অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই—এই বক্তব্য সম্প্রতি বিভিন্নজন দিয়েছেন। সেই কথা উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘প্রফেসর ইউনূস পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন কীভাবে? উনি ক্ষমতায় এলেন কীভাবে? উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন এটাও একটা নির্বাচন। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে উনি ক্ষমতায় এসেছেন।’

এই বিশেষ পরিস্থিতি কত দিন স্থায়ী হবে, সেই প্রশ্ন তুলে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেছেন, ‘আইয়ুব খানও (পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক) একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এক-এগারোর যারা কুশীলব, তাঁরাও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতি থাকেনি।’

এ প্রসঙ্গে মান্না আরও বলেন, ‘আজকে যে পরিস্থিতিকে বিশেষ মনে হচ্ছে তিন মাস পরে যখন সেই পরিস্থিতি বদলে যাবে, তখন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল প্রাইজ বিজয়ী যদি সারা দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত হন, সেটা কি দেশের জন্য কল্যাণকর হবে?’

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব প্রশ্ন তোলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না। তিনি বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করছি, প্রফেসর ইউনূস নিজে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান? উনি কি বলেছেন? গতকালও ঐকমত্য কমিশনকে ডেকে বললেন, যত তাড়াতাড়ি পারো সংস্কার করে ফেলো, আমি জুনের মধ্যে নির্বাচন করে ফেলতে চাই।’

তিন দিন আগে টেলিভিশনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘উনি সেখানে বললেন, আমি এই কাজের যোগ্য নই। এটা আমার কাজ নয়। আমার যে কাজ আমি সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই। আমি জানি না কারা এই বিশদ লেখালেখি করছেন, কারা এত বেশি করে কথা বলছেন, মানুষের কানে দেবার চেষ্টা করছেন যে ভোটের দরকার নেই, ড.

ইউনূসকে আরও পাঁচ বছর চাই। তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এ রকম জনপ্রিয় নেতাদের অপ্রিয় হয়ে যেতে এক বছর সময় লাগেনি।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘যদি তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চান তাহলে বলেন তিনি একটা দল করুক। ভোট করুক। অত জনপ্রিয় থাকলে সবাই মিলে ভোট দেন। আবার পাঁচ বছরের জন্য উনি ক্ষমতায় আসুক। আর যদি উনি ভোট না করেন, তাহলে সবাই মিলে তাঁকে বলেন যত তাড়াতাড়ি পারেন ভালো একটা ভোট দেন, দিয়ে আপনি সম্মানের সাথেই চলে যান।’

দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার জন্য সস্তা জনপ্রিয়তার ওপর যাঁরা নৌকা ভাসানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের এই পথ থেকে সরে আসতে অনুরোধ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের যদি যোগ্যতা থাকেই, সেই যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা বিকল্প পথ তো করতে পারব। উনি এই কাজ এই সেবা অন্যভাবে দিতে পারবেন না? আগে যারা ছিল তারা তাকে ছোট করার চেষ্টা করেছে। অপমান করেছে। কিন্তু যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে...তারা যদি ড. ইউনূসের কাছে দেশসেবার জন্য বলেন, উনি কি করবেন না?’

মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় একটা ব্যর্থতা হচ্ছে এর শিক্ষা অন্যবারের মতোই সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। এতে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ভাসানী জনশক্তি পার্টি রাখা হয়। এর চেয়ারম্যান হয়েছেন শেখ রফিকুল ইসলাম আর মহাসচিব হয়েছেন আবু ইউসুফ সেলিম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ বছর ক ষমত য় ব শ ষ পর স থ ত অন ষ ঠ ন অন স র র জন য ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলা একাডেমিতে চলছে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে বাংলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী ‘বৈশাখী মেলা-১৪৩২’।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম।

বৈশাখী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “পাহাড় থেকে সমতল, সারা দেশে আজ নববর্ষের আমেজ। বাংলাদেশের মানুষ আজ এক হয়ে পালন করছে নববর্ষ। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলছে সারা দেশে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে ফ্যাসিবাদোত্তর বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছি। আমরা এই উৎসব ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।”

উপদেষ্টা আরো বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, খাদ্যজাত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উদ্যোক্তারা এই মেলার মাধ্যমে এসকল পণ্য বিদেশে রপ্তানিযোগ্য করে তুলবে। উদ্যোক্তারা যেভাবে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আরেকটি শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।” 

বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই মেলা উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। আজকের র‌্যালিতে সব জাতিগোষ্ঠী একসাথে অংশগ্রহণ করেছে এবং একসাথে আনন্দ করছে। এটা একটা অন্তর্ভূক্তিমূলক ও রঙিন উৎসব। মেলা এমন একটা জায়গা যেখানে দুইপক্ষ খুশি থাকে। একজন ক্রয় করে এবং অন্যজন বিক্রি করে। মেলার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে।”

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, “বৈশাখী মেলার আয়োজন আমাদের জন্য একটা ভালো উদ্যোগ। বাংলা নববর্ষ আমরা উদ্‌যাপন করবো জাতীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। আমাদের উজ্জ্বল অতীত ছিল, সমৃদ্ধ আগামী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে হবে।”

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।

ঢাকা/এএএম/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ