বিদায় ধ্বনি বেজে উঠছে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের। দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুন বাংলা বছর। সোমবার (১৪ এপ্রিল) দেশবাসী বরণ করে নেবে বঙ্গাব্দ ১৪৩২। বাঙালির সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি।  

নববর্ষ উদযাপন বাঙালি সংস্কৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ হয়েছে। দিনটি উদযাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন-সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সারা দেশে তাই উৎসবের আমেজে চলছে বাঙালির প্রাণের উৎসবের প্রস্তুতি। এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পাল্টে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে।

বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে, নতুন বছর বরণে রাজধানীতে হবে শোভাযাত্রা। এতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন মোটিফ থাকবে।

বৈশাখ উদযাপনকে রঙিন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে জমে উঠেছে বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতি। পহেলা বৈশাখ উৎসবের রূপ ফুটিয়ে তুলতে শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে বর্ণিল মুখোশ, রঙিন মোটিফ আর বিশাল আকৃতির কাঠামো।

বানানো হয়েছে রাজা-রানীর বিশাল মুখোশ, পেঁচা, জাতীয় পশু বাঘ, ইলিশ মাছ, পাখি ও ফুলের রঙিন অবয়ব। এসব কাজে ব্যবহার হচ্ছে বাঁশ-কাঠ এবং কাগজ। এর মাধ্যমে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি তুলে ধরা হবে গ্রাম বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। উঠে আসবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিও। কলা অনুষদের আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হবে শোভাযাত্রা। তবে শোভাযাত্রায় পরা যাবে না কোনো ধরনের মুখোশ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সঙ্গে নিতে হবে পরিচয়পত্র।

১৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। শেষ প্রান্ত দিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে আরো বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিবৃন্দ অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে ৭টি বড় মোটিফ, ৭টি মাঝারি মোটিফ এবং ৭টি ছোট মোটিফ।

পয়লা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ থেকে প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট এবং বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট বন্ধ থাকবে। ক্যাম্পাসে নববর্ষে সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।

নববর্ষ উপলক্ষে আজ (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ও জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্ষবরণ উদযাপনের আয়োজন চলছে। নববর্ষের এই আয়োজন সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সদস্যদের জন্য মুড়ি-মোয়া, নকুলদানা, মুড়কি, মুড়ালি, কদমা ও বাতাসার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাউল সঙ্গীত এবং ডিআরইউ সদস্য ও সন্তানদের সঙ্গীত পরিবেশনা করা হবে। সদস্যদের জন্য সাদা ভাত, ডিম, মুরগী/মাছ, বেগুন ভাজি, শুটকি ভর্তা, সবজি ও আম ডালের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করিনি, বরং আসল আনন্দ শোভাযাত্রা নামটি পুনরুদ্ধার করেছি। ১৯৮৯ সালের প্রথম শোভাযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা নামটি গৃহীত হয়েছিল। পরে যখন এর নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, সেই পরিবর্তন একইরকম স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে ঘটেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের (ঢাবির) উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, আমরা শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করছি না। তবে পুরোনো নাম ও ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেটা দিয়ে চারুকলার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যে দুটো বার্তা রয়েছে। একটি হচ্ছে, নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান। রাজনৈতিক ও সামাজিক নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সেই বিষয়টি তুলে ধরা। কিছু মোটিভ সেই কাজটি করছে। আর দ্বিতীয় যে অংশটি আছে, সেটি হচ্ছে মূলত ঐক্যের ডাক, সম্প্রীতির ডাক। জুলাই অভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া ফ্যাসিবাদদের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ এবারের উদ্‌যাপনে তুলে ধরা হবে।

এদিকে পহেলা বৈশাখ শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেশবাসী কাল উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করছে র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। 

রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, শাহবাগ, রবীন্দ্র সরোবর, মানিক মিয়া এভিনিউ, হাতিরঝিলসহ যেসব জায়গায় জনসমাগম হবে সেখানে র‌্যাব ও পুলিশের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে থাকবে র‌্যাব। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেই বলেও জানান তিনি। 

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেছেন, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢাকায় ১৮ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ঢাকাকে ২১টি বিভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া এনামুল হক সাগর বলেছেন, পহেলা বৈশাখ শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময়ভাবে উদযাপনে আমরা ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিটি স্থানকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে, আমরা সতর্ক আছি। 

গত ১২ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে বলা হয়, ডাইভারশন/ব্যারিকেড পয়েন্টসমূহ: সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৫টা হতে রমনা পার্ক (রমনা বটমূল), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও আশপাশের নিম্নলিখিত এলাকাসমূহে সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে রাস্তা বন্ধ/রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে:

১। বাংলামোটর ক্রসিং/নেভি গ্যাপ ২। পুলিশ ভবন ক্রসিং ৩। সুগন্ধা ক্রসিং ৪। কাকরাইল চার্চ ক্রসিং ৫। কদম ফোয়ারা ক্রসিং ৬। হাইকোর্ট ক্রসিং (পূর্ব ও দক্ষিণ) ৭। দোয়েল চত্বর ক্রসিং ৮। রোমানা ক্রসিং ৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ১০। জগন্নাথ হল ক্রসিং ১১। ভাস্কর্য ক্রসিং ১২। নীলক্ষেত ক্রসিং ও ১৩। কাঁটাবন ক্রসিং।

গাড়ি চলাচলের দিকনির্দেশনা

রমনা পার্ক (রমনা বটমূল), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডাইভারশন পয়েন্টসমূহ ব্যতীত নিম্নলিখিত রাস্তাসমূহে যানবাহন চলাচল করবে। যানবাহন চলাচলের রাস্তাসমূহ নিম্নরূপ :

১। মিরপুর-ফার্মগেট হতে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন বাংলামোটর ক্রসিং বামে মোড় নিয়ে মগবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। ২। গোলাপশাহ মাজার ক্রসিং-হাইকোর্ট ক্রসিং হতে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন কদম ফোয়ারা ক্রসিং-ইউবিএল ক্রসিং- নাইটিংগেল ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। ৩। সায়েন্সল্যাব ক্রসিং হতে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন মিরপুর রোড দিয়ে আজিমপুর ক্রসিং-চাঁনখারপুল ক্রসিং-বকশীবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র অন ষ ঠ ন র প রস ত ত নববর ষ র র জন য স ব যবস থ ল ক রস র ক রস চ র কল শ হব গ সরক র এ বছর গ রহণ সদস য ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

পহেলা বৈশাখে রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন  

পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন, আনন্দের দিন, সম্প্রীতির দিন, সৌহার্দ্যের দিন। বাংলা ১৪৩২ সনকে বরণে রাজধানীজুড়ে নানা আয়োজন করা হয়েছে। ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানের মাধ্যমে শুরু হবে বৈশাখবন্দনা, নতুন বছরকে বরণ করার আয়োজন।

বাঙালি সমাজকে নিয়ে আলোর পথে মুক্তির পথযাত্রী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে এবার পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠানে। ছায়ানটের ৫৮তম এ আয়োজন ভোর সোয়া ৬টায় বৈশাখের ভোরের আলো ফুটতে ফুটতে ভৈরবীর রাগালাপ দিয়ে শুরু হবে। এবারে অনুষ্ঠানের মূলভাব ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। 

ছায়ানটের এবার অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবাসার গান ও আত্মবোধনের জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। এতে থাকবে ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক কণ্ঠের গান ও ৩টি পাঠ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে (সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে) অনুষ্ঠান শুরু হবে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে। শেষে ছায়ানটের কথন পাঠ করবেন ডা. সারওয়ার আলী। প্রায় দুই ঘণ্টার এ আয়োজন ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজসহ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

রবীন্দ্র সরোবর

পহেলা বৈশাখে সকাল ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সুরের ধারার আয়োজনে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তমঞ্চে হবে  বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশপাশে পাবেন বাহারি বাঙালি খাবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘নববর্ষে ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’–এই প্রতিপাদ্যে চব্বিশের চেতনা ধারণ করে সমকাল, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ধারণ করে এবারের নববর্ষের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এই আয়োজনে বাঙালিসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন  শিল্পী বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করবে। অংশগ্রহণকারী জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়া, বম, ম্রো, রাখাইন, খিয়াং, বানাই, সাঁওতাল, ওঁরাও, তুরী, মাহালি, মালপাহাড়িয়া, কোল, মাহাতো, মুণ্ডা রাজোয়াড়, মনিপুরী, খাসিয়া, চা-জনগোষ্ঠী, গারো, হাজং, কোচ ও মালো। এছাড়াও শোভাযাত্রায় দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস অংশগ্রহণ করবে এবং পৃথিবীর শান্তি কামনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সম্মিলিতভাবে গান পরিবেশিত হবে।

এবারের শোভাযাত্রা ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের ফালি, শান্তির পায়রা, পালকি, মীর মুগ্ধের স্মৃতিবাহী পানির বোতল—শোভাযাত্রায় থাকবে এই সাতটি বড় মোটিফ বা শিল্প-অবকাঠামো। এর বাইরে থাকবে মাঝারি আকৃতির ১০টি সুলতানি আমলের মুখোশ, ২০টি রঙিন চরকি, আটটি তালপাতার সেপাই, পাঁচটি তুহিন পাখি, চারটি পাখা, ২০টি ঘোড়া ও ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস। ছোট মোটিফের মধ্যে থাকবে ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০০টি বাঘের মাথা, ১০টি পলো, ছয়টি মাছ ধরার চাঁই, ২০টি মাথাল, পাঁচটি লাঙল, পাঁচটি মাছের ডোলা। চারুকলা অনুষদের সম্মুখভাগের সীমানা প্রাচীর ইতোমধ্যে হলুদ রঙের ওপর রাজশাহী অঞ্চলের শখের হাঁড়ির মোটিফে আঁকা হয়েছে ফুল-পাখি, লতা-পাতার দৃশ্য।

জাতীয় সংসদ ভবন

নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের কারিগরি সহায়তায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ‘ড্রোন-শো’ ও ‘ব্যান্ড-শো’ আয়োজিত হবে।  

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক

রাজধানীর গুলশান-২ এর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৩, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও নগর উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৭টায় শান্ত–মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হবে। সকাল ৯টায় বর্ষবরণ নগর উৎসবের ওয়েবসাইট উন্মোচন করা হবে। এরপর বারামখানা ও পল্লীবাংলার অংশগ্রহণে শুরু হবে বাউল গান। বিকাল ৪টায় ঘাসফড়িং কয়ার, শিরোনাম হীন এবং প্লাজমিক নকের অংশগ্রহণে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। 

শাহবাগ

‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে’ এই শিরোনামে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক ঐক্যফ্রন্ট। এই আয়োজনে চিরায়ত বাংলা গান, দেশাত্মবোধক গান, জারিসারি, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা ও নাটিকা পরিবেশিত হবে। অনুষ্ঠানে ১৪টি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবে। 

অন্যান্য আয়োজন

নববর্ষকে বরণ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সকাল থেকে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী আনন্দ র‌্যালি বের হবে। এরপর নগর ভবনে থাকবে পান্তা ইলিশের আয়োজন। দুপুরে করপোরেশনের আয়োজনে থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ৮টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ‘জনমানুষের বৈশাখ, শেকড়ের সংস্কৃতি’ শিরোনামে ১০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে নববর্ষের আয়োজন করা হয়েছে।

বিকেল ৪টায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে দেশীয় সাংস্কৃতিক সংসদ। জনপ্রিয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। শেষে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে নাটক পরিবেশন করা হবে।

এর বাইরেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়ি, সুত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠ, ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড এবং পূর্বাচলের তিনশ ফুট উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় সারাবছরই কম-বেশি ভিড় থাকে। উৎসবের দিনে হয়তো ভিড়টা একটু বেশিই হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে নববর্ষকে বরণ, শোভাযাত্রার উদ্যোক্তা ভাস্কর শামীমকে সংবর্ধনা
  • বৈশাখী উৎসবে বাকৃবিতে ছাত্র-শিক্ষকের মিলনমেলা
  • চট্টগ্রামে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বেড়েছে
  • ভোরের আলোয় আলোর পথযাত্রার আহ্বানে ছায়ানটের বর্ষবরণ
  • সবার জন্য কল্যাণ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক
  • পহেলা বৈশাখে আজ রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন
  • নতুন চেতনায় বর্ষবরণের আয়োজন
  • বাঙালির প্রাণের উৎসব আজ
  • ‘নতুন আলোয়’ ঐক্যের ডাকে এলো নববর্ষ
  • পহেলা বৈশাখে রাজধানীর কোথায় কী আয়োজন