আমরা যদি একটি বর্ধিষ্ণু চারাগাছের লকলকে মাথাটি কেটে দিই তাহলে কী হয়? মূল কাণ্ডটি আর বড় হতে পারে না। তখন চারাগাছটির দেহ থেকে কয়েকটি শাখা বের হয় এবং শাখাগুলো উঁচু হতে থাকে। শিকড়ে যদি পুষ্টি থাকে তাহলে গাছ বড় হবেই। প্রধান কাণ্ড কেটে দিলে শাখাকাণ্ড বড় হবে। এবার যদি ফের আমরা শাখাগুলোর মাথা কেটে দিই তাহলে কী হবে? ওরা কি থেমে যাবে? গাছটি এর পরও বাড়বে, যদি না ওর শিকড় পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে। যদি না বার্ধক্যে, অসুখ-বিসুখে গাছটি রুগ্ণ হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক অবস্থায় সে তখন প্রতিটি শাখা থেকে কিছু নতুন উপশাখা বের করে দিয়ে বড় হতে থাকবে। গাছটি উঁচু হতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু চারপাশে ছড়িয়ে পড়বে; পাশাপাশি বাড়তে থাকবে।
বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্রও তাই। যদিও ঘুরেফিরে ভোটের মাধ্যমে দুটি রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসে, কিন্তু দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক।
এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫৫টি, অনিবন্ধিত আরও বহু দল আছে। ভারত অনেক বড় একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সেই দেশেও জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দল আছে মাত্র ৬টি; প্রাদেশিক দল ৫৮টি।
উন্নত প্রায় সব দেশেই দুটি রাজনৈতিক দল; একটি দল ক্ষমতায় থাকে, অন্যটি বিরোধী দলে। বিলেতে লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেট দলের আবির্ভাব ঘটেছে। আমেরিকাতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটের বাইরে তৃতীয় কোনো দল হই হই করেও সেভাবে হয়ে উঠছে না। তাহলে আমাদের ছোট্ট দেশটাতে এত রাজনৈতিক দল কেন?
প্রবাসে একটি প্রবাদ আছে– দু’জন বাঙালি একসঙ্গে হলে তিনটি সংগঠন তৈরি হয়। একটি আমার, একটি তোমার, আর একটি আমাদের।
প্রশ্ন হচ্ছে, নেতা হতে চাওয়া কি অন্যায়? সমস্যাটা আসলে এখানে অযোগ্যরা নেতা হতে চায়। আবার যোগ্যরাও নেতা হতে পারে না; তাদের মাথা কেটে বনসাই করে রাখা হয়। ফলে তারা ওপরে উঠতে না পেরে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে পাশাপাশি বাড়ে। মানে নতুন দল গঠন করে।
যোগ্যতা থাকলেই কেউ বাংলাদেশের প্রধান দলগুলোর শীর্ষ নেতা হতে পারেন না। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালে তিনিই আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করেন। ১৯৮১ সালে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ভারতের নির্বাসন থেকে ফিরে এসে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই শুধু মুজিবকন্যা হওয়ার কারণে দলের সভাপতি হন। ৪৪ বছর ধরে তিনি এই পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রী দলের চেয়ারপারসন হন। আজ পর্যন্ত তিনিই এ পদে বহাল আছেন। কারও সাধ্য নেই তাঁর জীবদ্দশায় এই পদে আসীন হওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন। এগুলো যেন রাজতান্ত্রিক পদ। উত্তরাধিকারই এ পদে বসার প্রধান যোগ্যতা।
যদি একই ব্যক্তি একটি দলের প্রধান থাকেন ৪৪ বছর– সেই দলে গতি আসবে কোত্থেকে? যদি এই ৪৪ বছরে দলটি ১৫-১৬ জন সভাপতি পেত তাহলে ১৫-১৬ জনের বৈচিত্র্যপূর্ণ চিন্তা, মেধা, অভিজ্ঞতায় দলটি সমৃদ্ধ হতো। তাদের কেউ কেউ অতি মেধাবী, দক্ষ, পরিশ্রমী ও সৎ মানুষ হতেন; কেউ কেউ হয়তো অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী বা অসৎ হতেন। প্রধানের পদটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলে একটা প্রতিযোগিতা থাকত। এই প্রতিযোগিতাই সবচেয়ে যোগ্য মানুষকে শীর্ষে নিয়ে আসত; অসৎ ও অদক্ষরা ঝরে পড়ত। দল ভালো নেতৃত্ব পেত এবং সেই দল নির্বাচিত হলে দেশও পেত সেরা নেতৃত্ব।
বড় দুটি রাজনৈতিক দলে যদি এ ধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকে এবং পদ-পদবি এমনভাবে উন্মুক্ত থাকে যে, প্রত্যেকে তাঁর মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়িত হবেন, তাহলে দলগুলোয় গতি আসবে। তখন উঁচু হতে হতে দলের প্রধান পদটি কেউ ছুঁয়ে ফেললে তাঁর মাথা কেটে দেওয়া হবে না। ফলে তাঁকে শাখা বিস্তার করে ড.
এই পুরোনো, অকার্যকর রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বদলে ফেলার এখনই উপযুক্ত সময়। পারিবারিক বিবেচনায় কেউ যেন দলের প্রধান, অতঃপর দেশের প্রধান হতে না পারেন, সে ব্যবস্থা আইন করেই করতে হবে এবং তা হতে হবে যৌক্তিকভাবে।
এ জন্য আমাদের শুধু ৩টি কাজ করতে হবে। প্রথমত. কেউ দুই মেয়াদের বেশি সরকারপ্রধান হতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত. সরকারপ্রধান দলের প্রধান থাকতে পারবেন না। সরকারপ্রধান আর দলের প্রধান এক ব্যক্তি হলে তিনি একটি দলের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। দলীয় চিন্তার বাইরে এসে কখনোই দেশের তথা সবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। এ দুটি ব্যবস্থা সংবিধান সংস্কার করে করতে হবে। তৃতীয়ত. যে কাজটি করতে হবে তা হলো প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বাধ্যতামূলক নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নতুন কমিটি করতে হবে এবং কেউ দলের প্রধান হিসেবে দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে এ বিধান থাকতে হবে, আর তা নিশ্চিত করবে নির্বাচন কমিশন। কোনো দল এ নিয়ম না মানলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে এবং তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
অন্য কোনো সংস্কার করা না গেলেও এ তিনটি সংস্কার একেবারে অত্যাবশ্যক। আগামী নির্বাচনের আগেই এ তিনটি সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত অনেকটা নিশ্চিত হবে।
কাজী জহিরুল ইসলাম: কবি ও জাতিসংঘ কর্মকর্তা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ন বন ধ দল র স আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ছেলেকে বড় আলেম বানাতে চান সাফিয়া বোরহান দম্পতি
পহেলা বৈশাখে ভোর। তখনো সূর্য ওঠেনি, কিন্তু উজ্জ্বল চরাচর জানান দিচ্ছে জীর্ণ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন আরেকটি বাংলা বছর। এমন মুহূর্তেই জীবনের এক কাঙ্খিত সুখবর পেলেন সাফিয়া নূরি ও মো. বোরহান দম্পতি। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পহেলা বৈশাখে ভোর ৫টা ১২ মিনিটে জন্ম নিলো তাদের তৃতীয় সন্তান। ধীরে ধীরে সময় গড়ায় আর বাইরে সবার মধ্যে বৈশাখী আনন্দ। শহরে হয়তো চলছে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি, পাহাড় আনন্দে রঙিন বৈসাবী উৎসবে। তখন নবজাতক ছেলে সন্তানকে কাছে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থাতেও মা সাফিয়ার চোখে মুখে যে হাসি খেলে গেছে, সে আনন্দ তো আসলে হার মানায় পার্থিব অন্য সব আয়োজনকেই। বাবা বোরহান তো বলেই দেন, এটা আমাদের স্মরণীয় পহেলা বৈশাখ।
সাফিয়া ও বোরহান দম্পতি নবজাতকের এখনো নাম রাখেননি। তবে এখন থাকতেই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সাফিয়া জানান, পহেলা বৈশাখে তার সন্তান জন্মগ্রহণ করায় খুবই খুশি। ছেলে বড় হলে তাকে নামকরা আলেম বানাতে চান। তিনি ছেলে ও তার সুস্থ্যতার জন্য সবার দোয়া কামনা করেন।
জানা গেছে, গত রোববার সকালে সাফিয়া নূরি রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের বাড়ি রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের সুগার মিল এলাকার আদর্শ গ্রামে। সোমবার পহেলা বৈশাখের ভোরে জন্ম নেওয়া তাদের ছেলেটি সুস্থ্য ও সবল আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। জন্মের পর শিশুটির ওজন হয়েছে ৩ দশমিক ১ কেজি।
নবজাতকের খালা শারমিনা নূরি বলেন, পহেলা বৈশাখের দিনে সন্তান পেয়ে ওর বাবা-মার মতো আমরাও অনেক আনন্দিত। বাচ্চার মা ও তাদের পরিবারের ইচ্ছে শিশুটি বড় হলে একজন নামকরা আলেম হবে। তিনিও মা ও শিশুর জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন।