চাকমা বর্ষবরণের বড় উৎসব ‘বিজু’। বিজুর প্রথম দিনের নাম ফুল বিঝু। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ চৈত্রের শেষ দিনকে বলা হয় মূল বিজু। এদিন থেকে শুরু হয় খাওয়া দাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নের মূল পর্ব। এ উৎসবের মূল উপাদান ‘পাঁজন’।
পাহাড়ি বর্ষবরণের আবহমানকালের বহু ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ হিসেবে চাকমা সংস্কৃতিতে টিকে আছে বিজু উৎসবের এই পাঁজন রান্না। আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাঙামাটির ঘরে ঘরে চলছে পাঁজন আপ্যায়ন।
অন্তত ৩২ রকমের সবজি দিয়ে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী ‘পাঁজন’। আলু, পেঁপে, গাজর, বরবটি, কচু, লাউ, কাঁচকলা, কচি কাঁঠাল, সজনে ডাটা, বন থেকে সংগ্রহ করা নানা প্রকারের সবজি কেটে ধুয়ে নিয়ে শুটকি বা চিংড়ি মাছ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাঁজন বা তরকারি রান্না করেন চাকমা নারীরা। চাকমাদের বিশ্বাস, এই খাবার খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন:
ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব শুরু
বর্ষবরণে থাকছে ‘অন্ধকার কাল থেকে উত্তীর্ণ হবার বার্তা’
উৎসবের তৃতীয় দিন আগামীকাল ১৪ এপ্রিল চাকমা, ত্রিপুরারা গোজ্জ্যাপোজ্জা পালন করবেন।
ত্রিশরণ চাকমা বলেন, “১২ এপ্রিল ফুল ভাসিয়ে পুরাতন বর্ষকে বিদায় দিয়ে থাকি আমরা। ১৩ এপ্রিল সকালে গোসল শেষে বাসার বয়স্কদের পা ধরে প্রণাম করি। এদিন বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম পাঁজন তরকারি। অনেক ধরনের সবজি দিয়ে এই পাঁজন রান্না হয়। কমপক্ষে ৩২ রকমের সবজি থাকে এতে।”
বিনিতা চাকমা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে তৈরি এই পাঁজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই এটি এটি আমাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।”
বাড়ি বাড়ি বেড়াতে থাকা শিক্ষক রিংকু দে বলেন, “এইদিন আমরা পাহাড়ি বন্ধু ও সহকর্মীদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। যে বাড়িতেই যাই না কেন অবশ্যই পাঁজনটা খাওয়া হবেই।”
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব র সবজ
এছাড়াও পড়ুন:
নদীতে ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে বর্ষবরণ উৎসব শুরু
দেশের সমৃদ্ধি, পার্বত্য চট্টগ্রামের সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে নদীতে ফুল নিবেদনের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার থেকে তিনদিনব্যাপী পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু সাংক্রাইন, সাংক্রান, পাতা’র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ভোরে শিশু ও নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে গঙ্গা মা’র উদ্দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পানিতে কলাপাতায় ফুল নিবেদন করেন।
শনিবার প্রথম দিন ফুল বিজুর দিনে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু সাংক্রাইন, সাংক্রান, পাতা- উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটিতে কেন্দ্রীয়ভাবে সকাল ৭টায় রাজ বন বিহার পূর্বঘাটে পানিতে ফুল নিবেদন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার। এ সময় উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে একটি নৃত্য পরিবেশন করা হয়। পরে শোভাযাত্রাসহ ঘাটে গিয়ে পানিতে ফুল নিবেদন করা হয়। এ সময় শিশুসহ নারী-পুরুষ অংশ নেন।
এছাড়া পৃথকভাবে রাঙামাটি শহরে কোরানী পাহাড়, আসামবস্তি, গর্জনতলীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিতে ফুল নিবেদন করেছেন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন। শহরের কোরানী পাহাড় এলাকায় ভোর থেকে শতশত নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব পোশাকে কলাপাতায় করে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল নিবেদন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, উৎসবের প্রথম দিনে ফুল বিজুতে পুরাতন বছরের সমস্ত দুঃখ,কষ্ট, গ্লানি বেদনা, ভয়, অন্তরায় উপদ্রবকে মুছে ফেলে দিয়ে নতুন বছর যাতে সুখ-শান্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি যেন অনাবিল শান্তি বয়ে আনে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কলাপাতার মাধ্যম নদীতে গঙ্গা মা’র উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদন করেছেন। ফুল বিজুর দিনে ফুল দিয়ে বাড়ির ঘর সাজায়, ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। তরুণ-তরুণীরা পাড়ায় পাহাড় বৃদ্ধদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্নান করায়। সন্ধ্যায় বৌদ্ধ মন্দির, নদীর ঘাটে, বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করে থাকে।
আগামীকাল রোববার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজু। এ দিনে বাড়িতে বাড়িতে শুধু চলে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব ও আনন্দ-ফুর্তি। ৩০ থেকে ৪০ প্রকারের তরকারি দিয়ে রান্না করা হয় ঐতিহ্যবাহী পাজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার বলেন, আগামী দিনে একে অপরকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির স্থায়ী একটি সমাধান এবং উপনিবেশিক শোষন বন্ধ করে আগামী দিনের নতুন সুন্দর ভষিব্যৎ কামনা করেন তিনি।
পুরাতন বছরের দুঃখ কষ্ট ও গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরে নব উদ্যোগের শুভকামনা জানাতে বাংলা বর্ষের শেষ দুইদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করে থাকে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার বসবাস। এসব জাতি গোষ্ঠীদের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, পাতা। তবে এ উৎসবকে চাকমা সম্প্রদায় বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরা বৈসু, তংচংগ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, খুমিরা সাংক্রাই, সাঁওতালরা পাতা হিসেবে অভিহিত করে থাকলেও এর নিবেদন কিন্তু একই। তাই এ উৎসবটি আদিবাসী পাহাড়িদের শুধু আনন্দের নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও বটে।