সারাবছরের সংসার খরচ। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। আছে ঋণের বোঝা। সবকিছুর জন্য আলুর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল উত্তরের কৃষক। কিন্তু কিছু মুনাফালোভীর কারসাজির কারণে হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি তারা। এতে অনেক চাষিই মুষড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে বিদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে যে আলু নিয়ে দু’দিন আগেও কৃষকের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ, তাদের মুখেই এখন চওড়া হাসি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুয়ানসেতরা চরের কৃষক লুৎফর রহমান হাজি। তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো পেয়েছেন। কিন্তু দাম পাচ্ছিলেন না। আবার হিমাগারেরও ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আলু নিয়া কী যে বিপদে পড়ছিলাম, তা কয়য়া সারন যাইত না। শ্যাষে কোম্পানি আইসা আমাগোর আলুর বিহিত হইছে। দামও ভালা পাইছি।’
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকাভিত্তিক। বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেড ও বারুন এগ্রো লিমিটেড। তারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে প্যাকেটজাত করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। শুধু উলিপুর নয়; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুরের কাউনিয়া থেকেও আলু কিনছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব আলুর গন্তব্য মালয়েশিয়া, দুবাই, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। 
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, উলিপুর চরের আলুর মান খুব ভালো। অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এখানকার আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে পুষ্টিমান ভালো। খেতেও সুস্বাদু। একই ভাষ্য উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.

মোস্তফা কামালেরও।  
উলিপুর থেকে ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে আলু কিনছে রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে আরও ২ টাকা ৫০ পয়সা। বিদেশে রপ্তানি করে কেজিতে কী পরিমাণ লাভ হবে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
এই উপজেলার আরেকটি চর গোড়াই পিয়ার। সেখানকার কৃষক রানা মিয়া। তিনিও আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ১৬ একর জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে বারবার ধরনা দিয়েও একটা স্লিপ জোগাড় করতে পারেননি। দালালের শরণাপন্ন হলেও কাজ হয়নি। 
কৃষক রানা মিয়াও বারুন গ্রুপের কাছে আলু বিক্রি করেছেন। যে কষ্টের ফসল সত্যিই কষ্টের বোঝা হয়ে উঠেছিল, সেই আলু নিয়ে তিনিই এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। তিনি ১৭ একরে চাষ করে পেয়েছেন ২৫ টন। কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছেন ১৯ টন। তাদের মতো নুর ইসলাম ও মিন্টু মিয়াও আলু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। মিন্টুর ৬ একরে উৎপাদন হয়েছে ১০ টন। কোম্পানি নিয়েছে ৬ টন। 
বারুন গ্রুপের স্থানীয় সরবরাহকারী আবু ইমরান। তিনি বলেন, বিদেশিরা ভালো মানের আলু ছাড়া নেয় না। তাই সান সাহিন জাতসহ উন্নত জাতের আলু কিনে বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন তারা। উলিপুর থেকে চার হাজার টন আলু নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ২ হাজার টনের বেশি কেনা হয়েছে।
১০০ কনটেইনারে ২ হাজার ৮০০ টন আলু বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ছাদেকুল ইসলাম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলায় আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৬শ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩৫ হাজার ১০০ টন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল উল প র কর ছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় আন্তঃসাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে প্রাণ হারিয়েছে ৫৪ জন

নাইজেরিয়ায় আন্তঃসাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব এবং ভূমি বিরোধের জন্য পরিচিত একটি অঞ্চলে সহিংসতায় ঘটনায় ৫৪ জন প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সোমবার মানবাধিকার সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, মুসলিম বন্দুকধারীরা মধ্য উত্তর রাজ্যের একটি খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর ডয়েচে ভ্যালির।

স্থানীয় সময় রোববার রাত ১২ টার পর বাসসা এলাকার জিকে এবং কিমাকপা গ্রামে ওই হামলা চালানো হয়। চলতি মাসে ওই একই রাজ্যের বোক্কোস এলাকার গ্রামে এর আগেও সশস্ত্র ব্যক্তিরা হামলা চালিয়ে ৫২ জনকে হত্যা করে।

মালভূমি রাজ্যের রাজধানী জোস থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ওই হামলা চালানো হয়। মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই রাজ্যে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু এই সঙ্কট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

রেড ক্রিসেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। ওই কর্মকর্তা জানান, সেখানে হামলার ঘটনায় আরও ৩০ জন আহত এবং আরও ৩০টি বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে এবং এক বাসিন্দা জানায়, প্রায় ১০০ জন সশস্ত্র লোক পুরো গ্রামে হামলা চালিয়েছে।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলছে, ‘বন্দুকধারীরা গ্রামগুলোও ধ্বংস করেছে এবং বাড়িঘর লুট করেছে, তাদের পথের সবকিছু ধ্বংস করেছে। যখন নিহতদের গণ দাফনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, তখন ঝোপের মধ্যে আরও মৃতদেহ আবিষ্কৃত হচ্ছে।’ 

অধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি এতো মৃত্যুর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর ত্রুটিকে দায়ী করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ