গাজা-পশ্চিম তীরে কেমন ছিলেন, জানালেন বাংলাদেশে পড়ুয়া ২ ফিলিস্তিনি তরুণ
Published: 13th, April 2025 GMT
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনে দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের অর্ধেকের বেশি এলাকা দখল করে নিয়েছে তারা। বিভিন্ন যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এসব যুদ্ধের সাক্ষী পুরো বিশ্ব। কোনো কোনো দেশ নীরব থেকেছে, কেউ আবার সরব হয়েছে, যেমন বাংলাদেশ।
কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশে পড়ুয়া ফিলিস্তিনি দুই তরুণ ইব্রাহিম কিসকো (২৩) ও আইজ্যাক এন নমুরা (২৩)। আজ রোববার বিকেলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের সংগ্রাম অনুধাবন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তাঁরা। আইজ্যাকের বাড়ি দখলকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে। আর ইব্রাহিমের বাড়ি গাজায়।
ইব্রাহিম কিসকো ও আইজ্যাক এন নমুরা—দুজনই বাংলাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আইজ্যাক পড়ছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে আর ইব্রাহিম ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তাঁরা দুজনেই চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২১ সালে বৃত্তি পেয়ে তাঁরা বাংলাদেশে পড়তে আসেন। বাংলাদেশে এসে একে অপরকে চিনেছেন।
আলোচনা সভায় আইজ্যাক বলেন, ‘২০২১ সালে আমি যখন বাংলাদেশে আসি, তখন পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রায় ১০০ তল্লাশিচৌকি ছিল। সেখান থেকে শিশু, নারী, পুরুষদের হেনস্তা করত এবং তাঁদের ওপর নির্যাতন চালাত ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের ইচ্ছেমতো আমাদের ধরে কারাবন্দী করে রাখা হতো।’
ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের অসংখ্য শিশু, নারী, পুরুষকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে—অভিযোগ এনে আইজ্যাক বলেন, ‘কারাগারে আমার ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। তারা সেখানে অনাহারে দিন পার করছে। প্রতিনিয়ত নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এসব থেকে মুক্তি চাই। ইনশা আল্লাহ, একদিন মুক্ত হব।’
আলোচনা সভার আগে আইজ্যাক এন নমুরার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি জানান, ছেলেবেলায় মহাকাশচারী হতে চেয়েছিলেন। তাঁর পরিবারে ছয় ভাই ও পাঁচ বোন রয়েছে। তিনিই একমাত্র ফিলিস্তিন থেকে দূরে। তাঁর প্রিয় খাবার ‘মাকলুবা’ (বিরিয়ানির মতো একধরনের খাবার)। বাংলাদেশের তেহারি খেতে খুবই পছন্দ করেন। মিষ্টান্নের মধ্যে প্রিয় রসমালাই। পুরান ঢাকা ঘুরতে এবং পুরান ঢাকার খাবার খেতে ভালো লাগে তাঁর।
‘বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের সংগ্রাম অনুধাবন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় কথা বলেন ফিলিস্তিনি তরুণ ইব্রাহিম কিসকো ও আইজ্যাক এন নমুরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেওয়া যুবক সম্পর্কে যা জানা গেল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে আগুন দেওয়া সেই যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ কর্মী বলে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধারণা। ফটক টপকে মাস্ক পরা এক যুবক চারুকলায় প্রবেশ করে লাইটার জ্বালিয়ে মোটিফে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন- এমন দৃশ্য সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়।
আগুন দেওয়ার ওই ভিডিও আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তাদের ভাষ্য, ওই যুবক ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেন হলে থাকতেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন ওই যুবক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাকে আর হলে দেখা যায়নি।
আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শরীফ আহমেদ বলেন, তারা সবাই আগুন দেওয়া যুবককে ভিডিও দেখে চিনতে পেরেছেন। কয়েকদিন আগে বিজয় ৭১ হলের সামনে এসে ছাত্রলীগের স্লোগান দিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়েছি। আরবি বিভাগ থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে তিনি সেই ব্যক্তি। বাকি কাজ পুলিশ করছে।
এদিকে মোটিফে আগুনে পোড়ানোর মামলার তদন্ত খুব কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। রোববার রমনা বটমূলে নববর্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সোমবার সকালে শোভাযাত্রা শুরুর আগেই জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে সম্ভব হবে।
শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে চারুকলা অনুষদে শোভাযাত্রার জন্য বানানো ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি এবং শান্তির পায়রায় তরল দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন এক যুবক। এতে মুখাকৃতিটা একেবারে পুড়ে যায় এবং শান্তির পায়রা অর্ধেকের বেশি অংশ পুড়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজে এই দৃশ্য দেখা গেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিশ্চিত আগুন লাগিয়েছেন ওই একজনই। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
সিসিটিভির ফুটেজে যে যুবককে দেখা গেছে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ওই শিক্ষার্থী কিনা জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম আজ সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, তদন্তের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত যুবকের পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত না।