নিশ্চিহ্নপ্রায় গাজাভূমি রক্ষায় আরববিশ্বের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি
Published: 13th, April 2025 GMT
গর্ভবতী মহিলা কোনোভাবেই উঁচু-নিচু রাস্তায় হাঁটতে পারছিলেন না। পড়ে যাচ্ছিলেন, আবার উঠে দাঁড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলেন। সঙ্গে একটি শিশুসন্তান। তার কচি পা ঠিকঠাক হাঁটতে শেখেনি। মায়ের কোলই তার ভরসা। কোলে উঠতে না পেরে চিৎকার করছে আকাশ কাঁপিয়ে। গর্ভবতী মাও চিৎকার করছেন। প্রসবযন্ত্রণায় কাতর মা মাটি আকরে ধরে বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা বরছেন। হাত-পায়ে ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে অবিরাম। এক সময় সে ধ্বংসপ্রায় রাস্তার পাশে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। আশপাশে তখনও কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। শিশুটি আরও জোরে কেঁদে চলেছে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দিয়ে নয় মিনিটের ভিডিওটির সমাপ্তি ঘটে।
ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত জীবন-যুদ্ধের এটি একটি মাত্র দৃশ্য। ইসরায়েল নির্বিচারে সামরিক ও বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে, শক্তিশালী বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট। তাদের লক্ষ্য গাজায় স্থায়ী কোনো বাসিন্দা থাকবে না, এটা হবে মার্কিনিদের পরিকল্পিত একটি প্রকল্প। ভূমধ্যসাগর থেকে উঠে আসা বাতাসে শীতল হবে শরীর ও মন। ভিড়বে বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজ, ব্যবসা হবে রমরমা। এটা হয়তো হবে ইউরোপের দেশ দ্বিতীয় লুক্সেমবার্গ। আরব ধনকুবেররাও অবকাশ যাপনে যাবে। এই বাস্তবতার প্রধান বাধা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তথা স্থানীয় মানুষ। তাদের সরাতে পারলেই মিশন সফল হবে।
একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। স্পেনেও এক সময় মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। সেই রাষ্ট্রটিও মুসলমানের অসহযোগিতা এবং শত্রুতার কারণেই হাত থেকে ফসকে গেছে। তাহলে গাজাও ফসকে যাবে? যদি মধ্যপ্রাচ্য এখনও জেগে না ওঠে সেই আশঙ্কা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদ ইয়ামিনের বক্তব্য, ‘আমরা ছোটবেলায় জানতাম গাজা উপত্যকা ইসরাইলের দখলে। এখন আমরা বুঝতে পারছি, পুরো আরববিশ্ব ইসরায়েলের দখলে। শুধু গাজা ব্যতীত।
প্রতিবাদস্বরূপ ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের আশদোদ শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড। এতে দুজন আহত হয়! নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হামাসের আক্রমণে মূলত ইসরায়েলের কিছুই হচ্ছে না। বরং ইসরাইলের সামরিক অভিযানে গাজায় প্রতিনিয়ত শতশত বেসামরিক নারী-শিশু ও বয়স্করা জীবন দিচ্ছে। শক্তিশালী বোমার আঘাতে উড়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা! অর্থাৎ আক্রমণের আনুপাতিক হার ১:৯৯-ও না, এমন অসম লড়াইয়ের ইতিহাস পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। তারপরও বিশ্ববাসী এটাকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল লড়াই বলছে! এর কারণ খুবই সূক্ষ্ম। ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকার কথা ছিল সকল মুসলিম উম্মাহ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মনে মনে থাকলেও প্রকাশ্যে মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব অনুপস্থিত। বাক্যের শুরুতে ‘ছিল’ উল্লেখ করেছি, এখন তাও অবশিষ্ট নেই। কিছুতেই নেই। নয়তো ফিলিস্তিনের এমন করুণ অবস্থা কেন দেখতে হচ্ছে বিশ্ববাসীর।
২.
এক সময় মধ্যপ্রাচ্য তথা আরববিশ্ব অর্থ ও বৃত্তে এতটা শক্তিশালী ছিল না, পরিকল্পিত ছিল না, পশ্চিমাদের সঙ্গে আজকের মতো এতটা সম্পর্কও ছিল না। অথচ আজকের আরববিশ্ব শানশওকতে ভরা। তবু কেন গাজাকে মুক্ত করতে পারছে না? কারণ অনৈক্য! কারণ স্বার্থ। কারণ অনৈতিক সুবিধা।
মুসলিম এজেন্ডায় গঠিত পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তবু গাজার দিকে অস্ত্র তাক করেনি ইসলামাবাদ! আনোয়ার সাদাতের মিশর নিয়ে বর্তমানে খেলছে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ সিসি, অথচ এই মিশরের বুক চিরে বয়ে গেছে নীলনদ, শতাব্দীর পর শতাব্দী যা শীতল করেছে আফ্রিকার মরুহৃদয়। এদিকে বন্দি অবস্থায় গাজার তৃষ্ণার্ত শিশুরা নির্মম অত্যাচারের মুখোমুখি কাঁপতে কাঁপতে আলো-বাতাসের পৃথিবীকে বলেছে, আল বিদায়! মুসলিম উম্মাহর মুখপাত্র দাবি করা তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মুসলিম বিশ্বের সামরিক কিছু সৈন্য নিয়ে তার গঠন করার কথা ছিল ‘মুসলিম বিগ্রেড’। যারা হবে মুসলিম দুনিয়ার অতন্দ্রপ্রহরী। নিশ্চিত নিরাপত্তা পাবে মুসলিম দেশগুলো। যদিও এসব ছিল ফাঁকা বুলি অথবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজের আসন পোক্ত করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টামাত্র। এরদোয়ান নিজের আসন পোক্ত করেছে সত্য। আর সেটা করতে গিয়ে গোপনে ইসরায়েলে পাঠিয়েছে জ্বালানি। অথচ আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ বন্ধের পুরো কৃতিত্ব এরদোয়ানের। আমেরিকা, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিরিয়া দখলের মহড়া, বর্তমানে টি-৪ বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তুরস্ক। কিন্তু গাজাকে মুক্ত করতে তাদের কোনো উদ্যোগ বিশ্ববাসী দেখেছে কি? না দেখেনি।
সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে রাজধানী রিয়াদে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বিষয় অবরুদ্ধ গাজা। এই বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হবে সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এটা তো সত্য যে, গাজার অ্যাম্বুলেন্সগুলো পেট্রোল না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দে, নিরুপায় হয়ে। নীরবতা যেনো তাদের একমাত্র আর্তনাদ। সেই আর্তনাদের ভেতরও ইসরায়েলের গুলি বা বোমা কেড়ে নিচ্ছে প্রিয় পুত্র, কন্যা, স্ত্রী অথবা প্রাণপ্রিয় বাবা-মাকে। অথচ আরবের তেলেই সমৃদ্ধ হচ্ছে ইসরায়েল!
মিশরের কূট-কৌশলি রাষ্ট্রনায়ক আনোয়ার সাদাতকে এই মুহূর্তে ভীষণ প্রয়োজন, যিনি প্রয়োজনকে উপেক্ষা করেননি। তিনি জানতেন, কখন অস্ত্র হাতে নিতে হবে, কখন আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। অথচ দুবাই শাসকরা বিলাসিতার জন্য সেকেন্ড হোম বানিয়ে রেখেছে তেলআবিব তথা সমগ্র ইসরায়েলকে। ইসরায়েল পলিসিতে দুবাই আরও বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে, অথবা এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। কারণ বগল নামক তবলা পশ্চিমা মার্কেটে ছুটে যাবে। তারা সম্পর্ক করবে সৌদি আরবের সঙ্গে। সৌদি-দুবাই দ্বন্দ্বে দুই দেশ মিশে গেছে পশ্চিমা স্রোতে।
জর্ডান মার্কিন-ইসরায়েলপন্থী। দেশটি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিপক্ষে যায় এমন কোনো কাজ প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে করতে অনাগ্রহী। তবে, একথা সত্য নয় যে, ফিলিস্তিনের পক্ষে কেউ নেই। লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী জান ও জবানবাজী রেখে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার কিছু সংগ্রামী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জানান দিচ্ছে আমরা ফিলিস্তিনকে একা হতে দেব না। এই দুই দেশকে পেছনে থেকে অর্থ, অস্ত্র, সৈন্য ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে ইরান।
সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতনে অনেকের মতো আমিও খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু এতে মূল ক্ষতিটা হয়েছে ফিলিস্তিনের। তেহরান মূলত সিরিয়া হয়েই ইসরায়েল বাহিনীকে প্রতিরোধ করতো। বাশার আল আসাদ পতনের পর ইরান বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয়। মূলত বাশারের পতনটা ছিল মার্কিন-ইসরায়েলের আরেকটি এজেন্ডা!
কাতারের অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে অবরুদ্ধ গাজার মুখপাত্রের মতোই। হামাসকে সব ধরনের সহযোগিতায় কাতার সবার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। তবু ইসরায়েলের কবল থেকে ফিলিস্তিনকে কেন রক্ষা করতে পারছে না! কারণ, ওই থার্ড টেম্পল।
৩.
ইতিহাসখ্যাত নবী হযরত দাউদ-এর সন্তান হযরত সুলায়মান জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। স্রষ্টার মহিমা তুলে ধরতে তিনি সেখানে পুনঃনির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আল-আকসা। নবী সুলাইমানের ইবাদাতগৃহ ইহুদিদের কাছে ‘ফার্স্ট টেম্পল’ নামেই পরিচিত। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৯ অব্দে ব্যাবিলনের রাজা জেরুজালেম অবরোধ করলে ৫৮৬ অব্দে ফার্স্ট টেম্পলটি ধ্বংস করা হয়। সেইসঙ্গে ইহুদিদেরকে নির্বাসন দেয়া হয় ব্যাবিলনে।
ব্যাবিলনের পতন হলে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দে পারস্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট ইহুদিদের কিংডম অব জুডাতে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী ৫৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফার্স্ট টেম্পলের জায়গায় ‘সেকেন্ড টেম্পল’ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ইহুদিদের কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি রোমানরা। বিদ্রোহ শুরু হলে ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সেনাবাহিনী ‘সেকেন্ড টেম্পল’ও ধ্বংস করে ফেলে। সেই থেকে চলছে থার্ড টেম্পল নির্মাণের প্রস্তুতি। এটি করলে দাজ্জাল এসে তাদেরকে রাজত্ব ফিরিয়ে দেবে। এর প্রস্তুতি হিসেবে সকল উপকরণ ও টেম্পল নকশাও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রস্তুত ইসরায়েলে।
ইসরায়েল রাষ্ট্র জন্মের পর থেকে এই প্রথম তারা এতটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। চাইলেই থার্ড টেম্পল নির্মাণ করা সম্ভব। তাদের ধর্মমতে টেম্পলের আনুষ্ঠানিকতা পর্ব শেষেই দাজ্জালের আগমন ঘটবে। দাজ্জাল সাম্রাজ্য বিস্তার করলে তাকে দমন করতেই ইসলামের নবী মুহাম্মদের উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে আসবেন ঈসা রুহুল্লাহ। তাঁকে সাপোর্ট দিবেন ইমাম মাহাদি। মাহাদির রাস্তা প্রশ্বস্ত করতে তিনজন ইমাম ও তাঁদের সহযোগীরা আসবেন। তাঁরা হলেন ইমাম মাহমুদ ও সহযোগী শামিম বাররা, ইমাম মানসুর ও সহযোগী হারিস ইবনে হারস সর্বশেষ তামিমি বীর শোয়েব ইবনে সালেহ। এই তথ্যগুলো ইহুদিরা বিশ্বাস করে- এবং তাদের বিশ্বাস এটাও দাজ্জালকে ধ্বংস করতেই মাহাদী-মাহমুদ-মানসুর-শোয়াইবদের আগমন ঘটবে জেরুজালেমেই। এর ফলে সেখানে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে! বেসামরিক, নারী ও বয়স্ককের পাশাপাশি খুন করা হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের। অথচ যেকোনো যুদ্ধের নিয়ম কোনো বেসামরিক কোনোভাবেই খুন করা যাবে না, শিশুদের খুনের প্রশ্নই আসে না। সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করেই চলছে ইসরায়েলের গণহত্যা!
এটা কোনো যুদ্ধ নয়, অবরুদ্ধদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে না। তাহলে কেন গাজার নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে! মূলত ভীতি! তাদের ধারণা হয়তো গাজা থেকেই জন্ম নেবে ইমাম মাহাদী-মাহমুদ-মানসুর-শোয়াইবরা। শিশুদের ধ্বংস করলে এদের আগমন ঠেকানো সম্ভব, অনেকটা ফেরাউনের মতো ঘটনা। গণকদের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে যেন কোনো শিশুর জন্ম না হয়, জন্ম হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। নয়তো সে শিশু হবে ভবিষ্যতের নবী মুসা।
ইসরায়েলের এটাও জানার কথা এদের কারো জন্মই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হবে না, তবু তাদেরকে মারার কারণ? আরববিশ্ব দুর্বল নয়তো প্রভুভক্ত। তাই ন্যাটো তথা মার্কিন আক্রমণের শিকার প্রথমে ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ধারাবাহিকভাবে এই খপ্পড়ে পড়বে- জর্ডান, লেবানন, মিশর। এদেরকে দমন করলে নিস্তেজ হয়ে আসবে ইরান, সৌদি আরব, কাতার- কুয়েত ও পাকিস্তান। মধ্যপ্রাচ্যের কোনোভাবেই ইসরায়েলের হাত থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। আমেরিকাও মধ্যপ্রাচ্যকে মুক্ত করতে পারবে না। কারণ, আমেরিকার সিনেটর থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, অভ্যন্তরীণ যেকোনো রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে American Israel Public Affairs Committee সংক্ষেপে (AIPAC)। আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি, বা সংক্ষেপে এইপ্যাক (AIPAC), যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রভাবশালী লবিং সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য- যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে শক্তিশালী এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা। ১৯৬৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট যখন চায়, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে, ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিষয়ে বৈঠক হবে, অথবা মধ্যপ্রাচ্য স্বাধীন নীতিতে চলবে, তখনই এইপ্যাক সচল ও সজ্ঞানে বিরোধীতা শুরু করে এবং তাকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে সরানোর সকল ধরনের কৌশল বা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এই প্যাকের হয়ে প্রচারণার গুরুদায়িত্বে থাকে সিএনএন, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো শক্তিশালী মিডিয়া।
ইসরায়েলের এমন অপতৎপরতা উৎখাত করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে আরববিশ্বকে। তাহলেই গর্ভবতী মহিলা তাঁর গর্ভের সন্তান জন্ম দেয়ার নিরাপদ স্থান পাবে, শিশু পাবে নিরাপদ মা।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র ধ ব স কর ড ট ম পল ক ত কর আম র ক ত করত প রথম অবস থ ন ইসর সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
নিশ্চিহ্নপ্রায় গাজাভূমি রক্ষায় আরববিশ্বের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি
গর্ভবতী মহিলা কোনোভাবেই উঁচু-নিচু রাস্তায় হাঁটতে পারছিলেন না। পড়ে যাচ্ছিলেন, আবার উঠে দাঁড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলেন। সঙ্গে একটি শিশুসন্তান। তার কচি পা ঠিকঠাক হাঁটতে শেখেনি। মায়ের কোলই তার ভরসা। কোলে উঠতে না পেরে চিৎকার করছে আকাশ কাঁপিয়ে। গর্ভবতী মাও চিৎকার করছেন। প্রসবযন্ত্রণায় কাতর মা মাটি আকরে ধরে বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা বরছেন। হাত-পায়ে ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে অবিরাম। এক সময় সে ধ্বংসপ্রায় রাস্তার পাশে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। আশপাশে তখনও কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। শিশুটি আরও জোরে কেঁদে চলেছে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দিয়ে নয় মিনিটের ভিডিওটির সমাপ্তি ঘটে।
ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত জীবন-যুদ্ধের এটি একটি মাত্র দৃশ্য। ইসরায়েল নির্বিচারে সামরিক ও বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে, শক্তিশালী বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট। তাদের লক্ষ্য গাজায় স্থায়ী কোনো বাসিন্দা থাকবে না, এটা হবে মার্কিনিদের পরিকল্পিত একটি প্রকল্প। ভূমধ্যসাগর থেকে উঠে আসা বাতাসে শীতল হবে শরীর ও মন। ভিড়বে বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজ, ব্যবসা হবে রমরমা। এটা হয়তো হবে ইউরোপের দেশ দ্বিতীয় লুক্সেমবার্গ। আরব ধনকুবেররাও অবকাশ যাপনে যাবে। এই বাস্তবতার প্রধান বাধা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তথা স্থানীয় মানুষ। তাদের সরাতে পারলেই মিশন সফল হবে।
একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। স্পেনেও এক সময় মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। সেই রাষ্ট্রটিও মুসলমানের অসহযোগিতা এবং শত্রুতার কারণেই হাত থেকে ফসকে গেছে। তাহলে গাজাও ফসকে যাবে? যদি মধ্যপ্রাচ্য এখনও জেগে না ওঠে সেই আশঙ্কা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদ ইয়ামিনের বক্তব্য, ‘আমরা ছোটবেলায় জানতাম গাজা উপত্যকা ইসরাইলের দখলে। এখন আমরা বুঝতে পারছি, পুরো আরববিশ্ব ইসরায়েলের দখলে। শুধু গাজা ব্যতীত।
প্রতিবাদস্বরূপ ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের আশদোদ শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড। এতে দুজন আহত হয়! নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হামাসের আক্রমণে মূলত ইসরায়েলের কিছুই হচ্ছে না। বরং ইসরাইলের সামরিক অভিযানে গাজায় প্রতিনিয়ত শতশত বেসামরিক নারী-শিশু ও বয়স্করা জীবন দিচ্ছে। শক্তিশালী বোমার আঘাতে উড়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা! অর্থাৎ আক্রমণের আনুপাতিক হার ১:৯৯-ও না, এমন অসম লড়াইয়ের ইতিহাস পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। তারপরও বিশ্ববাসী এটাকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল লড়াই বলছে! এর কারণ খুবই সূক্ষ্ম। ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকার কথা ছিল সকল মুসলিম উম্মাহ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মনে মনে থাকলেও প্রকাশ্যে মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব অনুপস্থিত। বাক্যের শুরুতে ‘ছিল’ উল্লেখ করেছি, এখন তাও অবশিষ্ট নেই। কিছুতেই নেই। নয়তো ফিলিস্তিনের এমন করুণ অবস্থা কেন দেখতে হচ্ছে বিশ্ববাসীর।
২.
এক সময় মধ্যপ্রাচ্য তথা আরববিশ্ব অর্থ ও বৃত্তে এতটা শক্তিশালী ছিল না, পরিকল্পিত ছিল না, পশ্চিমাদের সঙ্গে আজকের মতো এতটা সম্পর্কও ছিল না। অথচ আজকের আরববিশ্ব শানশওকতে ভরা। তবু কেন গাজাকে মুক্ত করতে পারছে না? কারণ অনৈক্য! কারণ স্বার্থ। কারণ অনৈতিক সুবিধা।
মুসলিম এজেন্ডায় গঠিত পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তবু গাজার দিকে অস্ত্র তাক করেনি ইসলামাবাদ! আনোয়ার সাদাতের মিশর নিয়ে বর্তমানে খেলছে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ সিসি, অথচ এই মিশরের বুক চিরে বয়ে গেছে নীলনদ, শতাব্দীর পর শতাব্দী যা শীতল করেছে আফ্রিকার মরুহৃদয়। এদিকে বন্দি অবস্থায় গাজার তৃষ্ণার্ত শিশুরা নির্মম অত্যাচারের মুখোমুখি কাঁপতে কাঁপতে আলো-বাতাসের পৃথিবীকে বলেছে, আল বিদায়! মুসলিম উম্মাহর মুখপাত্র দাবি করা তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মুসলিম বিশ্বের সামরিক কিছু সৈন্য নিয়ে তার গঠন করার কথা ছিল ‘মুসলিম বিগ্রেড’। যারা হবে মুসলিম দুনিয়ার অতন্দ্রপ্রহরী। নিশ্চিত নিরাপত্তা পাবে মুসলিম দেশগুলো। যদিও এসব ছিল ফাঁকা বুলি অথবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজের আসন পোক্ত করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টামাত্র। এরদোয়ান নিজের আসন পোক্ত করেছে সত্য। আর সেটা করতে গিয়ে গোপনে ইসরায়েলে পাঠিয়েছে জ্বালানি। অথচ আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ বন্ধের পুরো কৃতিত্ব এরদোয়ানের। আমেরিকা, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিরিয়া দখলের মহড়া, বর্তমানে টি-৪ বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তুরস্ক। কিন্তু গাজাকে মুক্ত করতে তাদের কোনো উদ্যোগ বিশ্ববাসী দেখেছে কি? না দেখেনি।
সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে রাজধানী রিয়াদে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বিষয় অবরুদ্ধ গাজা। এই বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হবে সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এটা তো সত্য যে, গাজার অ্যাম্বুলেন্সগুলো পেট্রোল না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দে, নিরুপায় হয়ে। নীরবতা যেনো তাদের একমাত্র আর্তনাদ। সেই আর্তনাদের ভেতরও ইসরায়েলের গুলি বা বোমা কেড়ে নিচ্ছে প্রিয় পুত্র, কন্যা, স্ত্রী অথবা প্রাণপ্রিয় বাবা-মাকে। অথচ আরবের তেলেই সমৃদ্ধ হচ্ছে ইসরায়েল!
মিশরের কূট-কৌশলি রাষ্ট্রনায়ক আনোয়ার সাদাতকে এই মুহূর্তে ভীষণ প্রয়োজন, যিনি প্রয়োজনকে উপেক্ষা করেননি। তিনি জানতেন, কখন অস্ত্র হাতে নিতে হবে, কখন আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। অথচ দুবাই শাসকরা বিলাসিতার জন্য সেকেন্ড হোম বানিয়ে রেখেছে তেলআবিব তথা সমগ্র ইসরায়েলকে। ইসরায়েল পলিসিতে দুবাই আরও বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে, অথবা এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। কারণ বগল নামক তবলা পশ্চিমা মার্কেটে ছুটে যাবে। তারা সম্পর্ক করবে সৌদি আরবের সঙ্গে। সৌদি-দুবাই দ্বন্দ্বে দুই দেশ মিশে গেছে পশ্চিমা স্রোতে।
জর্ডান মার্কিন-ইসরায়েলপন্থী। দেশটি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিপক্ষে যায় এমন কোনো কাজ প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে করতে অনাগ্রহী। তবে, একথা সত্য নয় যে, ফিলিস্তিনের পক্ষে কেউ নেই। লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী জান ও জবানবাজী রেখে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার কিছু সংগ্রামী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জানান দিচ্ছে আমরা ফিলিস্তিনকে একা হতে দেব না। এই দুই দেশকে পেছনে থেকে অর্থ, অস্ত্র, সৈন্য ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে ইরান।
সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতনে অনেকের মতো আমিও খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু এতে মূল ক্ষতিটা হয়েছে ফিলিস্তিনের। তেহরান মূলত সিরিয়া হয়েই ইসরায়েল বাহিনীকে প্রতিরোধ করতো। বাশার আল আসাদ পতনের পর ইরান বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয়। মূলত বাশারের পতনটা ছিল মার্কিন-ইসরায়েলের আরেকটি এজেন্ডা!
কাতারের অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে অবরুদ্ধ গাজার মুখপাত্রের মতোই। হামাসকে সব ধরনের সহযোগিতায় কাতার সবার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। তবু ইসরায়েলের কবল থেকে ফিলিস্তিনকে কেন রক্ষা করতে পারছে না! কারণ, ওই থার্ড টেম্পল।
৩.
ইতিহাসখ্যাত নবী হযরত দাউদ-এর সন্তান হযরত সুলায়মান জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। স্রষ্টার মহিমা তুলে ধরতে তিনি সেখানে পুনঃনির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আল-আকসা। নবী সুলাইমানের ইবাদাতগৃহ ইহুদিদের কাছে ‘ফার্স্ট টেম্পল’ নামেই পরিচিত। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৯ অব্দে ব্যাবিলনের রাজা জেরুজালেম অবরোধ করলে ৫৮৬ অব্দে ফার্স্ট টেম্পলটি ধ্বংস করা হয়। সেইসঙ্গে ইহুদিদেরকে নির্বাসন দেয়া হয় ব্যাবিলনে।
ব্যাবিলনের পতন হলে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দে পারস্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট ইহুদিদের কিংডম অব জুডাতে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী ৫৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফার্স্ট টেম্পলের জায়গায় ‘সেকেন্ড টেম্পল’ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ইহুদিদের কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি রোমানরা। বিদ্রোহ শুরু হলে ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সেনাবাহিনী ‘সেকেন্ড টেম্পল’ও ধ্বংস করে ফেলে। সেই থেকে চলছে থার্ড টেম্পল নির্মাণের প্রস্তুতি। এটি করলে দাজ্জাল এসে তাদেরকে রাজত্ব ফিরিয়ে দেবে। এর প্রস্তুতি হিসেবে সকল উপকরণ ও টেম্পল নকশাও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রস্তুত ইসরায়েলে।
ইসরায়েল রাষ্ট্র জন্মের পর থেকে এই প্রথম তারা এতটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। চাইলেই থার্ড টেম্পল নির্মাণ করা সম্ভব। তাদের ধর্মমতে টেম্পলের আনুষ্ঠানিকতা পর্ব শেষেই দাজ্জালের আগমন ঘটবে। দাজ্জাল সাম্রাজ্য বিস্তার করলে তাকে দমন করতেই ইসলামের নবী মুহাম্মদের উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে আসবেন ঈসা রুহুল্লাহ। তাঁকে সাপোর্ট দিবেন ইমাম মাহাদি। মাহাদির রাস্তা প্রশ্বস্ত করতে তিনজন ইমাম ও তাঁদের সহযোগীরা আসবেন। তাঁরা হলেন ইমাম মাহমুদ ও সহযোগী শামিম বাররা, ইমাম মানসুর ও সহযোগী হারিস ইবনে হারস সর্বশেষ তামিমি বীর শোয়েব ইবনে সালেহ। এই তথ্যগুলো ইহুদিরা বিশ্বাস করে- এবং তাদের বিশ্বাস এটাও দাজ্জালকে ধ্বংস করতেই মাহাদী-মাহমুদ-মানসুর-শোয়াইবদের আগমন ঘটবে জেরুজালেমেই। এর ফলে সেখানে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে! বেসামরিক, নারী ও বয়স্ককের পাশাপাশি খুন করা হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের। অথচ যেকোনো যুদ্ধের নিয়ম কোনো বেসামরিক কোনোভাবেই খুন করা যাবে না, শিশুদের খুনের প্রশ্নই আসে না। সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করেই চলছে ইসরায়েলের গণহত্যা!
এটা কোনো যুদ্ধ নয়, অবরুদ্ধদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে না। তাহলে কেন গাজার নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে! মূলত ভীতি! তাদের ধারণা হয়তো গাজা থেকেই জন্ম নেবে ইমাম মাহাদী-মাহমুদ-মানসুর-শোয়াইবরা। শিশুদের ধ্বংস করলে এদের আগমন ঠেকানো সম্ভব, অনেকটা ফেরাউনের মতো ঘটনা। গণকদের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে যেন কোনো শিশুর জন্ম না হয়, জন্ম হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। নয়তো সে শিশু হবে ভবিষ্যতের নবী মুসা।
ইসরায়েলের এটাও জানার কথা এদের কারো জন্মই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হবে না, তবু তাদেরকে মারার কারণ? আরববিশ্ব দুর্বল নয়তো প্রভুভক্ত। তাই ন্যাটো তথা মার্কিন আক্রমণের শিকার প্রথমে ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ধারাবাহিকভাবে এই খপ্পড়ে পড়বে- জর্ডান, লেবানন, মিশর। এদেরকে দমন করলে নিস্তেজ হয়ে আসবে ইরান, সৌদি আরব, কাতার- কুয়েত ও পাকিস্তান। মধ্যপ্রাচ্যের কোনোভাবেই ইসরায়েলের হাত থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। আমেরিকাও মধ্যপ্রাচ্যকে মুক্ত করতে পারবে না। কারণ, আমেরিকার সিনেটর থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, অভ্যন্তরীণ যেকোনো রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে American Israel Public Affairs Committee সংক্ষেপে (AIPAC)। আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি, বা সংক্ষেপে এইপ্যাক (AIPAC), যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রভাবশালী লবিং সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য- যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে শক্তিশালী এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা। ১৯৬৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট যখন চায়, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে, ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিষয়ে বৈঠক হবে, অথবা মধ্যপ্রাচ্য স্বাধীন নীতিতে চলবে, তখনই এইপ্যাক সচল ও সজ্ঞানে বিরোধীতা শুরু করে এবং তাকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে সরানোর সকল ধরনের কৌশল বা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এই প্যাকের হয়ে প্রচারণার গুরুদায়িত্বে থাকে সিএনএন, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো শক্তিশালী মিডিয়া।
ইসরায়েলের এমন অপতৎপরতা উৎখাত করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে আরববিশ্বকে। তাহলেই গর্ভবতী মহিলা তাঁর গর্ভের সন্তান জন্ম দেয়ার নিরাপদ স্থান পাবে, শিশু পাবে নিরাপদ মা।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক
তারা//