জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত ৪৩ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন আরও ৫২ জনকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাঁদের মধ্যে ৩১ জনকে পাঠানো হবে পাকিস্তানে।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী কী কাজ করেছে, তা জানানোর জন্য মূলত এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে এ পর্যন্ত ৮৬৪ জন শহীদের তালিকা করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের তালিকায় ১৪ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। তবে এই সংখ্যায় পরিবর্তন আসছে। প্রকৃত নিহত ও আহত ব্যক্তির তথ্য যাচাইয়ের কাজ এখনো চলমান।

আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে শুরু দিকের নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে নূরজাহান বেগম বলেন, এ পর্যন্ত আহত ৪৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনকে ব্যাংককে, ১৬ জনকে সিঙ্গাপুরে এবং একজনকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এক রোগীর জন্য সাড়ে ছয় কোটি এবং আরেকজনের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।

গণ–অভ্যুত্থানে আহত আরও ব্যক্তি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ২১ জনকে তুরস্ক ও ৩১ জনকে পাকিস্তানে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য যাঁদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে বা হবে, তাঁদের ৭০ শতাংশ সাধারণ মানুষ। বাকি ৩০ শতাংশ ছাত্র।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা জানতে চান, ঘটনার এত মাস পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত ব্যক্তিদের পাকিস্তানে কেন পাঠানো হবে; পাকিস্তানে কি উন্নত চিকিৎসা আছে? জবাবে নূরহাজান বেগম বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় তাদের পারদর্শিতা আছে। লাহোরে এ ধরনের রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য বিশেষ হাসপাতাল আছে।

আরও পড়ুনপাঁজরের হাড় ও কপালের চামড়ায় তৈরি হবে সেই খোকনের নাক০৬ এপ্রিল ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে আহত ব্যক্তিদের কী হবে, তা নিয়ে কারও কারও মনে সংশয় আছে। ভবিষ্যতে তাঁদের যেন চিকিৎসা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য সঠিকভাবে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করা, হেলথ কার্ড করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চীন সরকার যে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল করবে তার জন্য জমি তিস্তা প্রকল্পের আশপাশেই চূড়ান্ত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সায়েদুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ২১ জনের দুই চোখ এবং ৪৫০ জনের এক চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে ১৭ জনের পা এবং ৪ জনের হাত অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুনজুলাই গণ–অভ্যুত্থান: আহতদের বিদেশে চিকিৎসা, আসছেন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ব উপদ ষ ট ন ব গম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নাগরদোলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, অভিযুক্ত স্বামী আ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় লাকী বেগম (২০) নামে একজন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নাগরদোলায় উঠিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করেছে।  
 
সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের হাফেজ মহিউদ্দিনের ওরসের মেলায় এ ঘটনা ঘটে।  

নিহত লাকী বেগম একই উপজেলার কালাপোল এলাকার বেদে পল্লীর মনসুর আলীর মেয়ে।  আটক স্বামী মো. সাকিব সদর উপজেলার মান্নান নগর বেদে পল্লী পাড়ার মো. মঙ্গলের ছেলে।    

নিহত লাকীর মা শেফালী বেগম জানান, এক বছর আগে পারিবারিকভাবে জেলার সদর উপজেলার মান্নান নগরের বেদে পাড়ার মঙ্গলের ছেলে সাকিবের সাথে লাকীর বিয়ে হয়। লাকী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত পনের দিন আগে সে শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বামীসহ বাবার বাড়িতে আসে। রবিবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সাকিব তার স্ত্রীকে মারধর করে জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। পরে নিজের ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন ভেঙে ফেলে এবং নিজের মাথা নিজেই ফাঁটিয়ে ফেলে। 

সোমবার সন্ধ্যার পরে লাকীর স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা একলাশপুর ইউনিয়নের মহিউদ্দিন হাফেজের ওরসের মেলায় ঘুরতে যায়। সেখানে স্বামী-স্ত্রী এক সাথে নাগরদোলায় উঠে।  

শেফালী বেগমের অভিযোগ, নাগরদোলায় চড়াকালীন সাকিব তার মেয়ে লাকীকে গলায় ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় লাকীকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

লাকীর বাবা মনসুর আলী বলেন, “সাকিব মাদকাসক্ত ছিলো। কথায় কথায় লাকীকে নির্যাতন করতো। আমাদের ঘরে এসেও মেরেছে। সে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান বলেন, “অভিযুক্ত স্বামীকে আটক করা হয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের মরদেহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

ঢাকা/সুজন/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ