আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত, প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে: সালাহ উদ্দিন আহমদ
Published: 13th, April 2025 GMT
পাঁচ বছরের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে চাওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলে আপনারা গণতন্ত্রের উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করবেন, নির্বাচনের কথা বলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করবেন—এটা কি গণতন্ত্রের জন্য শুভ? এটা কি গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল? এটা কি গণ–অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা ছিল? নির্বাচিত সরকারের বিকল্প তো আপনারা হতে পারেন না। আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত। সেটা প্রতিদিন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।’
রোববার বিকেলে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদের ‘জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে প্রধান উপদেষ্টা যখন প্রতিশ্রুত, নির্বাচনের জন্য বিএনপি রোডম্যাপ দাবি করছে, তখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপদেষ্টা পর্যন্ত বক্তৃতা দিতে শোনা যায় যে জনগণ নাকি তাদের পাঁচ বছরের জন্য চায়। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা.
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার একটি বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘কালকে আমাদের ফরিদা আপা একজন উপদেষ্টা...আমার সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক, সে জন্য আমি সমালোচনা কম করতে চাই। বললেন, উনারা নাকি নির্বাচিত হয়েছেন। কীভাবে? গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উনাদের নির্বাচিত করেছে জনগণ? তাহলে এ দেশে নির্বাচন কমিশন আছে কেন?’
এ প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যদি রাস্তার গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়, সেটা অবশ্যই এ দেশের মানুষের কামনা। কিন্তু একটা নির্বাচিত সরকারের বিকল্প তো আপনারা হতে পারেন না। আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত। সেটা প্রতিদিন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।’
এ সময় কবি–চিন্তক ফরহাদ মজহারের একটি বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘উনার (ফরিদা আখতার) স্বামী আমাদের ভাই ফরহাদ মজহার সাহেব দু–তিন দিন আগে বক্তব্য দিয়েছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। কেবল লুটেরাদের একটা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়। কী আর বলব!’
যে নির্বাচনের জন্য, যে ভোটাধিকারের জন্য, যে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, যে সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য এ দেশের হাজার মানুষ শহীদ হলেন, গণ–অভ্যুত্থান হলো, ফ্যাসিবাদের পতন হলো—সেই নির্বাচন, সেই ভোটাধিকারকে আপনারা অস্বীকার করছেন বলে মন্তব্য করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘কাদেরকে আপনারা উৎসাহিত করছেন? কোন অগণতান্ত্রিক শক্তিকে এই মাঝপথে আপনারা সুবিধা দিচ্ছেন? কাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য, কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই ডিসেম্বরে থেকে জুন, ডিসেম্বর–জুন–ডিসেম্বরে আসা যাওয়া করছেন? এক জায়গায় স্থির থাকতে পারছেন না কেন?’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আপনি পৃথিবীবিখ্যাত একজন সম্মানিত ব্যক্তি। আপনার এই রকম শিফটিংটা (নির্বাচন নিয়ে ডিসেম্বর ও জুন–সম্পর্কিত বক্তব্য) কিন্তু জাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভালোভাবে নেবে না।’
এ প্রসঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আপনারা বৈঠক করেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন। আপনাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে ডিসেম্বরকে সামনে রেখে জাতীয় নির্বাচনের উদ্দেশ্যে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি। তাঁদের সব নির্বাচনের প্রস্তুতি আগামী জুন মাসের ভেতরে সমাপ্ত হবে। তাঁরা বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ। ভাসানী অনুসারী পরিষদের ‘জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫’–এর মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে ‘ভাসানী জনশক্তি পার্টি’ করা হয়। এর চেয়ারম্যান করা হয়েছে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলামকে। আর আবু ইউসুফ সেলিমকে মহাসচিব করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ উপদ ষ ট র ন উপদ ষ ট গণতন ত র ড স ম বর র র জন য সরক র র ব এনপ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, অনেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছেন। এই প্রীতি আসছে তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার মনে করার মাধ্যমে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্মেলনকক্ষে এক সেমিনারে সলিমুল্লাহ খান এ কথা বলেন। ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসির (আইপিএলডি) আয়োজনে ‘বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা’ শিরোনামের এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান বক্তার বক্তব্যে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে ফ্যাসিজম কোথায় কোথায় হয়েছে। আগের রেজিম মনে করেছে তাদের শাসন বৈধ, কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই যে মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করা, মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করা এবং গুম, খুন, ক্রসফায়ার করার জন্য মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করা; এটিই ফ্যাসিজমের উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধ যদি আইনের শাসন প্রবর্তনে আপনাকে সাহায্যই না করে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করাই আপনার ঠিক হয়নি।’
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, আজ বাংলাদেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছে, কিন্তু সেটা শুধু কথার ফুলঝুরি। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। অথচ এই আদর্শকেই ১৯৭২ সালে হত্যা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা টেকসই তা বুঝতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকাতে হবে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যা করেছি, তা ঔপনিবেশিক ফ্যাসিজমের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন বাংলাদেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ঢাকা শহরের ৫ শতাংশ লোককে স্পর্শ করে না সে রকম একটা মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। সেটাও ভালো। কিন্তু বাকি ৯৫ শতাংশ লোক কী অপরাধ করল? সাধারণ গণপরিবহন নেই কেন আমাদের? আপনি ইচ্ছে করলে বাসে উঠতে পারছেন না কেন? এটা কোনো সভ্য দেশের মাপকাঠি হতে পারে? এটি গণতন্ত্রের মাপকাঠি হতে পারে? যেখানে আপনার ঢাকা শহরে উত্তর থেকে দক্ষিণে যেতে ছয় ঘণ্টা লাগে।’
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে আমাদের কিছু সংস্কার করতে হবে। আমাদের অর্ডারটা জবরদস্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এটি গণতান্ত্রিক নয়। কেন র্যাব গঠিত হলো, বিশেষ ক্ষমতা আইন করা হলো, কেন জরুরি অবস্থা জারি করা হলো—সবই হলো কাঠামোবদ্ধ ভায়োলেন্স। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোটের অধিকার নয়।’
আইপিএলডির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন আইপিএলডির ট্রাস্টি মেম্বার তাহমিন বানু এবং নির্বাহী সদস্য এহসান শামীম। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আইপিএলডির নির্বাহী সদস্য ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।