বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে: চীনের রাষ্ট্রদূত
Published: 13th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়। এ সম্পর্ক বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে, তাদের উন্নতির সঙ্গে। এটি শুধু বর্তমান সরকার বা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নয়, বরং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘রিঅ্যাসেসিং সিনো-বাংলা রিলেশনশিপ: চিফ অ্যাডভাইজার’স ল্যান্ডমার্ক ভিজিট’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন ইয়াও ওয়েন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরকে ‘মাইলস্টোন’ উল্লেখ করে চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়েন বলেন, এ সফরের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে চীন সব সময় বাংলাদেশের উন্নতিতে সহায়তা করে, সেটা বৈশ্বিক বা অভ্যন্তরীণ হোক। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক দুদেশের মানুষই সমর্থন করে।
রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে উঠে আসে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সাম্প্রতিক বাণিজ্যযুদ্ধের বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক বিনা কারণে চাপিয়ে দিয়েছে, চীনের ওপর আরও বেশি ১৫৫ শতাংশ, এটা পাগলামো। তবে চীন পিছিয়ে যাবে না, আমরাও তাদের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছি। আমরা একটি মুক্তবাণিজ্যের জন্য লড়ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে চীন আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছে। আমরা কোনো আলোচনাকে উপেক্ষা করি না। সে জন্য চীন অপেক্ষা করবে এবং দেখবে, যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এটা শুধু চীন একা নয়; বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই আছে। আমরা এখনো আশাবাদী যে যুক্তরাষ্ট্র শান্ত হবে এবং আলোচনায় বসবে, সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালিত করবে।’
আগামী সপ্তাহে চীনের হুনান প্রদেশের গভর্নর বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে জানিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এ সফরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য থাকবে, একটা পারস্পরিক শিক্ষাসংক্রান্ত এবং আরেকটি স্বাস্থ্য।
ইয়াও ওয়েন বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য হুনানে চারটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের একটি দল সেখানে চিকিৎসাধীন আছে। হাসপাতাল আরও বাড়ানোর বিষয়ে সফরকালে আলোচনা হবে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যাবাসনের শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনা মিথ্যা নয়: খলিলুর রহমান
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়াবলি–সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনা ‘মিথ্যা নয়’, বরং এর সংখ্যা বেশিও হতে পারে।
আজ রোববার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিসেশনিং সিনো-বাংলা রিলেশনশিপ: চিফ অ্যাডভাইজারস ল্যান্ডমার্ক ভিজিট’ শীর্ষক এক সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়ার যে আলোচনা, তা সঠিক। এখানে যৌথ কোনো বিবৃতি নেই, তবে তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আমি পাশাপাশি ছিলাম, তারা এতে সম্মত। সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ১ লাখ ৮০ হাজার, এটা মিথ্যা; এটা মিথ্যা নয়, এটা আরও বেশি।’
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, এই সফর দুই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৫০ বছর এবং দ্বিতীয়ত, প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। আমরা এ সফরের জন্য অনেক সময় কাজ করেছি এবং সেখানে আমাদের সহায়তা করেছেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, তিনি ঢাকা ও বেইজিংয়ে অসংখ্য ঘণ্টা কাজ করেছেন।
খলিলুর রহমান জানান, গেল ডিসেম্বরে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কুনমিংয়ে থেকে বাংলাদেশে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তিন মাসের ভেতর এটি সম্ভব হয়েছে।
জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, না বলা অনেক কথাও আছে।
চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্ককে আমরা কখনোই জিরো-সাম গেমের সম্পর্ক হিসেবে দেখি না; বরং উভয়ের সাথে গুরুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।’
সফরকালে চীনের বিভিন্ন শীর্ষ কোম্পানির সিইওদের সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ তুলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক তরুণ, তাদের জন্য অনেক বেশি কর্মসংস্থান দরকার। আমরা এসব বিষয়ে সিইওদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তারা এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব কোম্পানির বার্ষিক “টার্ন-ওভার” কোনো কোনো দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ সফর নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা তুলতে চাই না, আমাদের কাজ কথা বলবে। আমরা আশা করছি, দুই শতাধিক কোম্পানি, রাষ্ট্রদূত বলছেন এটা আরও বেশি হবে। রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার সফরকে “মাইলস্টোন” বলেছেন, আমি এটাকে “ব্রেক থ্রু” বলব।’
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই সম্পর্ককে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি, আমাদের পরবর্তী সরকারও তা অব্যাহত রাখবে।’
প্রধান উপদেষ্টার এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু সরকার নয়, জনগণের সম্পর্ককেও প্রতিফলিত করে।’
সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. লিউ জংই বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেবল অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্বে আগ্রহী। এ সময় তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রমবাজারে সহযোগিতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পলিটিক্যাল সায়েন্স ও সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি কৌশলগত পুনর্গঠন পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেখানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা লাভ করছে।