‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসলে দুই মিলিয়ন ডলার লুট করার প্ল্যান ছিল’
Published: 13th, April 2025 GMT
“বাংলাদেশ ব্যাংকে ২ বিলিয়ন ডলার চুরি বা লুট করার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬ মিলিয়ন এখনও উদ্ধার করা যায়নি। পুরো বাংলাদেশকে লুট করার পারিকল্পনা ছিল। ২ বিলিয়ন ডলার চলে গেলে আজকে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তাম।”
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রবিবার (১৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। স্থানান্তরিত এসব টাকা পাঠানো হয়েছিল ফিলিপিন্সে তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার আর পাওয়া যায়নি।”
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকার তদন্তকারী সিআইডিকে অভিযোগপত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জড়িতদের নাম না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “এটা গুরুতর একটা ফিনান্সিয়াল ক্রাইম এবং বাংলাদেশ ঘিরে অনেক বড় ষড়যন্ত্র। এটা তদন্ত করতে গিয়ে তৎকালীন সরকারের আমলে সীমাহীন রাজনীতি করা হয়েছে। সিআইডির তদন্ত যখন একটা ম্যাচিউর পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তখন আগেই সিআইডিকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সিআইডি থেকে আমরা যেটা জেনেছি যে বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা জড়িত আছে তাদের নাম যেন অভিযোগপত্রে না দেওয়া হয়।”
আসিফ নজরুল বলেন, “আজ আমাদের একটা রিভিউ কমিটির মিটিং ছিল। এ ব্যাপারে অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে, বিচারকার্য শুরু হয়েছে বিদেশে। প্রকৃত অবস্থা কী এবং এখানে সরকারের করণীয় কী, সেসব বিষয় পর্যালোচনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের রিভিউ কমিটি করা হয়েছিল। সেই রিভিউ কমিটির প্রথম মিটিং আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিভিউ কমিটির প্রধান হিসেবে আছি আমি নিজে। জ্বালানি উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ কমিটির সদস্যরা সবাই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।”
‘‘মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (সাবেক গভর্নর) সাহেবের একটি রিপোর্ট ছিল, সেই রিপোর্টের পর্যালোচনাটা আমরা শুনেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রক্রিয়াটা বলছি না, বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য যে স্টেপগুলো নেওয়া হচ্ছে সেটির গতিশীলতা আনতে কাজ করছি,” যোগ করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, “আমাদের অত্যন্ত অভিজ্ঞ একজন তথ্যপ্রযুক্তি এক্সপার্ট, প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব স্পেসিফিকেলি এটা দেখবেন। আমাদের এই রিভিউ কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে উনাকে আমরা মনোনীত করেছি। সিআইডি রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম এসেছে, ফরাসউদ্দিন সাহেবের রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে-তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে এটা আমরা জানতে চেয়েছি। ব্যবস্থা কী নিতে হবে সেটাও বলেছি, সে বিষয়ে এখানে কিছু বলতে চাচ্ছি না।”
আসিফ নজরুল বলেন, “ওই সময় যে লিগ্যাল ফার্মকে কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেই ফার্মের সঙ্গে বিগত সরকারের আমলে সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সিনিয়র একজন আইনজীবী জড়িত ছিলেন। এই কাজ দেওয়ায় লাখ লাখ, কয়েক দিন আগে ৮ লাখ ডলার পে করা হয়েছে। তাদের সাথে শুধু ই-মেইল আদান-প্রদান করতে টাকা দিতে হয়। এ ফার্মটাকে কেন বাছাই করা হয়েছিল, এত টাকার বিনিময়ে এই ফার্ম বাছাই করার পেছনে সরকারের ঘনিষ্ঠ আইনজীবীর কী রোল ছিল, কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছিল কি না এবং অস্বাভাবিকতা আছে কি না সেটা আমরা খতিয়ে দেখব।”
তিনি বলেন, “আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সিআইডির যে তদন্তটি ম্যাচিউড পর্যায়ে রয়েছে, এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো স্টেপস নিলে সেটা নিউইয়র্কে যে বিচারটা হচ্ছে সেটার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না। আইনগতভাবে ঠিক আমাদের কী করণীয় সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য আমরা ড.
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কতজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে-জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা তো ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টে অনেকের নাম পাবেন। আরো বেশ কয়েকজন ছিল, তাদের নাম বিভিন্ন রিপোর্টে আসছে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ভ উ কম ট র ন উপদ ষ ট সরক র র আম দ র কর র প তদন ত স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এর ফলে গাজাজুড়ে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ হাজারে।
গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ৯৮৩ জনে পৌঁছেছে বলে সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১১৮ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৭৪ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬১৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।