মুরাদনগরে বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তারের জেরে ২ দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ
Published: 13th, April 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় দুই দিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট করছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। এতে মুরাদনগর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকে কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে। থানায় হামলার মামলা ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে করা আরেকটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি তিনি। দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার ইদ্রিস আলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ শাখার সভাপতি। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তারের জেরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আজ সকালে স্ত্রীকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে যেতে রওনা দেন গৌরাঙ্গ দেবনাথ। কুমিল্লার শাসনগাছা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখেন, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলাচলকারী কোনো বাস নেই। মুরাদনগরে ধর্মঘটের কারণে সব বাস বন্ধ।
গৌরাঙ্গ দেবনাথ বলেন, ‘তীব্র গরমের মধ্যে স্ত্রীকে নিয়ে কতটা দুর্ভোগে পড়েছি, বলে শেষ করা যাবে না। কয়েক দফা ভেঙে ভেঙে সিএনজি অটোরিকশায় করে নবীনগরে পৌঁছাতে হয়েছে। কিছু হলেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা দেশ থেকে আর দূর হলো না। রাস্তায় শত শত মানুষকে এমন দুর্ভোগে পড়তে দেখেছি।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করছে জেলা পরিবহনশ্রমিক ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ শাখা। আজ দুপুরে শতাধিক মালিক, শ্রমিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
পরিবহনশ্রমিক ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, কোম্পানীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে বাস মালিক সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেয়, যার খরচ বাস মালিক সমিতি বহন করে। দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান আবুল কালামকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেয় সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী কিছু ব্যক্তি। সেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালিক–শ্রমিকদের ওপর মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় তাঁদের সভাপতি ও শ্রমিকদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শ্রমিকেরা ধর্মঘট করছেন। যদি পুলিশি হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেপ্তার সবাইকে মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বলেন, পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতার সাজানো মামলায় তাঁদের আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা কখনোই জনগণের দুর্ভোগের রাজনীতি করেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তাঁরা বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। ধর্মঘট আরও চলবে কি না, সন্ধ্যার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ মার্চ ইফতারের আগে কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলার আহ্বায়ক উবায়দুল সিদ্দিকী পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদ করায় তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম। ঘটনার পর পুলিশ আবুল কালামকে আটক করে থানায় নেয়। এরপর তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া আবুল কালামের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরদিন থানায় হামলার ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা করে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী নেতা আবু ফয়সাল চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন।
ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী নেতার মামলাকে হয়রানিমূলক দাবি করে আসছেন। সর্বশেষ আবুল কামালের ভাই মেহেদী হাসান গত ২৭ মার্চ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আদালতে পাল্টা একটি মামলা করেন।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের করা মামলার ২ নম্বর ও বৈষম্যবিরোধীদের করা মামলার ৩ নম্বর আসামি ইদ্রিস আলী। আমরা দলীয় পরিচয় নয়, আসামি হিসেবেই গ্রেপ্তার করেছি। পরিবহন ধর্মঘট ও মানুষের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। তাঁরা অযথা এই ধর্মঘট পালন করছেন। ওই নেতার মুক্তি আদালতের বিষয়। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর কর ম দ র ব এনপ র পর বহন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।