথা, ১০টি পলো, ছয়টি মাছ ধরার চাঁই, ২০টি মাথাল, পাঁচটি লাঙল, পাঁচটি মাছের ডোলা। চারুকলা অনুষদের সম্মুখভাগের সীমানা প্রাচীর ইতোমধ্যে হলুদ রঙের ওপর রাজশাহী অঞ্চলের শখের হাঁড়ির মোটিফে আঁকা হয়েছে ফুল-পাখি, লতা-পাতার দৃশ্য।

জাতীয় সংসদ ভবন

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ‘ড্রোন-শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’ আয়োজিত হবে।  

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক

রাজধানীর গুলশান-২ এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৩, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও নগর উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৭টায় শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হবে। সকাল ৯টায় বর্ষবরণ নগর উৎসবের ওয়েবসাইট উন্মোচন করা হবে। এরপর বারামখানা ও পল্লীবাংলার অংশগ্রহণে শুরু হবে বাউল গান। বিকাল ৪টায় ঘাসফড়িং কয়ার, শিরোনাম হীন এবং প্লাজমিক নকের অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। 

শাহবাগ

‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ এই শিরোনামে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট। এই আয়োজনে চিরায়ত বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গান, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হবে। অনুষ্ঠানে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে। 

অন্যান্য আয়োজন

নববর্ষকে বরণ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সকাল থেকে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী আনন্দ র‌্যালি বের হবে। এরপর নগর ভবনে থাকবে পান্তা ইলিশের আয়োজন। দুপুরে করপোরেশনের আয়োজনে থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘জনমানুষের বৈশাখ, শেকড়ের সংস্কৃতি’ শিরোনামে ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে নববর্ষের আয়োজন করা হয়েছে।

বিকেল ৪টায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদ। জনপ্রিয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। শেষে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে নাটক পরিবেশন করা হবে।

এর বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের তিনশ ফুট উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় সারাবছরই কম-বেশি ভিড় থাকে। উৎসবের দিনে হয়তো ভিড়টা একটু বেশিই হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে নববর্ষকে বরণ, শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ভাস্কর শামীমকে সংবর্ধনা
  • বৈশাখী উৎসবে বাকৃবিতে ছাত্র-শিক্ষকের মিলনমেলা
  • চট্টগ্রামে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বেড়েছে
  • ভোরের আলোয় আলোর পথযাত্রার আহ্বানে ছায়ানটের বর্ষবরণ
  • সবার জন্য কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক
  • পহেলা বৈশাখে আজ রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন
  • নতুন চেতনায় বর্ষবরণের আয়োজন
  • বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ
  • পহেলা বৈশাখে রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন