জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়াবলি–সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার আলোচনা ‘মিথ্যা নয়’, বরং এর সংখ্যা বেশিও হতে পারে।

আজ রোববার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিসেশনিং সিনো-বাংলা রিলেশনশিপ: চিফ অ্যাডভাইজারস ল্যান্ডমার্ক ভিজিট’ শীর্ষক এক সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘শুরুতে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়ার যে আলোচনা, তা সঠিক। এখানে যৌথ কোনো বিবৃতি নেই, তবে তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আমি পাশাপাশি ছিলাম, তারা এতে সম্মত। সামাজিক মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ১ লাখ ৮০ হাজার, এটা মিথ্যা; এটা মিথ্যা নয়, এটা আরও বেশি।’

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, এই সফর দুই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৫০ বছর এবং দ্বিতীয়ত, প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। আমরা এ সফরের জন্য অনেক সময় কাজ করেছি এবং সেখানে আমাদের সহায়তা করেছেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, তিনি ঢাকা ও বেইজিংয়ে অসংখ্য ঘণ্টা কাজ করেছেন।

খলিলুর রহমান জানান, গেল ডিসেম্বরে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কুনমিংয়ে থেকে বাংলাদেশে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তিন মাসের ভেতর এটি সম্ভব হয়েছে।

জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, না বলা অনেক কথাও আছে।

চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন ও ভারতের সাথে সম্পর্ককে আমরা কখনোই জিরো-সাম গেমের সম্পর্ক হিসেবে দেখি না; বরং উভয়ের সাথে গুরুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখাই আমাদের লক্ষ্য।’

সফরকালে চীনের বিভিন্ন শীর্ষ কোম্পানির সিইওদের সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ তুলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক তরুণ, তাদের জন্য অনেক বেশি কর্মসংস্থান দরকার। আমরা এসব বিষয়ে সিইওদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তারা এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব কোম্পানির বার্ষিক “টার্ন-ওভার” কোনো কোনো দেশের জিডিপির চেয়েও বেশি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ সফর নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা তুলতে চাই না, আমাদের কাজ কথা বলবে। আমরা আশা করছি, দুই শতাধিক কোম্পানি, রাষ্ট্রদূত বলছেন এটা আরও বেশি হবে। রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার সফরকে “মাইলস্টোন” বলেছেন, আমি এটাকে “ব্রেক থ্রু” বলব।’

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই সম্পর্ককে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি, আমাদের পরবর্তী সরকারও তা অব্যাহত রাখবে।’

প্রধান উপদেষ্টার এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু সরকার নয়, জনগণের সম্পর্ককেও প্রতিফলিত করে।’

সাংহাই ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড.

লিউ জংই বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেবল অর্থনৈতিক নয়, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্বে আগ্রহী। এ সময় তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রমবাজারে সহযোগিতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পলিটিক্যাল সায়েন্স ও সোসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি কৌশলগত পুনর্গঠন পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেখানে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা লাভ করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১ ল খ ৮০ হ জ র আম দ র আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার তিন যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রামে

চার দিনের শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে এসেছে রাশিয়া নৌবাহিনীর তিনটি যুদ্ধজাহাজ।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে ‘রেজিক’, ‘হিরো অব দি রাশিয়ান ফেডারেশন আলদার সিডেনঝপভ’ এবং ‘পেচেঙ্গা’ নামে যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের পিসিটি টার্মিনালে নোঙর করেছে।

চট্টগ্রাম নৌবাহিনী ঈশা খাঁ ঘাটির মিডিয়া বিভাগ থেকে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।

নৌবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার তিন যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজ তিনটির কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত, মিলিটারি, এয়ার অ্যান্ড নেভাল অ্যাটাশে এবং চট্টগ্রামে রাশিয়ান অনারারি কনস্যুলারসহ নৌবাহিনীর স্থানীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সফরকারী জাহাজ তিনটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছালে নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা খালিদ বিন ওয়ালিদ’ অভ্যর্থনা জানায়।

বাংলাদেশে অবস্থানকালে সফরকারী জাহাজের অধিনায়করা ও বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতসহ একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার, বিএন ফ্লিটের কমান্ডার চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

সফরকারী জাহাজগুলোর কর্মকর্তা ও নাবিকরা নেভাল একাডেমিতে অবস্থিত রেডকিন পয়েন্টে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং নৌবাহিনী প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ও জাহাজ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য পরিচালিত বিএন আশার আলো স্কুল এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শন করবেন।

নৌবাহিনীর সদস্যরা ও নৌবাহিনী পরিচালিত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা রাশিয়ান জাহাজগুলো পরিদর্শন করবেন।

শুভেচ্ছা সফরের মাধ্যমে দুই দেশের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের পেশাগত বিষয়ে মতবিনিময়, ভবিষ্যৎ প্রশিক্ষণ ও পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে বলে নৌবাহিনী আশা প্রকাশ করেছে ।

সফর শেষে জাহাজ তিনটি আগামী ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ত্যাগ করবে বলে জানানো হয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশকে কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে
  • বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে নয়, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে: চীনের রাষ্ট্রদূত
  • রাশিয়ার তিন যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রামে