নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ।

তারা আয়োজক কমিটিকে নাম পরিবর্তনের যথার্থ কারণ দর্শানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে শোভাযাত্রা আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং এবার অন্যান্য বছরের মতো শিক্ষার্থীদের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে আয়োজন করার নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন তারা।

রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। শিক্ষার্থীরা দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সমাধান চাওয়ার পাশাপাশি নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বানও জানান।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি

মার্চ ফর গাজা: মজলুমদের পাশে থাকার আহ্বান ঢাবি উপাচার্যের

সংবাদ সম্মেলনে চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, “এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদ্‌যাপিত হবে। আমরা এ সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্তে নিয়ে প্রশ্ন রাখছি।”

তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটির ‘মঙ্গল’ অংশটি সম্পর্কিত করে হাস্যকর কিছু কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে এ নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ই আসে ১৯৯৬–এর বৈশাখের তথা এপ্রিলের আরো তিন মাস পরে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে।”

তিনি আরো বলেন, “যে সিনেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে সভায় শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সমাধান দাবি করে নাজিফা বলেন, “আমরা নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করি। সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সমাধান চাই। আগামীতে প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রধান অংশীজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য বাহাসের প্রয়োজন হলেও আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত আছি।”

চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল বলেন, “শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি তৈরি হলে গত মাসের শেষের দিকে আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে সবাই একমতে আসতে পারি। নামটা নিয়ে সেদিন কথা বলি। সেখানে চারুকলার ডিন জানান, তারা চেষ্টা করছেন, যেন নাম অপরিবর্তিত থাকে। পরে অজুহাত দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করা হয়। নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি জানাননি। নাম পরিবর্তনে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা যৌক্তিক কারণ জানতে চাই। ১৯৯৬ সালে (নাম) পরিবর্তন অন্যায় হলে এটাও অন্যায়।”

মোটিফ তৈরির দায়িত্ব পরিবর্তনের নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্বিমত করে তিনি বলেন, “চারুকলার এই আয়োজন ১৯৮৯ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে আসছে। কিন্তু একটা অসংলগ্ন যুক্তি দেখিয়ে শিক্ষকরা সেটা শিক্ষার্থীদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাব—দুই ক্রেডিটের কোর্স হিসেবে এটি করা হয়েছে। আমরা এই কারিকুলামের সঙ্গে একমত নই।”

গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.

আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, “নববর্ষে শোভাযাত্রা আয়োজন করার চর্চা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। তখন এর নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। সে সময়ের ইতিহাস খুঁজলে দেখতে পাবেন, সবার অংশগ্রহণ আরো স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। পরবর্তীতে এ নাম পরিবর্তন হয়। এবারের বৃহৎ এ আয়োজনে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা আগের নামটি পুনরুদ্ধার করেছি। এটি কোনো পরিবর্তন নয়, বরং পুনরুদ্ধার।”

তিনি বলেন, “আগের নামে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চাপ ছিল না। ‘মঙ্গল’ শব্দ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতি বছরই এ নাম নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। মঙ্গলের ব্যানারের আয়োজন নিয়েও বিতর্কের অভাব ছিল না। গেল বছরগুলোতে এ নামটাকে খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভূখণ্ডে যারা বসবাস করে তাদের যে নামে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে, আমরা সে নামেই ফিরে এসেছি।”

শোভাযাত্রা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক কাউসার হাসান টগর বলেন, “১৯৮৯ এ শোভাযাত্রা যখন শুরু হয়, তখন আমি চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলাম। আনন্দ শোভাযাত্রা নামে এটি আমরাই শুরু করি। ১৯৯৬ সালে এসে নাম পরিবর্তন হয়ে হঠাৎ করে ‘মঙ্গলবার শোভাযাত্রা’ হয়ে গেল। ‘মঙ্গল’ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন ‘আনন্দ’তে সমস্যা কোথায়? আনন্দে সমস্যা না থাকলে আমাদের আগের জায়গায় ফিরে যেতে সমস্যা নেই। আর ‘আনন্দ’তে সমস্যা থাকলে আমরা মঙ্গলে ফিরে যাব।”

শিক্ষার্থীদের হাতে দায়িত্ব না দেওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে ড. আজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছেন, “২০০৬ সাল থেকে মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীদের নববর্ষ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু এতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত হত না। ইউনেসকো স্বীকৃত এ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় আয়োজনে নানা ঘাটতি থেকে যেত। এসব কারণে এবারের আয়োজনে কেন্দ্রীয়ভাবে করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও পাঁচটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কাজ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তালিকা নেওয়া হয়েছে। মিটিংয়ের আলোচনায় তাদের যুক্ত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি ব্যাচকে আধিপত্য না দিয়ে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আনন দ শ ভ য ত র চ র কল র নববর ষ বর ষ র ক ত কর আম দ র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 

বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের নববর্ষ উদযাপন। নানা আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে দিনটি। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় পয়লা বৈশাখের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। প্রাণী ও পাখির খাঁচাগুলোর সামনে মানুষের ভিড়। নারায়ণগঞ্জ সদর থেকে বাবা-মা ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছেন মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, “একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি।পয়লা বৈশাখ ও  ঈদে ছুটি পাই।  ঈদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। নববর্ষে আজ সবাই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছি।”

আরো পড়ুন:

রঙে-আলোয় উজ্জ্বল বর্ষবরণ

চট্টগ্রামে নববর্ষের পূর্ব নির্ধারিত সব অনুষ্ঠান হবে: জেলা প্রশাসন

কথা হয় দর্শনার্থী মরজিনা আহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “সকালে ভাই-বোনরা সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছি। সবাইকে নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এলাম।”

সানাউল হক নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, “ঈদের সময় বাবা অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাইনি। আজ পয়লা বৈশাখ বের হয়েছি।”

জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য অনুযায়ী, বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, সিংহ, বানর, জলহস্তী, কুমির, সাপ, ইম্পালা, গয়াল,উট পাখি, লামা, ময়না, টিয়া, ক্যাঙারু, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ূর, উটপাখি, ইমু, শঙ্খচিল, কুড়াবাজ, তিলাবাজ, গন্ডার, হায়েনাসহ ১৩৬ প্রজাতির তিন হাজার ৩৪টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে চিড়িয়াখানায়।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় আজ। সরকারি ছুটি হওয়ায় আজ দর্শনার্থীর চাপ বেশি। চিড়িয়াখানার ভেতরে ধুলা যাতে না হয়, সে কারণে  নিয়মিত পানি ছিটানো হয়।” 

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নববর্ষকে রাঙাতে হাডুডু খেললেন মানিকগঞ্জের প্রবীণরা
  • সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ছাত্রদলের বৈশাখী উপহার
  • ড্রোন প্রদর্শনীতে ফুটে উঠল শোষণের খাঁচা ভেঙে জুলাই অভ্যুত্থান
  • বউচি খেলায় ঐতিহ্যের স্মৃতি ফিরল চবিতে
  • নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক: এ বি পার্টি
  • কুমিল্লায় নববর্ষের অনুষ্ঠানে শহীদ মুগ্ধের স্মরণে ১০ হাজার বোতল পানি বিতরণ
  • বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস 
  • মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে ক্ষোভ, ব্যাখ্যা চান চারুকলার শিক্ষার্থীরা
  • ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম বদলের যৌক্তিক কারণ জানানোর দাবি